অনলাইন ডেস্ক : আগামী ৫ বছরে (২০২১ থেকে ২০২৫ সাল) দেশের ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার। এ জন্য দেশের অভ্যন্তরে ৮৪ লাখ ২০ হাজার এবং বিদেশে ৩২ লাখ ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেই মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এনইসি সভার সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ।

সূত্র বলছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২১ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরে ১ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ও বিদেশে শূন্য দশমিক ৫৮ মিলিয়ন, ২০২২ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরে ১ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ও বিদেশে শূন্য দশমিক ৬১ মিলিয়ন, ২০২৩ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরে ১ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ও বিদেশে শূন্য দশমিক ৬৫ মিলিয়ন, ২০২৪ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরে ১ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ও বিদেশে শূন্য দশমিক ৬৯ মিলিয়ন এবং ২০২৫ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরে ১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ও বিদেশে শূন্য দশমিক ৭২ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

এছাড়া জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২২, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২৯, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩২ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।

৫ বছরে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি কতটা বাস্তবসম্মত জানতে চাইলে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগটির সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, এটা বাস্তবসম্মতই। কারণ, আমাদের প্রবৃদ্ধি যে হারে বাড়বে, তাতে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, রফতানি বাড়বে, কৃষি উৎপাদন বাড়বে। এগুলোর জন্য তো কর্মসংস্থান প্রয়োজন হবে। দেশে-বিদেশে মিলে এই কর্মসংস্থান করা হবে। বিদেশেও আমরা কর্মী পাঠাব।

করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশে নির্ধারিত কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা তো আর পাঁচ বছর থাকবে না। আমরা আশা করি, করোনা পরিস্থিতি এই আর্থিক বছরের মধ্যে পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে এবং আগের অবস্থায় বা ৮ শতাংশের প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যেতে হয়তো দুটি বাজেট লাগবে। একটা গেল, আরেকটা আসবে। এই দুটি বাজেট বাস্তবায়নের পরই আমরা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যাব।

সূত্রের তথ্যানুযায়ী, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উন্নয়ন কৌশলগুলো হলো করোনার কারণে সৃষ্ট মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারে স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আগের ধারায় ফিরিয়ে আনা। প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং দ্রুত দারিদ্র্য কমানো। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া এবং দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বিস্তৃত কৌশল গ্রহণ করা। টেকসই উন্নয়নের জন্য পথপরিক্রমা প্রণয়ন, যা হবে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল, যা প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং সাফল্যের সঙ্গে পরিকল্পিত নগরায়ন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করা।

দারিদ্র্য মোকাবিলায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কিছু কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে পিছিয়া থাকা জেলাগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিকে উচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো। পশ্চাৎপদ জেলাগুলোতে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করা। পিছিয়ে থাকা জেলাগুলো থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে সঠিক তথ্য, প্রশিক্ষণ, অভিবাসন ব্যয় মেটাতে ঋণ সহায়তা প্রদান করা। শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে আইসিটি পরিষেবায় জনগণের প্রবেশগম্যতা বাড়ানো। জেলাভিত্তিক আয়ের ধরণ নির্ধারণ এবং অর্থনীতির রূপান্তরের প্রকৃতি অনুধাবনের জন্য বিবিএসের জেলাভিত্তিক জিডিপি প্রাক্কলনের কার্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা।

করোনা মোকাবিলায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, করোনার ফলে সৃষ্ট সামাজিক বেকারত্বসহ দিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে করোনা মহামারিসহ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমান্বয়ে একটি সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।