অনলাইন ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সংগঠন টরন্টো ফিল্ম ফোরাম। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র এনএস রোড পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন এই ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে গত মাসে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ভাস্কর্যের একই বেদিদে বঙ্গবন্ধুর তিন ধরনের তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া এই বেদিদে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও থাকবে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্নের পথে। হঠাৎ করে শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা এই ভাস্কর্যটির ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে ফেলে।
অতিস¤প্রতি, বাংলাদেশের কয়েকটি মৌলবাদী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ বাংলাদেশের সমস্ত ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। এ ছাড়াও শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদের জুম্মার খুৎবা পাঠকালে সারাদেশের ভাস্কর্য অপসারণের যুক্তি দিয়ে মসজিদে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উস্কে দেয় মৌলবাদী চক্র।
মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় মাসে জাতির জনক ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সদস্যরা আহ্বান জানান।
সদস্যরা বলেন, সকল ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও জাতির মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয় ধর্মনিরপেক্ষতা, পাশাপাশি রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে দেওয়া হয় সমান অধিকার ও মর্যাদা। একটি সুন্দর রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি হিসেবে সংবিধানের এই নীতির কোন বিকল্প নেয়। তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ হাজার বছর ধরে বাঙালি ও এই ভূখণ্ডের সনাতনী সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে। অধিকাংশ জনগণের ধর্ম পরিচয় ইসলাম হলেও তারা মূলত অসা¤প্রদায়িক চেতনার এবং মানসিকতার। ঐতিহাসিক কাল থেকেই বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের সাথে এখানে বসবাস করে আসছে। সামান্য একটি অংশ ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কখনোই উগ্রবাদী ও ধর্মান্ধ নয়।
তারা দাবি জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের নিজের ধর্ম ও বিশ্বাস নিজের মত করে পালন করার সমস্ত সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে এবং সকল মৌলবাদী ধর্মান্ধ দল সমূলে উৎখাত করতে হবে।
টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সদস্যরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গার দু:সাহস দেখিয়েছে যে ধর্মান্ধ-জঙ্গী গোষ্ঠী, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে সরকারকে আহ্বান জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল সাংস্কৃতিক, সামাজিক, নারী, পেশাজীবি, ছাত্র, যুব ও রাজনৈতিক শক্তিসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে আহ্বান জানান।