স্পোর্টস ডেস্ক : নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানরা উপহার দিলেন দুর্দান্ত বোলিং। ধীর শুরুর পর সময়ের সাথে সাথে চড়াও হলো তানজিদ হাসানের ব্যাট। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগের ম্যাচের চেয়ে আরও দাপুটে জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
সিলেটে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সোমবার ডাচদের ৯ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। ১০৪ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা পেরিয়ে যায় ১৩.১ ওভারেই।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৩৯ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতল আরও বড় ব্যবধানে—৪১ বল ও ৯ উইকেট হাতে রেখে। অব্যবহৃত বলের হিসেবে যা বাংলাদেশের তৃতীয় বড় জয়। আর উইকেটের হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম জয় এটি।
এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
৪৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৪ রানের জুটিতে ৪০ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন তানজিদ। ১৮ বলে ১৮ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন কুমার দাস। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চত করেন তানজিদ।
এর আগে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার নাসুম আহমেদ। দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ নেন দুটি করে উইকেট। একটি করে নেন অন্য দুই বোলার তানজিম হাসান সাকিব ও মেহেদি হাসান।
লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল ধীর। ষষ্ঠ ওভারে পারভেজ হোসেন ইমন আউট হন কাইল ক্লেইনের বল তাড়া করতে গিয়ে। উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২১ বলে ২৩ রান করেন এই ওপেনার।
এরপর আর উৎসবের উপলক্ষ্য পায়নি নেদারল্যান্ডস। সময়ের সাথে সাথে চড়াও হয় তানজিদের ব্যাট। ৩৯ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন এই ওপেনার। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের এটি তার ষষ্ঠ ফিফটি।
এই ইনিংসের পথে দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন তানজিদ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ছক্কা মেরে এক পঞ্জিকাবর্ষে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড গড়েছিলেন পারভেজ। নবম ওভারে সেই রেকর্ড ছোঁয়া তানজিদ হাসান ১২তম ওভারে ভেঙে দেন সেই রেকর্ড। ২০২৫ সালে এ সংস্করণে তানজিদের ছক্কা এখন ২৩টি। পারভেজের ২২টি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বল বেছে নেন লিটন কুমার দাস। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই জোড়া আঘাত হানেন নাসুম। দ্বিতীয় বলে ম্যাক্স ও’ডাউডকে (১০ বলে ৮) মিড অনে বানান তাওহীদ হৃদয়ের সহজ ক্যাচ। পরের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন নতুন ব্যাটার আনিল তেজা নিদামানুরু (১ বলে ০)। সহজ ক্যাচ নিতে ভুল করেননি পারভেজ হোসেন ইমন।
পাওয়ার প্লের মধ্যে ওপেনার ভিক্রামজিৎ সিংকে (১৭ বলে ২৪) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তানজিম হাসান সাকিবের ক্যাচ বানান তাসকিন।
খানিক পর উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন মুস্তাফিজুর রহমান। নবম ওভারে আক্রমণে এসেই অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে (১১ বলে ৯) ইমনের হাতে ক্যাচ বানান।
দশ ওভারের মধ্যে আরও দুই উইকেট হারায় সফরকারীরা। সাইফ হাসানের থ্রোয়ে রান আউট হন নোয়াহ ক্রোস। পরের বলে সারিজ আহমেদকে কট বিহাইন্ড করেন তানজিম। ১০ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৬১ রান।
পরের ওভারে মুস্তাফিজের স্লোয়ার পড়তেই পারেননি একাদশে ফেরা সিকান্দার জুলফিকার (৩ বলে ২)। সরাসরি বোল্ড হন তিনি।
১৪তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে কাইল ক্লেইনকে (৭ বলে ৪) ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে জাকের আলির হাতে ক্যাচ বানান তাসকিন। পল ফন মিকেরেনকে (৭ বলে ৩) এলবিডব্লিউয়ের ফাদে ফেলে তৃতীয় শিকার ধরেন নাসুম।
শেষ উইকেটে ২২ রানের জুটিতে একশ পার করে নেদারল্যান্ডস। তাতে সবচেয়ে বড় অবদান ন’য়ে নামা আরিয়ান দত্তের। শেষ ব্যাটার হিসেবে মেহেদি হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন তিনি।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি বুধবার, একই মাঠে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নেদারল্যান্ডস: ১৭.৩ ওভারে ১০৩ (ও’ডাউড ৮, ভিক্রামজিৎ ২৪, নিদামানুরু ০, এডওয়ার্ডস ৯, শারিজ ১২, ক্রোস ২, জুলফিকার ২, ক্লেইন ৪, প্রিঙ্গল ১৬, আরিয়ান ৩০, ফন মিকেরেন ৩, ডোরাম ২*; মেহেদি ৩.৩-০-২৪-১, তাসকিন ৪-০-২২-২, নাসুম ৪-০-২১-৩, তানজিম ৩-০-১৬-১, মুস্তাফিজ ৩-০-১৮-২)।
বাংলাদেশ: ১৩.১ ওভারে ১০৪/১ (পারভেজ ২৩, তানজিদ ৫৪*, লিটন ১৮*; আরিয়ান ৪-০-১৪-০, ক্লেইন ২.১-০-২০-১, মিকেরেন ৩-০-২৮-০, ড্যানিয়েল ২-০-১৩-০, ও’ডাউড ২-০-২৬-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: নাসুম আহমেদ।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।






