স্পোর্টস ডেস্ক : শেষ হলো দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর। রাতের অন্ধকার শেষ হয়ে ভোরের আলো ফুটলো বাংলাদেশের ফুটবলে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। বুধবার (২৮ জুন) বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভুটানকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছেন জামাল ভূইয়ারা। এই জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে শেষ চার নিশ্চিত করল হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্ব পাড়ি দেওয়ার জন্য কত চেষ্টাই না করেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের পর সেই চেষ্টায় সফল হয়নি তারা। এরপর পাঁচবার সাফের লড়াই হয়েছে। এর মধ্যে দুইবার রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে খেলা হয়েছে। বাকি তিনবারই গ্রুপ পর্ব খেলে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। অবশেষে পুরনো লজ্জা পেছনে ফেলে নতুন করে সাফল্যের পথে ছুটতে শুরু করেছেন জামাল ভূইয়ারা। আগামী ১ জুলাই সেমিফাইনালে বাংলাদেশ খেলবে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন কুয়েতের সঙ্গে। জিতলেই ২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ।

সবার মুখে মুখে শেখ মোরসালিনের নাম। ১৭ বছরের এই তরুণ চমক উপহার দিচ্ছেন প্রতি ম্যাচেই। আগের ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ভুটানের বিপক্ষেও গোল করলেন। টানা দুই ম্যাচে গোল করেছেন রাকিবও। মালদ্বীপের বিপক্ষে গোলের পর ভুটানের বিপক্ষেও গোল করেছেন তিনি। বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারের টানা দুই ম্যাচে গোল করার ঘটনা সত্যিই বিরল। একইসঙ্গে দুইজন টানা দুই ম্যাচে গোল করলেন।

ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের ১২ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ডি বক্সের বাইরে থেকে সেন্দা দর্জির বাম পায়ের মাপা শটে বল জড়িয়ে যায় জালে। ঝাপিয়েও নাগাল পাননি আনিসুর রহমান জিকো। ম্যাচের ২১তম মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। ভুটানের থ্রোয়ের পর মোহাম্মদ সোহেল চার্জ করে বল কেড়ে নিয়ে পাস দেন রাকিব হোসেনের উদ্দেশে। তিনি পাস দেন মোরসালিনকে। প্রথমে এই ফরোয়ার্ড বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। তবে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের পা হয়ে বল ফের মোরসালিনের পায়ে ফিরে। এবার আর ভুল করেননি তিনি। বাঁম পায়ের শটে বল জালে জড়ান।

ম্যাচের ৩০ মিনিটে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এই গোলেও অবদান মোরসালিনের। তার বাড়ানো ক্রস ছয় গজ বক্সে রাকিব হালকা ভলিতে বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন জামালের উদ্দেশ্যে কিন্তু বল ভুটানি ডিফেন্ডার ফুনটসো জিগমের গায়ে লেগে জড়িয়ে যায় জালে। ৩৬ মিনিটে তৃতীয় গোলটি আসে রাকিব হোসেনের পা থেকে। গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ছোটো ডি বক্সে ঢুকে কোণাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন রাকিব। জাতীয় দলের জার্সিতে এটা তার তৃতীয় গোল।

দ্বিতীয়ার্ধ্বে আর কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। ভুটানের বেশ কিছু আক্রমণ রুখে দেন জিকো।

ফুটবলে বাংলাদেশের জয় দেখা যায় মাঝে মধ্যে। টানা জয়ের ঘটনা তো সাম্প্রতিক সময়ে বিরল। এই বিরল ঘটনাই ঘটালেন জামাল ভূইয়ারা। বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দুই ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ। মালদ্বীপকে হারালো ৩-১ গোলে। ভুটানকে হারালেন ৩-১ ব্যবধানে।

এর আগে বাংলাদেশ কোনো টুর্নামেন্টে টানা দুই জয় পেয়েছিল ২০১৮ সালে। সেবার নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে ভুটানকে ২-০ গোলে হারানোর পর পাকিস্তানকে হারায় ১-০ গোলে। তবে গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৯ সালেও বাংলাদেশ টানা দুই ম্যাচ জয় করেছে। একবার কম্বোডিয়া (১-০) ও লাওসের (১-০) বিপক্ষে। আরও একবার ভুটানকে (৪-১ ও ২-০)। চার বছর পর টানা দুই ম্যাচ জয় করল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।