Home সাহিত্য প্রবহমান

প্রবহমান

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<p><strong>হোসনে আরা মণি &colon;<&sol;strong> হোসনে আরা মণি-র জন্ম ও বেড়ে ওঠা হিমালয় থেকে নেমে আসা উন্মুক্ত&comma; অমলিন মধুমতি-ফটকি-গড়াই-নবগঙ্গা-চিত্রার কল্লোলিত স্রোতধারায় বাহিত পলি মাটিতে। বাবার এবং নিজের চাকরির সুবাদে বাস করেছেন রাজধানীসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে। তাই তাঁর লেখা গল্প-উপন্যাস পড়লে আমরা দেখতে পাই স্মৃতি-বিস্মৃতির বাতায়ন ঘুরে তিনি কাহিনির পারম্পর্য তুলে এনেছেন তাঁর দেখা সমাজ&comma; সংস্কৃতি&comma; ধর্ম ও জীবনবোধ থেকে। একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে মানুষ মননশীলতা ও মানবিকতার যে খরায় পড়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য চাই মনোজাগতিক পরিবর্তন। হোসনে আরা মণি তাঁর উপন্যাস প্রবহমান- এ মানবমনের এই নিগুঢ় সংকট নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন&colon; তুলে এনেছেন মানবিক ও মানবীয় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি&comma; পূর্ণতা-অপূর্ণতা&comma; আকাক্সক্ষা-দুরাকাক্সক্ষার কথা&comma; রাজনীতি-সমাজ-সংসারের অগ্রন্থিত কাহিনিমালা। আজকের বাঙলা সাহিত্য প্রেম-পরিণয়&comma; দারিদ্র্য-ক্ষুধা&comma; আকাক্সক্ষা-অনাচার বা সমাজ-সভ্যতার ছকবাঁধা ও কষ্টকল্পিত কাহিনির পৌনঃপুনিকতায় কিছু মাত্রায় আক্রান্ত। জীবনের চিরচেনা নিবিড় আখ্যান বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যে বিরল না হলে সংখ্যায় লক্ষণীয়ভাবে কম। বিপরীতে আঙ্গিকের ভিন্নতা&comma; নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনা&comma; পটভ‚মি&comma; চরিত্র চিত্রণ এবং কাহিনি বিন্যাসে ভাবাবেগহীন স্বতঃস্ফূর্ততা হোসনে আরা মণি-র এই উপন্যাসটিকে স্রোতস্বিনীর মতো প্রবাহিত হতে দিয়েছে। তাঁর এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো &OpenCurlyQuote;হাজার বছর ধরে’ নিজেদের মতো বাংলার শ্যামল প্রান্তর জুড়ে হেঁটে চলে। দিন শেষে পাঠকই বিচারক। সম্পাদক হিসেবে তাঁদের কাছে &OpenCurlyQuote;বাংলা কাগজ’-এর এই নতুন ধারাবাহিক উপন্যাসের পাঠ প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রইলাম।<br &sol;>&NewLine;মনিস রফিক&comma; সম্পাদক<&sol;p>&NewLine;<p>&lpar;à§§à§§&rpar;<br &sol;>&NewLine;ভাতুরিয়া আর বালিদিয়া পাশাপাশি দুই গাঁ। গা লাগালাগি করে থাকলেও আসলে তাদের শরীর যেখানে লেগে আছে তার নাম পিঠ। বিরাগ&comma; নাকি ঘেন্নায় তারা কেউ কারো মুখ দেখতে চায় না। উল্টোমুখী হয়ে- একজন পূবমুখো&comma; আরেকজন পশ্চিমমুখো&semi; সেই কোন কাল থেকে যে তারা বসে আছে তা জানে না এর অধিবাসীরাও। তারা শুধু জানে যে সময় সময় এই দুই গাঁও ঝড়ের বেগে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে মুখোমুখি দাঁড়ায়ে পড়ে। তারপর কী হয় তা বলতে পারে কেবল প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত জনেরা। দুই গাঁয়ের দাঁত-নখের আঘাতে যে দুই-চার-পাঁচ হালি ঘটনাস্থলেই কতল হয় তারা তাদের নিজ নিজ গ্রামের কাছে দিনকতকের জন্য শহীদের মর্যাদা পায়। কিন্তু বিস্মরণপ্রিয় মানুষেরা অচিরেই তাদের &OpenCurlyQuote;অবদান’ ভুলে যায়। বরং তারা শহীদদের পরিত্যক্ত আর সব সম্পত্তির মতই সুন্দরী যুবতী বিধবাদের মালিক হওয়ার ফিকির করে। কাইজের পর পুলিশ কখনো আসে&comma; কখনো আসে না। মহকুমা সদর থেকে পাক্কা আট ক্রোশ পথ এই ভাতুরিয়া-বালিদিয়া সীমান্ত। সে পথও বড় সহজ পথ নয়। মাঠ-ঘাট-বন-বাদাড়-নদী-নালা-খাল-বিল পেরোয়ে পায়ে হাঁটা আর বড় জোর গরুর গাড়ি চলা পথে পুলিশের কনস্টেবল তো সাধ করে পা রাখতে যায় না। শক্ত মামলা হলে&comma; অর্থাৎ কিনা যখন ধর-পাকড় করতে যাওয়া একান্তই দরকার&comma; তখন তারা রওনা হয়। তারপর যেতে যেতে সারা পথ মুখ খারাপ করে। গালাগাল করে প্রথমে পথের দুর্গমতার পরে&comma; বড়কর্তার আদেশের পরে&comma; পুলিশের চাকরির পরে এবং তা শেষ হয় নিজের ভাগ্যটারে দোষারোপ করে। অনেক সময় তাদের গালাগাল শ্বশুরবাড়ির কুটুম্ব সম্পর্ক ধরে শুরু হয়ে অচিরেই শ্লীলতার সব সীমা অতিক্রম করে। তা করবে নাই বা কেন&quest; যে এলাকায় চাষের জমির চেয়ে সরকারের বাঁধা রাস্তা চলাচলের বেশি অনুপযোগী সেখানে কে যায় ডিউটির নামে জীবনপাত করতে&quest; উঁচু-নিচু-খানা-খন্দ-কাটা-ছেঁড়া তো আছেই&comma; তার চেয়ে মারাত্মক এর মাটি। শুকনো মৌসুমে পায়ে চলা পথে হাঁটু ডোবা মিহি ধুলো- যেন ধুলিরাজ্য। ওদিকে কৃষকের চষা খেতের মাটির দলা রোদে শুকায়ে শুকায়ে শক্ত যেন ঝামা। হালকা বর্ষায় পথ প্রথমে পিছল- এমন পিছল যে খালি পায়ে আঙ্গুলে টিপে পা গুনে গুনে এত সতর্ক হয়ে ভারসাম্যের পরীক্ষা দিতে দিতে পথ চলতে হয় যে&comma; আধঘন্টার পথ দুই ঘন্টাতেও পেরোনো দুষ্কর। একটু অসতর্ক কি অনভ্যাসেই এক পিছলে দশহাত পেরোয়ে- ধপাস&excl; আর বর্ষার বয়স বেশি হলে&comma; যেমন- আষাঢ়ের মাঝামাঝিতে গোড়ালি ডোবা আঠালো কাদা- এমনই আঠা যে বহু কষ্টে এক পা তুললে তার সাথে উঠে আসে এক চাপড়া খামিরের মত কাদামাটি&comma; এদিকে আরেক পা তখন দেহের ভারে পোতা হতে থাকে জমিনের গভীরে। এরপর শ্রাবন-ভাদ্রে নদীনালা উপচে বন্যায় মাঠ-ঘাট ভেসে যাওয়ার কালে পথ-অপথ সবই যখন একাকার&comma; তখন ডিঙ্গি আর তালের ডোঙ্গায় করে আর যাই হোক আসামী ধরতে যাওয়া চলে না। সব বছর পানি এত বেশি হয় না যে সবখানে অনায়াসে বড় নাও বাওয়া চলে। বন্যার পানি নেমে গেলে ফের সেই কাদারাজ্য। এবারের কাদা পলির সম্পৃক্ততায় বড় মোলায়েম- পা গুলো অনায়াসে গেঁথে যায় হাঁটু অবধি।<&sol;p>&NewLine;<p>তো এমন নরম রসালো যে জমিন তার মানুষেরা কেমন করে হয় অত শক্ত-বাঁকা যা সোজা করতে হানা দিতে হয় পুলিশের&quest; কী নিয়ে&comma; কোন স্বার্থের হেরফেরে তারা করে কাটাকাটি&comma; ঢাল-সড়কি নিয়ে বেরিয়ে আসে বর্বরযুগের উন্মাদনায়&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>সেবার বোশেখ মাসের শেষদিকে ভাতুরিয়ার গনু মন্ডলের বড় ভুঁয়ের পাটের চারা বালিদিয়ার ছমির শেখের দুর্দান্ত বদমেজাজি ষাঁড়টা সাবাড় করে চলছিল। কার কাছে খবর পেয়ে এসে গনু মণ্ডলের বড় ব্যাটা সেটাকে প্রথম খালি হাতেই তাড়া করে। কিন্তু একগুঁয়ে ষাঁড়টা তাতে একটুও ভয় না পেয়ে বরং ফোঁস ফোঁস করে নাক দিয়ে গরম ভাপ বের করে বিরক্তি ও রাগ প্রকাশ করতে থাকলে প্রথমে সে হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে&comma; অর্থাৎ ইটেল ছুড়ে তাড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু পলি মাখা এঁটেল মাটির জমিনে ফাল্গুন-চৈত্র ছাড়া মজবুত ইটেল পাওয়া দুষ্কর। তার উপর দুই দিন আগে বয়ে যাওয়া কালবোশেখির সাথে বেশ বৃষ্টি হওয়ায় মাটি সেদিন ভেজা ভেজা কোমল। জুৎ হচ্ছে না দেখে গনুর ব্যাটা এদিক-ওদিক চেয়ে দেখে অদূরেই পেয়ে যায় এক কচা গাছ। ব্যাস&comma; মট করে একটা কচার ডাল ভেঙ্গে নিয়ে চলছিল ষাঁড় তাড়ানোর চেষ্টা। কিন্তু দুর্দম ষাঁড়টা যে উল্টে তার দিকেই তেড়ে আসে&excl; ব্যাটা বাপরে ডাকে&comma; ডাকে ভাইদেরে। বাপ-ভাইয়েরা সে ডাক সরাসরি শুনতে না পেলেও যারা শুনছিল এবং দেখছিল&comma; তারা মুখে মুখে খবরটা পৌঁছে দেয় যেন টেলিগ্রাফের চেয়ে দ্রুতগতিতে। এরপর যা ঘটে তাতে ষাঁড়ের গোজীবন সাঙ্গ হওয়ারই কথা। গনু মন্ডলের ব্যাটারা চাইলে একটা মেজবানি লাগায়ে দিতে পারতো। কিন্তু নানা বিবেচনায় তাদেরকে সেটা করতে দেয় না কয়েকজন বিবেচক মুরব্বি। তারা বরং ষাঁড়টারে খোঁয়াড়ে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন খোঁয়াড় থেকে ষাঁড় ছাড়িয়ে নিতে আসে ছমির শেখের তিন ব্যাটা। খোঁয়াড়ের জরিমানার টাকা নয়&comma; বরং তারা হাতে বয়ে আনে তিনটে চকচকে বাঁশের লাঠি। লাঠিয়াল হিসেবে ছমির শেখের ছাওয়ালগের সুনাম আছে তল্লাটে। যেমন দশাসই তাগের চেহারা&comma; তেমনি আসুরিক তাগের মেজাজ। তাদেরকে একসাথে লাঠি হাতে দেখলে ডরায় না এমন বাহাদুর কমই আছে গাঁয়ে। কিন্তু ভাতুরিয়ার সব মানুষ তো আর ভাতের বদলে ফ্যান খায় না। পালোয়ান না থাক&comma; তাদেরও আছে কিছু সিপাই-বরকন্দাজ। কাজেই ছমির শেখের ব্যাটাদের অন্যায় আচরণের সমুচিত জবাব দিতে ভাতুরিয়ার কেউ কেউ রুখে দাঁড়ায়। তর্ক-বিতর্ক&comma; ধমকানি-চোখরাঙানি সত্যিকারের বীরেরা বেশিক্ষণ চালায় না। বীরেরা তর্কবাগীশ হয় না। তারা কথার চেয়ে কাজে বিশ্বাসী। কাজেই অচিরেই ছমির শেখের এক বীরজাতকের মাথা ফাটে এবং অন্য দুজন এর শোধ নেবে বলে হুঙ্কার দিয়ে তখনকার মতো রণে ক্ষান্ত দিয়ে ফেরে নিজ গ্রামে। এরই জের ধরে পরদিন মুখোমুখি দুই গ্রাম। কোন মীমাংসার পূর্বচেষ্টা ছাড়াই হয়ে যায় এক ব্যাপক রক্তক্ষয়ী কাইজে। যে কাইজে পরে পরিচিতি পায় গনুর কাইজে বলে।<&sol;p>&NewLine;<p>পুরুষেরা কাইজে করে। নারীরা ঘরে বসে বুক চাপড়ায়&comma; আল্লাহরে ডাকে&comma; পীরের দরগায় জোড়া মোরগ মানে&comma; মক্কা শরীফে মানত করে গিলাফ কিংবা মোমবাতি। কোন নারী চেষ্টা করে স্বামীকে বাঁধা দিতে। চোখের সবটুকু মিনতি আর বুকের সব প্রেম দিয়ে চেপে ধরে রুখতে চায় পতিধনেরে। কিন্তু পুরুষ যখন খুনের নেশায় পাগল তখন কি আর তারে বাঁধতে পারে প্রেম&excl; আর নেশাটাতো এমনি এমনি চাপে না। শুধুই খুনের নেশায় খুন করে কজনে&excl; বাড়া ভাতে ছাই ঢাললে&comma; পাকা ধানে মই দিলে কি মাথায় কাঁঠাল ভাঙতে চেষ্টা করলেও যদি সয়ে থাকে&comma; তবে তো তারা বেমরদের দল। অমন হলে কুরুক্ষেত্তর&comma; লঙ্কাকাণ্ড দুরে থাক&comma; এই যে কদিন আগে মহাযুদ্ধ হয়ে গেল&comma; তারও তো কোন দরকার পড়তো না। কোথায় কোন যুবরাজ আর তার বিয়ে না হওয়া বৌয়েরে কে মারল তাই নিয়ে সারা দুনিয়া ঝাঁপায়ে পড়ার কী ছিল দরকার&quest; হাঁ&comma; দরকার ছিল&comma; দরকার আছে&comma; দরকার থাকবে। আর তাই যুদ্ধও হবে। যুদ্ধ জীবন নেয়&comma; আবার জীবন দেয়ও। যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপরও অসীম সম্ভাবনা নিয়ে গজিয়ে ওঠে সতেজ-সবুজ অঙ্কুর। যুদ্ধ মানচিত্র বদলে দেয়&comma; বদলে দেয় যেকোন ভ‚মির ইতিহাস&comma; সভ্যতা। কিন্তু এই বদলটাও এক অর্থে প্রাকৃতিক। বদল জরুরী বলেই মানুষের রক্তে রোপিত আছে ঘুরে দাঁড়াবার বীজ। এই বীজ তাকে প্রলুব্ধ করে মাথা তুলে দাঁড়াতে&comma; জান বাজি রেখে হলেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে পরিবর্তন হয়ে দাঁড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত। তা মানুষের আকাক্সক্ষানুযায়ীই যদি সব ঘটতো তবে তো পৃথিবীটা অগণিত বেহেশতিবাগের টুকরোয় ভরে যেত। যার যেমন আকাঙ্ক্ষা&comma; তার তেমন বাগ। তবে সবার বাগেই বোধহয় একটা সাধারণ ব্যাপার থাকতো- সেখানে সেই অধীশ্বর।<&sol;p>&NewLine;<p>নিজেরে একেশ্বর ভাবতে পছন্দ করে পুরুষ&comma; অন্ততঃ তার আপন বাগে&comma; যে বাগ সে সাজায় নিজমহিমার প্রমাণ দিতে- নিজেরই প্রয়োজনে। সেই আপনবাগও যদি তারে ছেড়ে পালাতে হয় অনির্দিষ্ট কালের তরে তবে তার মতো দুর্ভাগা আর কে আছে জগতে&excl; এমনই এক দুর্ভাগা ছমির শেখের ছোটভাই আমীর শেখ।<&sol;p>&NewLine;<p>ওটা ছিল মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই-চার বছর আগের ঘটনা। সেই যে বছর ভাগ হওয়া দুই বাংলা আবার এক হলো। আমিরের দ্বিতীয় বৌয়ের গা থেকে তখন হলুদের গন্ধ মুছেছে কি মোছেনি। গনুর কাইজের জের ধরে আমিরকে হতে হয়েছিল পলাতক। শুধু আমির নয়&comma; বালিদিয়া-ভাতুরিয়ার শেখ ও মণ্ডল বংশের সব পুরুষই গা ঢাকা দিয়েছিল দিন কয়েকের জন্য। অন্য সব বংশের কিছু কিছু সমর্থ ও যোগ্য পুরুষেরাও রাতে বাড়িতে হুশিয়ার হয়ে ঘুমাতো দিনকতক। বলা যায় না&comma; কখন এসে পড়ে পুলিশ। আর এসেই &OpenCurlyQuote;সামনে যারে পাও তারেই বাইন্ধে নেও’ নীতিতে অ্যাকশন শুরু করলে&&num;8230&semi;। কথায় কয়&comma; বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা&comma; আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ। তা পুলিশ অবশ্য দুই দিনের বেশি আসেনি। প্রথম দিন আসছিল কাইজের স্মারক সাতটা লাশের সরকারি বিধিমতে সদগতি করতে। আর দ্বিতীয় দিন তদন্তের নামে এলাকায় ত্রাস সঞ্চার ও ধরপাকড় করতে। কাইজের মাঠে যারা সেদিন একবারে না মরে শরীরের এখানে-ওখানের জখমে পট্টি লাগায়ে টোটকা চিকিৎসা আর কবিরাজির পরে ভরসা করে ঘরে শুয়ে ধুকছিল&comma; তারা এদিন শোলার টুপি-বুটজুতাসমেত হাফপ্যান্টওয়ালাদের খাকি চেহারা দেখেই আধমরা থেকে মরমর দশায় পৌঁছে গেল। তারপর পুলিশ যখন তাদেরকে কোমরে দড়ি বেঁধে হাঁটায়ে নিয়ে চলল&comma; তখন গাঁ বলতে গেলে পুরুষশূন্য। সেই যে সুস্থ-সবল জোয়ান আমির শেখ এককাপড়ে বাড়ি ছাড়ল&comma; তারপর তার দেখা মিলল এই সেদিন&comma; বালিদিয়ার হাটে।<&sol;p>&NewLine;<p>হাটে অনেকেই আমির শেখকে ঘিরে ছিল। সবাই তার কথা শোনার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু সে কারো সাথেই বেশি কথা কয়নি। লোকেরাও তারে কথা বলানোর জন্য বিশেষ চেষ্টা করার সাহস পায়নি। তা কী করেই বা তারা সাহস পাবে&quest; নামেই আমির শেখ। চেহারায় আছে খানিক মিল। কিন্তু পোশাকে-আশাকে&comma; কথার ধরণে কে বলবে যে এটা সেই আমির শেখ যার হাতের তেলপাকা বাঁশের লাঠির ঘুর্ণিগতির ঘূর্ণনের সামনে এগোতে পারে এমন বিপক্ষ দল গড়ে তোলাই ছিল শক্ত&excl; লোকেরা চেয়ে চেয়ে আমির শেখের গাল বসা হনু জাগা মুখে খোঁচা খোঁচা কাঁচায় পাকায় মেশানো দাড়ি আর খাড়া নাকের নীচে ঝুলতে থাকা কালচে পুরুষ্ট ঠোঁটের তলাকার শীর্ণ চিবুক বেয়ে নেমে যাওয়া ছয় আঙ্গুল লম্বা কাটা দাগটা দেখে। লোকেরা দেখে তার মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া শীর্ণ দেহকাঠামো&comma; কেশবিরল মাথা- যেখানে একসময় ঝাঁকড়া বাবরি ছিল&comma; উঁচু কপালের নীচে কোটরে বসা চোখে কী এক শুন্যতা নাকি উদাসীনতায় মরা মাছের মত ঘোলাটে দৃষ্টি। লোকেরা বলাবলি করে&comma; আমির শেখের বর্তমান চেহারার সাথে তার এতদিনকার ফেরারী জীবনযাপনের কল্পনা মিশায়ে আলোচনা শুরু করে। অচিরেই আমির শেখ অঞ্চলের প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে।<&sol;p>&NewLine;<p>রমিজ মিঞার নাতিনের বিয়ের পরস্তাব নিয়ে এসেছে এই আমির শেখ।<br &sol;>&NewLine;আমিরের প্রথম পক্ষ লবেজান বিবির গর্ভের তিন ব্যাটা&comma; যাগেরে ফেলে আমির দেশান্তরী ছিল এই এতকাল&comma; তারা সবাই এখন বিয়ের লায়েক। বড়টার তো বলতে গেলে পয়লা বিয়ের বয়স পেরোয়ছে আরো ক’বছর আগে। তবু যে এতকাল তাদের বিয়ে হয়নি তার কারণ শুধু এই নয় যে বাপের অবর্তমানে তাগেরে বিয়ে করানোর মতন অভিভাবক ছিল না। খুব ছিল। আমির শেখের বড়ভাই ছমির শেখ তো এ কয় বছর ভাইপোগুলোরে বলতে গেলে আপন ব্যাটার মতই যত্ন-আদর আর শাসনে বড় করেছে। আমিরের দ্বিতীয় পক্ষকেও সে অসম্মান করেনি। কিন্তু ভরাযৈবতী মেয়েমানুষ নিখোঁজ স্বামীর আশায় পথ চেয়ে চেয়ে যৌবন ক্ষয় করে আর কতকাল টিকে থাকে সতীনপোদের সংসারে&quest; তাছাড়া সতীনপোরা লায়েক হয়ে উঠছিল আর নিজের না ছিল কোন নাড়ী ছেঁড়া ধন। কাজেই সে যে একদিন স্বামীর ভিটার দিকে ফিরে ফিরে চেয়ে আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে টিনের তোরঙ্গ কাঁখে গরুর গাড়িতে গিয়ে উঠল&comma; তাতে ছমির শেখের কোনই দায় থাকার কথা নয়। আর ছমির শেখরে এ দোষও কিছুতেই দেয়া চলে না যে ভাইপোগের বিয়ের পণের টাকা যোগানোর ভয়ে সে এতকাল তাগেরে আইবুড়ো করে রাখছে।<&sol;p>&NewLine;<p>আসল কথা হলো রক্ত। ডাকাবুকো বংশের লড়াকু বাপের যোগ্য সন্তান তারা। কারণে-অকারণে মাথায় রক্ত চড়া যাগের স্বভাব তারা যখন মহাযুদ্ধের বাজারে তিনবেলা পেটপুরে খেতে না পাওয়ার গোলমালে পড়ে&comma; তখন আর কতকাল নিরীহ ভাব ধরে উঠোনের কোনে বসে বাখারি চাঁচতে পারে&excl; কাজের ভেতর ঐ একটা কাজই যে তাদের করার ছিল তখন। কাজেই তারা যদি এক গভীর রাতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে রামদা হাতে নহাটা বাজারের বিখ্যাত মহাজন অধর কুন্ডুর গদিতে হানা দেয় তবে সেটা কোন আচানক ঘটনা তো নয়। আবার পেশাদারিত্বের অভাবে তাগের কেউ যদি পুরুষানুক্রমিক তেজারতির কারবারে বুদ্ধিপাকানো কুণ্ডুর খাসলোকেদের হাতে ধরা পড়ে&comma; তবে তাও কোন আশ্চর্য ব্যাপার নয়। তবে এটা নিশ্চয় বিস্ময়ের বিষয় যে&comma; হাতেনাতে অস্ত্রসমেত ডাকাত ধরার পরেও কুন্ডু সেই ডাকাবুকো নবীন &OpenCurlyQuote;ডাকু’টাকে পুলিশে না দিয়ে তুলে দিল অন্য এক &OpenCurlyQuote;বাহিনী’র হাতে। সেই থেকে আমির শেখের তিন ব্যাটাই আছে গহর লাঠিয়ালের দলে।<&sol;p>&NewLine;<p>গহর লাঠিয়াল সারাবছর ভাড়া খাটে বিভিন্ন ধনীলোক আর মহাজনদের পক্ষে-বিপক্ষে। গহরের বাপ-দাদার নামের সাথে উপাধি ছিল লস্কর। গহর ন্যাংটাকালে দাদার বাপের মুখে গল্প শুনতো রাজা সীতারামের। দাদার বাপের দাদা নাকি সীতারাম রাজার হয়ে বহুবার মুঘল সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিল। ভ‚ষণার রাজা সীতারাম যত পুকুর-দীঘি খনন করেছিলেন তার সবেতেই নাকি ছিল গহরের পরদাদার বাপের কারিগরির ছোঁয়া। লোকটা লড়াইয়ের মাঠে মানুষের কল্লা কাটতে যেমন ছিল দড়&comma; ফসলভরা মাঠের মধ্যিখানে পুকুর কাটতে তেমনই ছিল চারু। সাত পুরুষের রক্তের ধারাবাহিকতায় গহরের শরীরে যে রক্ত বহমান তাতে সেই পরদাদার বাপের যোগ্যতা প্রশমিতভাবে হলেও বিদ্যমান। গহর লাঠিয়াল নিজে তা জানে এবং অন্যরেও তা জানায়ে থাকে। তার সাগরেদেরা সবাই তারে পীর-মুর্শিদের মতই ভক্তি করে। আর করবে নাই বা কেন&quest; গহরের দলে থাকা মানে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের দুশ্চিন্তা আর না থাকা। ধনীলোকদের ভাড়াটে লাঠিয়ালরা যতদিন জীবনে বেঁচে থাকে&comma; কখনো বেকার হয় না। ধন যাদের থাকে তাদের জীবনে ফ্যাসাদ আর মগজে ক‚টবুদ্ধিও থাকে। কাজেই তাদের লাঠিয়ালদেরকে তারা পুষ্ট ও তুষ্ট করে রেখেই নিজেদের জীবন ও বিত্ত পাহারার কাজে লাগায়।<&sol;p>&NewLine;<p>গহরের দলে থেকে আমিরের ব্যাটাদের মাত্র ক’বছরেই বেশ বাড়-বাড়ন্ত হয়েছে। অধর কুন্ডুর বিষয়-সম্পত্তি পাহারার দলে থাকে আমিরের যে ব্যাটা&comma; সে রীতিমত মাস চুক্তিতে বেতন পায়। আর যে দুটো গহরের কাছ থেকে তালিম নিয়ে লাঠিচালনায় হাত পাকায়ে জমিদারের খাস লাঠিয়াল বাহিনীতে যোগ দিয়েছে তারাও বছর চুক্তিতে মাইনে পাচ্ছে। এখন আমির শেখ তার লায়েক পুত্রদেরে সংসারী দেখতে চায়।<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version