অনলাইন ডেস্ক : নিত্য পণ্যের মূল্যে ঊর্ধ্বগতিসহ জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে জনগণের তীব্র ক্ষোভের মধ্যেই দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এছাড়া দেশে জ্বালানির দাম কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। খবর রয়টার্সের।

আগামী শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানী কুয়ালালামপুরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আয়োজন করেছে বিরোধীদলগুলো। এরআগেই বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।

মূলত, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে না পারা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে ব্যর্থ হওয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিমের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। শনিবারের বিক্ষোভে কুয়ালামপুরে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আনোয়ার ইব্রাহিম প্রশাসনের সরকারের আয় এবং দেশের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে- ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, ভারী বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ওপর বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধি এবং বর্ধিত বিক্রয় ও পরিষেবা কর বৃদ্ধি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার জানিয়েছেন, ধনী এবং বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আরও কর আদায়ের লক্ষ্যে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সমালোচকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারের আয় বৃদ্ধির চেষ্টার প্রভাব মূলত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ব্যক্তিদেরসহ সাধারণ ভোক্তাদের ওপর পড়বে।

তিনি বলেন, দেশে ১৮ বছরের ওপরের প্রত্যেক নাগরিককে এককালীন ১০০ রিঙ্গিত সহায়তা দেওয়া হবে, আগামী ৩১ আগস্ট থেকে বিতরণ শুরু হবে। সরকার ২০২৫ সালে মোট ১৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (৩.৫৫ বিলিয়ন ডলার) নগদ সহায়তা ব্যয় করবে, যা এই বছরের বাজেটের চেয়ে ২ বিলিয়ন রিঙ্গিত বেশি।

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার বলেন, ‘আমি অভিযোগগুলো স্বীকার করছি এবং স্বীকার করছি যে জীবনযাত্রার ব্যয় এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মোকাবেলা করা আবশ্যক। আমরা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছি, আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও কিছু উদ্যোগ চালু করা হবে।

এদিকে দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং দেশের বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় আলোর সেতারের সুলতান আব্দুল হালিম স্টেডিয়ামে আয়োজিত একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মাহাথির জোর দিয়ে বলেন, ‘যদিও প্রধানমন্ত্রীর পদ সাধারণত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়, তবুও একাধিক দেশে এমন নজির রয়েছে যেখানে জনসাধারণের চাপের কারণে প্রধানমন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘দলীয় চাপের কারণে আমি নিজেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এখন আনোয়ার আরও ব্যাপক জনবিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছেন, তাই তার (আনোয়ার ইব্রাহিম) অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’

১০০ বছর বয়সী এই প্রবীন নেতা যুক্তি দিয়েছিলেন, পদত্যাগ করার জন্য নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত নয়, ‘জনগণ যদি অসন্তুষ্ট হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করে জাতীয় সম্পদের অব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাতিলের নিন্দা জানান মাহাথির।

দেশের জনগণ এখন চরম দুর্ভোগে আছে অভিযোগ করে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ, সবাই এখানে জড়ো হয়েছি, কারণ আমরা একই সমস্যার মুখোমুখি – আমাদের দেশ ধনী, কিন্তু মানুষ দরিদ্র রয়ে গেছে। এটি স্পষ্টতই অযোগ্য শাসনের ফলাফল।’

তিনি দাবি করেন, অনেক মালয়েশিয়ান বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং কিছু লোক প্রচণ্ড চাপের মুখে তাদের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন এবং আত্মহত্যা বা পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন।