বাংলা কাগজ মন্ট্রিয়ল ডেস্ক : মনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বাড়ি বরিশাল জেলার বানাড়ীপাড়ায়। গত দুই বছর থেকে মন্ট্রিয়লে বসবাস করছিলেন। পূর্বে এগারো বছর ইউরোপ ও আমেরিকায় ছিলেন। কানাডার ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সব জটিলতা কাটিয়েও উঠে ছিলেন কিন্তু মরনব্যাধি রোগ। শেষ পর্যন্ত নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে স্পর্শ করতে দেয়নি। গত ২৫ এপ্রিল ভোরে মন্ট্রিয়লের জুইস জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মনোয়ার হোসেন যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন একটা পর্যায়ে জানতে পারেন শীঘ্রই এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে তখন তিনি তার মরদেহ দেশে পাঠানোর কথা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি দেশ থেকেও উনার স্ত্রী ও সন্তানরা মৃত্যুর পরে মরদেহ পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। দু’তিন জন বন্ধু ছাড়া এই শহরে উনার কোন আত্মীয়স্বজন নেই। স্বাভাবিক কারণে মরদেহ পাঠানো ছিলো একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। ঠিক সেই মুহূর্তে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন। উনার মৃত্যুর পরপরই তড়িৎ গতিতে এসোসিয়েশন মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যাপারে কার্যক্রম শুরু করে। পাশাপাশি মন্ট্রিয়লের প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এর কর্মকর্তাবৃন্দ আর্থিক সহযোগীতার ব্যাপারে বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশনকে আশ্বস্থ করে।
উল্লেখ্য, মরদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় তা বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন এর ফান্ডে ছিল না। তখন বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন এর কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ব নিজের একাউন্ট থেকে এসোসিয়েশন এর একাউন্টে ৫০০০ কানাডিয়ান ডলার জমা করে দেশে মরদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মরদেহ পাঠাতে ১০,০০৯.৯৫ ডলার এর চেক Bleuciel Maison Funeraire কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা হয়। এছাড়া মরহূমের ব্যবহার্য কিছু জিনিস ও মোবাইল ফোন উনার বিশেষ অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠানো বাবৎ ২৭০ কানাডিয়ান ডলার খরচ হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে জুইস জেনারেল হাসপাতাল সহায়তা করে। পরিশেষে গত ৩০ শে এপ্রিল টার্কিশ বিমানে মরহুমের মরদেহ বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। গত ৩রা মে বাংলাদেশে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মনোয়ার হোসেন হাওলাদারের মৃত্যুর পরপরই মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাপারে মন্ট্রিয়লের প্রবাসী বাংলাদেশী ছাড়াও অন্যান্য প্রভিন্স থেকে যোগাযোগ করে আর্থিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রবাসীরা ব্যাক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে গত ২১শে মে দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বমোট ১৭,৭৮০ কানাডিয়ান ডলার (কথায়: সতের হাজার সাতশত আশি কানাডিয়ান ডলার) প্রদান করেন।

মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো খাতে সর্বমোট ১০,২৭৯.৯৫ কানাডিয়ান ডলার ব্যায় করা হয়েছে। ব্যায় পরবর্তী অতিরিক্ত কানাডিয়ান ডলার বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন এর ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।

যারা আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছেন তাদের নাম নীচে দেয়া হলো। (অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি সকলের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে। তবে যারা সহযোগীতা করেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন-এর কর্তৃপক্ষ অর্থের পরিমাণ উল্লেখসহ নামের তালিকা পাঠাবে।)

এলেন হেলাল, ইয়াহিয়া আহমেদ, মোশতাক সরকার, আখলাকুর রহমান আলমগীর, এজাজ আহমেদ, ডঃ আব্দুর রব, ফারুক আহমেদ (গান্দী রেস্টুরেন্ট), ইসলাম উদ্দিন (মার্শে মদীনা), এম. জয়নাল আবেদীন জামিল (পানামা রেস্টুরেন্ট), করিম উল্লাহ, মমিনুল ইসলাম ভুইয়া, আব্দুল মান্নান (বারাতী রেস্টুরেন্ট), মুহিম আহমেদ, মুন্সি বশীর, কাজী আলম বাবু, তরফদার ফ্যামিলি (মহিশুর রেস্টুরেন্ট), শিহাব উদ্দিন, মুহিবুর রহমান চন্দন (পিজ্জা সেইন্ট লরেন্ট), ইতরাদ জুবেরী সেলিম (১ম কিস্তি), সেজি সরোয়ার, সাজ্জাদ হোসেন, সাইদুর রহমান (মার্শে স্বদেশ), মমিনুল চৌধুরী উজ্জল, মুহিবুর রহমান বাবু, জহির শেখ, এম. ছাদেক এ চৌধুরী শিবলী, আব্দুস শহীদ, বরিশাল সমিতি (প্রেরক-আব্দুস সালাম), জাহাঙ্গীর আহমেদ (মার্শে মেঘনা), হেলাল উদ্দিন আহমেদ, আলমগীর আলম রহমান, রাজু আহমেদ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (একজন), নাছির রহমান, আরিফুদ্দোহা, ফয়জুল ইসলাম, মেজন আলিবাবা (পাকিস্তান), ৯৩৫৩-৩৩৪৭ ক্যুইবেক ইনক (পাকিস্তান), স্বপন আহমেদ (মনোয়ার), বিপ্লব, সোহেল, মহসীন, ফারুক, টুটুল, রফিক, বদরুল ইসলাম, শিবির আহমেদ, জসিম উদ্দিন, সলমান আহমেদ, আখতার হোসেন, বাবলু ভাই, জাকির ভাই, লুতফা ভাবী, লিটন ভাই, আসাদ ভাই, আজাদ ভাই, উজ্জ্বল ভাই, শামীম ভাই, মোহাম্মদ ভাই, রুহুল আমিন রুবেল, নাসের জামান, নাজমুল হাসান সেন্টু ও পরিবার, মাসুদ ভাই, আমান ভাই (টাইগার মল), আজিজ আহমেদ, রবিন (হেলাল), খলিল আহমেদ চৌধুরী (আমেরিকা), আব্দুল হাই, সোহেল মিয়া, জুবায়ের আহমেদ, আমিন সোহেল, রায়হান মাহবুব, শাহ আলি লিটন, নাজমুল হুদা, সালাউদ্দিন চৌধুরী, জয়দত্ত বড়ুয়া, ইতরাদ জুবেরী সেলিম (২য় কিস্তি), বাবুল ভাই, রফিকুর রহমান, তাওহীদ ভাই, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মন্ট্রিয়ল (প্রেরক-হাফিজুর রহমান), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ক্যালগিরি (প্রেরক-এক্সিকিউটিভ), চিরঞ্জীব সরকার ও সাখাওয়াত হোসেন, শহিদ খান, সৈয়দ মেহেদি রাসেল।
উপরে উল্লেখিত নাম ও সংগঠন ব্যাতীত মনোয়ার হোসেন হাওলাদারের মরদেহ পাঠানোর ব্যাপারে কোন ব্যাক্তি অথবা সংগঠন যদি কোন আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করে থাকেন তবে তার সাথে বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোশিয়েশন এর কর্তৃপক্ষ সম্পৃক্ততা নেই। তাই ভবিষ্যতে এই ধরণের কার্যক্রমে যখন সহযোগীতা করবেন তখন সরাসরি বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশনের ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে টাকা জমা দিতে পারিবেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে এখানে ব্যাংক এর তথ্য দেয়া হলো- (Bangladesh Feunaral Association,Branch no 4400, Institution no 004, Account no 5235246, TD Swift code: tdomcatttor)

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন এর কর্তৃক বাংলাদেশে মরদেহ পাঠানোর এটি ৩য় কার্যক্রম। এর পূর্বে বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন আরো দুইজন বাংলাদেশীর মরদেহ দেশে পাঠিয়েছে। এই কার্যক্রমের শুরু হয়েছে ২০১৩ সালে আবু জাহিদ বুলু এর (মৃত্যু তারিখ ৩রা জানুয়ারি ২০১৩) মরদেহ দেশে পাঠানোর মাধ্যমে। এরপরে ২০২০ সালে আহসান উল্লাহ টিটু (মৃত্যু তারিখ ২৫ জুলাই ২০২০)। বর্তমানের ন্যায় পূর্বেও প্রবাসী বাংলাদেশীর সহযোগিতায় এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
বিশাল এই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে যারা আর্থিক সহযোগীতা ছাড়াও বিভিন্নভাবে সকলের কাছ থেকে এই করোনাকালীন মহামারীর সময়ে মানুষের বাসা কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ দায়িত্বে টাকা সংগ্রহ করেছেন তাদের প্রতি বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

এছাড়া মরদেহ দেশে পাঠানোর জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেকে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করতে বিশেষ সহযোগিতা করেছেন তাদের অবদান অনস্বীকার্য এবং তাদের কাছেও বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। যারা বিশেষ এই সহযোগীতা করেছেন তাদের নাম নীচে উল্লেখ করা হলো-
বৃহত্তর বরিশাল এসোসিয়েশন অব মন্ট্রিয়ল, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মন্ট্রিয়ল, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরী এক্সিকিউটিভস, সাঈদুর রহমান, জামাল নাসের, মোহাম্মদ স্বপন হোসেন, শিব্বির আহমেদ, সত্যব্রত হালদার মানু, নাজমুল হাসান সেন্টু, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, জয়দত্ত বড়ুয়া, ইতরাদ জুবেরী সেলিম, বাংলাদেশ হাই কমিশনের দুজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চিরঞ্জীব সরকার ও সাখাওয়াত হোসেন এর ব্যক্তগিত উদ্যোগে সাহায্য, মকসুম তরফদার, মোঃ আসাদ রহমান, এম সাদেক এ চৌধুরী (শিবলী)।
আরো একটি বিষয়ে একজন ব্যাক্তির ভূমিকা আলাদা করে বলতে হয়। সত্যব্রত হালদার মানু যিনি একজন বাংলাদেশী সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব। চাকুরী করেন জুইস জেনারেল হাসপাতালে। মনোয়ার হোসেন হাওলাদার যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, যখন জীবনের শেষ কয়েকটি দিন পার করছিলেন সেই সময় উনার পরিবারের সাথে নিয়মিত ভিডিও কলে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া ছাড়াও হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন এর যোগাযোগ স্থাপন করে দিয়েছেন। (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ফিউনারেল এসোসিয়েশন)