শাহনুর চৌধুরী : কানাডা জুড়ে শতশত লংটার্ম কেয়ার হোমগুলো নতুন করে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই লংটার্ম কেয়ার সেক্টরের জন্য মহামারি পরবর্তী একটি ‘উচ্চমান সম্পন্ন’ নীতিমালার খসড়া গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে।

মহামরিকালে গত প্রায় দুই বছর ধরেই কানাডার লংটার্ম সেক্টরের বিভিন্ন দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এর বাসিন্দাদের যত্ন থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এসব দুর্বলতা ধরা পড়েছে। মহামারির প্রথম কয়েক মাসে কানাডায় করোনায় মৃত্যুর ৮০ শতাংশেরও বেশি ঘটেছে এসব লংটার্ম কেয়ার হোম তথা বৃদ্ধাশ্রম ও অবসর সেন্টারে। অর্গানাইজেশন ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ও ই সি ডি) দেশগুলোর মধ্যে কানাডায় এই ধরনের মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ।

কানাডার টরন্টোর সিনাই হেলথ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি হেলথ নেটওয়ার্কের পরিচালক ডা. সমির সিনহা বলেন, মহামারিকালে হেলথ কেয়ার সেন্টারগুলোর যে ‘বদনাম’ হয়েছে তাতে এখন অনেকেই এগুলোতে যেতে চাইছে না। তবে আমি নিশ্চিত নতুন নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন হলে প্রাদেশিক, আঞ্চলিক এবং, ফেডারেল পর্যায়ে কানাডিয়ানরা আবার এগুলোর প্রতি আস্থা ফিরে পাবে, বয়স্ক ব্যক্তিরা এগুলোতে যাওয়ার দাবি করবে।

ডা. সামির সিনহা হেলথ স্টেন্ডার্ডরস অর্গানাইজেশনের (এইচ এস ও) কারিগরি কমিটির সভাপতি। এই কমিটি প্রস্তাবিত নীতিমালার খসড়া তৈরি ও প্রকাশ করেছে। এইচ এস ও একটি স্বাধীন ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যারা স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিসেবা খাতের জন্য মানসম্পন্ন নীতিমালা তৈরি করে।

ফেডারেল সরকার গত বসন্তে লংটার্ম হোমগুলোর জন্য নতুন নীতিমালা আহবান করেছিল। ওই আহবানে সাড়া দিয়ে এইচ এস ও গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত খসড়া উপস্থাপন করে। এতে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ প্রটোকল’ গ্রহণের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কানাডিয়ান স্টেন্ডার অ্যাসোসিয়েশন (সিএসএ) এই বিষয়গুলো মনিটর করবে। অর্থাৎ লংটার্ম কেয়ার হোমের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো দেখভাল করবে সি এস এ। এ বিষয়ে তারা ফেব্রæয়ারির মধ্যে একটি খসড়া প্রতিবেদন পেশ করবে।

এইচ এস ওর প্রস্তাবিত নীতিমালাগুলোতে বর্তমানে প্রচলিত মানদণ্ডগুলোর চাইতে বেশি কিছু আছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কানাডার লংটার্ম হোমের নীতিমালা ২০২০ সালের সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছিল। সে সময় ৮টি নতুন বিভাগ ১৭টি নতুন ধারা ও ১৪৮ টি নতুন মানদন্ড নির্ধারণ করা হয়েছিল। ডা. সিনহা বলেন, আমরা আগের নিয়ম-নীতি কিছু বাদ দিতে চাইনি। সেগুলোর সাথে সমন্বয় করে আমরা কিছু নতুন নীতিমালা দিয়েছি। এগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে সবারই উপকার হবে।

খসড়া নীতিমালায় ওল্ডহোম বা লংটার্ম কেয়ার সেন্টারের বাসিন্দাদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী টেরি লেক বলেন, তিনি এখনও খসড়া মানদন্ড পুরোটা দেখেন নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি শুনেছি। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক বিষয়। কেননা মহামারিকালে এই বিষয়টি বৃদ্ধাশ্রমের অনেক বাসিন্দাদের মনোবেদনার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছিল। তারা স্বজনদের একটু সাক্ষাত বা স্পর্শের জন্য আকুল হয়েছিল, কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি।
সুসান মিলসের মা-বারবারা (৮৬) যিনি ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন, অন্টারিওর আর্নপ্রিয়রে দ্য গ্রোভ নার্সিং হোমের বাসিন্দা ২০২০ সালে করোনা মহামারির শুরুতে একটানা ৭ মাস তাকে ‘জোড়পূর্বক’ আইসোলেশনে রাখা হয়। সন্তানদের একটু কাছে পাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুলতা দেখালেও হোম কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। তিনি কেবল তার থাকার কক্ষের একটি জানালা দিয়ে তার স্বজনদের দেখতে পেতেন। এই বিষয়গুলো তাকে আরো বেশি অসুস্থ্য ও মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলেছিল। সুসান বলেন, তার মা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা একটা ঘরে ‘বন্দী জীবন’ কাটাত। করোনার নতুন সংক্রমণ ওমিক্রনের কারণে বারবারার মতো বয়সীদের আবার ‘বন্দি জীবনে’ ফিরে যেতে হচ্ছে। ডা. সিনহা বলেন, আমরা এ ধরণের অনেক গল্প শুনেছি। এই সমস্যাগুলো দূর করার জন্য নতুন নীতিমালায় প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক সরকারগুলো এই নীতিমালা বাস্তবায়নের সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এছাড়া এই নীতিমালা এখনই আইনে পরিণত করার দাবি জানান তিনি। সূত্র : সিবিসি