রুমু ইসলাম : গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিয়াল শহরের ম্যারিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত হল ফিরে দেখা ৮২-৮৩। দুই দিনব্যাপী এই পুনঃমিলন অনুষ্ঠানে ১৯৮২/৮৩ সালে বাংলাদেশ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পাঁচ তারকা বিশিষ্ট এই ম্যারিয়ট হোটেলে এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মন্ট্রিয়ালের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামিমুল হাসান শামিম।
টরন্টো ও যুক্তরাজ্যের ফ্লোরিডা শহর থেকে আগত ৮২/৮৩ সালের মন্ট্রিয়ালে প্রায় আড়াই শতাধিক ৩৬ বছর পূর্বে আসা বাঙালির এই প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে মানুষের আবেগ ও পরষ্পরের অনুভ‚তি প্রকাশ ছিল অনুষ্ঠানের মূল অংশ। ২ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম সন্ধ্যায় দীর্ঘদিন পরে দেখা সাক্ষাতের পর হ্যান্ডসেক আর আবেগঘন অশ্রুসিক্ত আলিঙ্গনের মধ্যে দিয়ে এক প্রীতি ও মায়ার পরশে হোটেলের লন ভড়ে উঠে ফিরে দেখার, ফিরে পাওয়ার এক সুন্দর সন্ধ্যা।
ছত্রিশ বছর আগে বয়সে যারা ছিলেন তরুণ, অবিবাহিত, আজ তারা সকলেই বার্ধক্যের মাঝামাঝিতে কেউ দাদা-দাদি, নানা-নানি হয়ে মহাসুখে এই বিদেশভ‚মিকে নিজ মাতৃভ‚মি মনে করে জীবনযাপন করছেন। ৩৬ বছর পূর্বে দেখা এই মানুষগুলোকে একদৃষ্টে চিনতে অনেকের কষ্ট হয়েছে। পরে চিনতে পেরে আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে পাওয়ার আনন্দে অশ্রুসিক্ত নয়নে মন্ট্রিয়ালবাসী তাদের বরণ করেছে। বলেছে বন্ধু এতদিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে!
এখানে উল্লেখ্য ১৯৮২/৮৩ সালে মন্ট্রিয়াল, ক্যুইবেক, কানাডার বৃহত্ আকারে প্রথম আগমনের ভিত্তি প্রস্তর (সূচনা) করেন। তার আগে অল্প সংখ্যক বাঙালীর আগমন ঘটেছিল, উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের মাধ্যমে যাদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজনের। ৮২/৮৩ সালে একটি বৃহত্ অংশ কানাডায় আগমন করেন। তাদের সকলের অবস্থান তখন মন্ট্রিয়াল শহরে ছিল। সবাই নানান প্রতিকুলতা ও সংগ্রামের মধ্যেদিয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস ও নাগরিকত্ব লাভ করেন। ৩৬ বছর পর তাদেরই মিলন মেলা হলো ফিরে দেখা ৮২/৮৩।
স্থায়ীভাবে বসবাস ও নাগরিকত্ব লাভের পর একটি বৃহত্ অংশ জীবিকার তাগিদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেউ বৃহত্তর টরন্টো, ভ্যানকুভার ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে জীবনের যাত্রা শুরু করেন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ, উচ্চশিক্ষা, যে যার ইচ্ছা আখাক্সক্ষা অনুযায়ী জীবন যাপনে জড়িয়ে পরেন।
যেহেতু মন্ট্রিয়াল শহর ছিল অভিবাসীদের কেন্দ্রবিন্দু, সকলের প্রাণের শহর সেহেতু মন্ট্রিয়ালবাসী প্রধান আয়োজন ও হোষ্ট শহর হিসাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ছত্রিশ বছরের আগে আসা পুরান বাঙালীদের একত্রিত করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করে একটা বড় আকারের ফান্ড রেইজ করে, টরন্টোবাসীর সহযোগিতায় সকলের কষ্টের পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে এই ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যা কোন ব্যক্তি বিশেষের স্বপ্ন নয়, হয় সমষ্টিগত সকলের প্রচেষ্টার সফলতা।
২ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল ৮২/৮৩ সালে আসা বাঙালীদের স্মৃতিচারণের পালা। এক এক করে মাইক্রোফোনে আসেন আহ্বায়ক শামিমুল হাসান, মাসুম রহমান, মইনুল খান নীরু, সবুর সিকদার, রেজাউল করিম তালুকদার, কাজী শাহীদ, দোলন সরকার, আলী খান, রুম ইসলাম, আলম মোড়াল, বাবু হায়দাদরী ও আরো অনেকে।
প্রথম দিনের সন্ধ্যা স্মৃতিচারণ শেষে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালমা সিকদার ও নবীউল হক বাবলু। তার পর প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তপন চৌধুরীর কন্ঠে সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় প্রথম সন্ধ্যা।
দ্বিতীয় দিনে শুরু হয় সকাল সকাল ১১টা থেকে স্মৃতিচারণ। সন্ধ্যা সঙ্গীতানুষ্ঠান ও ডিনার।
দ্বিতীয় সন্ধ্যা সঙ্গীত পরিবেশনা করেন রনি প্রান্টিস রয়, তানিমা হাদী, সনুজা চান্দা, শাহ মাহবুব, সপ্নীল ও ন্যান্সির একক নৃত্য প্রদর্শন দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।
পরিশেষে বলতে হয় ফিরে দেখা ৮২/৮৩ পুন:মিলন অনুষ্ঠান অতীত ইতিহাসের সকল সফলতাকে পিছনে ফেলে সার্থকতার নূতনরাজ্যে স্থাপন করেছে। ধন্যবাদ উদোক্তাদের। ধন্যবাদ ব্যবস্থাপনার সার্থক দুটি রাত মন্ট্রিয়ালে ইতিহাস হয়ে থাকবে। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন- রশীদ খাঁন, বেলাল চৌধুরী ও বিজু শহা।