২৮শে আগস্ট অটোয়ায় টুএসএলজিবিটিকিউআই বিষয়ে ঐতিহাসিক পরিকল্পনা ঘোষণা করছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

অনলাইন ডেস্ক : গত ২৮শে আগস্ট, রবিবার, কানাডার ফেডারেল সরকার সমাজের প্রচলিত স্বাভাবিক লিঙ্গের বাইরের মানুষদের জন্য পাঁচ বছরের এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপকে কানাডার মানব ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ঘটনা বলে অভিহিত করে সরকার থেকে জানানো হয়, সারা দেশের এলজিবিটিকিউ, টু স্পিরিট এবং ইন্টারসেক্স জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য আগামী পাঁচ বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এটিকে “কানাডা’স ফার্স্ট টুএসএলজিবিটিকিউআই প্লাস একশান প্লান” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে কানাডার বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের সার্বিক সুবিধার বিষয়টি যথাযথভাবে গুরুত্ব পাবে। তিনি মনে করেন, এই প্রকল্প কানাডার মানুষের লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার সাথে সাথে কানাডার বহুজাতিকতাকে প্রাধান্য দিবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, কানাডায় বসবাসকারী বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার থেকে রক্ষা করার সাথে সাথে সব ধরনের মানুষকে নিজ নিজ পরিচয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে এই পদক্ষেপ। সেই সাথে এটি সবার অধিকারকে সমুন্নত রাখবে। জাস্টিন ট্রুডো বলেন, কানাডাকে সত্যিকারের বহুজাতিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবার পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। সেই সাথে এই ভূমিতে সবার নিজ নিজ পরিচয় নিয়ে বাঁচার যে অধিকার আছে, সেটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বরাদ্দকৃত অর্থ সম্পর্কে বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৫ ভাগ ব্যয় করা হবে কমিউনিটি সংগঠনদের জন্য যারা কানাডায় বহুজাতিকতা এবং বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের পরিচয় এবং অধিকার নিয়ে কাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, জন্মগতভাবে মানুষ বিভিন্ন লিঙ্গের পরিচয়ে বহন করে, এই জন্মগত পরিচয়ে কারো কোন হাত নেই। এই পরিচয়ের মানুষরা যেন নিজেদের পরিচয়ের সম্মান নিয়ে সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন করা খুবই জরুরী। সেই সাথে কেউ যদি বিশেষ লিঙ্গ পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্য পায়, তবে অবশ্যই তাকে সেই মত চলতে দেয়ার বিষয়টি রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। এর জন্য কেউ যেন কোনরূপ বৈষম্য এবং উপহাসের পাত্র না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। গত রবিবার অটোয়ায় ৩৬তম প্রাইড প্যারেড শুরু আগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, টুএসএলজিবিটিকিউআই এর পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে, টু-স্পিরিট, লেসবিয়ান, গে, বাই-সেক্সচুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, কুইয়ার, ইন্টার সেক্স।

কানাডার উইমেন এন্ড জেন্ডার ইকুইলিটি মন্ত্রী মার্সি লেন প্রধানমন্ত্রীর এমন এক পদক্ষেপকে যুগান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ফেডারেল সরকারের এই পদক্ষেপ সেই সব মানুষদের জীবনে আনন্দ বয়ে আনবে, যারা লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য সমাজের অন্যান্য মানুষদের কাছে সব সময় উপেক্ষিত এবং বৈষম্যের শিকার হন। দীর্ঘ পাঁচ বছরের এই পদক্ষেপ ধীরে ধীরে সমাজের মানুষকে এ বিষয়ে অনেক বেশী সচেতন করবে এবং নিজস্ব পরিচয়কে সম্মান করতে শিখাবে। তিনি উল্লেখ করেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল এবং এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের সাথে দীর্ঘ কয়েক বছর আলাপ আলোচনা করে এই প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে এবং এখন এটাকে বাস্তবায়িত করার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করতে সব সময় প্রস্তুত। মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, এ ব্যাপারে, গত ২০২০-২০১ সালে প্রায় ২৫ হাজার চিঠি অটোয়া পেয়েছে, যে সব চিঠিতে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদের এই পদক্ষেপের অর্থ জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ গবেষণা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য ব্যয় করা হবে।

উল্লেখ্য, টুএসএলজিবিটিকিউআই’দের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৬৯ সালে সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ‘প্রাইড প্যারেড’ অনুষ্ঠিত হয়। তারপর এটি আমেরিকার বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। টুএসএলজিবিটিকিউআই মানুষেরা নিজেদের পরিচয়ে সন্তষ্টি এবং অহংকারবোধ করে বলে তাদের এই বাৎসরিক সমাবেশকে ‘প্রাইড প্যারেড’ বলা হয়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘প্রাইড প্যারেড’ অনুষ্ঠিত হয় টরন্টো নগরীতে। ১৯৮১ সালে টরন্টোতে শুরু হওয়া এই প্যারেডে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এক লাখের বেশী বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষ নিজেদের অহংকারের পোশাকে সজ্জিত হয়ে টরন্টোর ডাউন টাউনে এই প্যারেডে অংশ নিয়ে থাকেন। জুন মাসের ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্যারেড উপভোগ করেন পাঁচ লাখের বেশী মানুষ।