টরন্টো: “মুখ থাকলেও বলতে পারিনি, কান থাকলেও শুনে বুঝতে পারিনি। এখন আর সে সীমাবদ্ধতা নেই। আমি বলি, শুনি, বুঝি।” এভাবেই বলছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ বাংলাদেশী-কানাডিয়ান একজন সফল মা হাসনা বানু। কানাডায় আসার পর প্রথম দিকে তাঁর অবস্থা ছিল এমনই। ইংরেজী ভাষাগত সমস্যা থাকায় শুরুর দিকটা ছিল কানাডায় খুব কন্টকাকীর্ণ। বেসরকারি সংস্থা কানাডিয়ান সেন্টার ফর ইনফরমেশন এন্ড নলেজ প্রবীণদের গল্প বলার জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাসনা বানুসহ প্রায় ২০জন প্রবীণ তাঁদের জীবনের গল্প বলেন। শেয়ার করেন তাঁদের কানাডার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার গল্প। শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় শুরু হওয়া টরন্টোর ডেনফোর্থ এভিনিউর রেডহট তন্দুরীর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান চলে দু’ঘন্টা। শুধু বয়োজ্যেষ্ঠগণ নয়, অনেক নবীন এতে উপস্থিত থেকে প্রবীণদের জীবনের শিক্ষণীয় দিকগুলো আয়ত্ব করেন। নবীন-প্রবীণের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠান হয়ে উঠে উৎসবমূখর।

কানাডিয়ান সেন্টার এর প্রেসিডেন্ট ইমাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রবীণগণ এ অনুষ্ঠানে অভিমত প্রকাশ করেন যে, ঘরে বসে না থেকে একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়া দরকার, ক্যাশে কাজ না করে এসআইএনে কাজ করা, সুযোগ থাকলে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে কানাডার জব মার্কেটের জন্য প্রস্তুত করে তোলা জরুরী। প্রবীন ব্যক্তিত্ব ও কৃষিবিদ কামাল মুস্তফা হিমু বলেন, কানাডায় এসে প্রথমে খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল, কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তা কাটিয়ে গেছে।

সন্তানরা তাঁদের নিজ-নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ইনভেস্টর ক্যাটাগরীতে এসেছিলেন মো. শফিউদ্দিন ও কিসমত আরা বেগম। বাংলাদেশে সফল এ ব্যবসায়ী জুটি মুলত সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এসেছেন। সৎ জীবন-যাপনের মাধ্যমেই কানাডায় সফল হওয়া সম্ভব বলে তাঁদের অভিমত। বয়োজ্যেষ্ঠ মঈন চৌধুরী বলেন, আমরা ভাগ্যবান যে কানাডার মতো একটা দেশে বসবাসের সুযোগ পেয়েছি, যেখানে অফার সম্ভাবনা বিরাজমান। প্রবীণ ব্যক্তিত্ব শামসুন্নাহার বলেন, সন্তানদের শিক্ষার কথা ভেবে এদেশে একা থাকতে হয়েছে। যেখানে স্বামীর অনুপস্থিতিতে একজন নারীকে পদে পদে বাাঁধার সন্মুক্ষীণ হতে হয়েছে। কিন্তু কোনো বাঁধাই অগ্রগতি থামিয়ে রাখতে পারেনি।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রবিউল ইসলাম, তাসলিমা হাসান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আসমা আহমাদ, নুরুল জামিল, শাহিন গণি, রেহানা বেগম, হালিমা হাসান, শাহানা বানু, গোলাম মোস্তফা, আলমগীর কবির, মুশতাক আহমেদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য বয়োজ্যেষ্ঠদের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং গল্পের ভাণ্ডার অনেক বড়।
প্রবীণদের গল্প বলার চর্চা অতীতকে বর্তমানের সাথে সংযুক্ত করার এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার উত্তরাধিকার প্রদানের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তরুণ প্রজন্মের শেয়ার করার মাধ্যমে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি বুঝতে সাহায্য করা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি মূল্যবোধ বুঝতে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা এবং কানাডায় অতীতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কীভাবে সফলতা পেতে পারে সে উদ্দেশ্য নিয়েই কানাডিয়ান সেন্টার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

গর্ভমেন্ট অব কানাডা এতে সহায়তা করে। কানাডিয়ান সেন্টার মনে করে কমিউনিটির প্রবীণ এবং নবীনদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক উন্নীত এবং একে অন্যের সাথে বন্ধনের সুযোগ তৈরিতে এধরণের আয়োজন ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি