অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অতিথিরা তাদের কষ্টের কথা লুকানোর একদমই চেষ্টা করেননি। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ফোবিয়া নিয়ে আলোচনা করতে বাইডেন বিশিষ্ট মার্কিন মুসলিম নেতাদের একটি প্রতিনিধি দলকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। নেতারা রাখঢাক ছাড়াই বাইডেনকে তাদের ক্ষোভের কথা জানান; তাঁর সমালোচনা করেন।

বৈঠকে উপস্থিত চার ব্যক্তির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে। মুসলিম প্রতিনিধিরা বাইডেনকে বলেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলকে তাঁর আলিঙ্গন গাজা উপত্যকায় বোমা ফেলার অনুমতি দেওয়ার মতো বিষয় ছিল। এ ছাড়া গাজায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বাইডেনের সন্দেহ ফিলিস্তিনিদের অপমান করার শামিল। ওই মুসলিম নেতারা বলেছেন, শিকাগোতে ছয় বছরের মুসলিম ‍যুবককে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করার ঘটনাটি এসবেরই ভয়ানক ফল।

গত ২০ অক্টোবর ৩০ মিনিটের জন্য ব্যক্তিগত ওই বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছিল, যা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। বাইডেন মুসলিম নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েন; তাদের কথা শোনেন এবং তাঁর নিজস্ব মনোভাব প্রকাশ করেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির মুসলিম ভোটারদের সংগঠন অ্যামগেজের প্রধান নির্বাহী ওয়াল আলজায়াত জানান, (ইসরায়েলের) পাল্টা আক্রমণের ক্ষেত্রে ভুল থাকতে পারে বলে স্বীকার করেছেন বাইডেন। তিনি তাদের কথা শুনেছেন এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে আরও ভালো কিছু করার অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের মানবিকীকরণের ক্ষেত্রে।

ওই বৈঠকে ছিলেন মিনেসোটা রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল কেইথ অ্যালিসন। তিনি বলেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ মার্কিনিদের ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। মুসলিম নেতারা বলেছেন, চরম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে নিরপরাধ গাজাবাসী টিকে থাকার লড়াই করছেন। গাজার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষী হামলা উস্কে দেবে। বৈঠক শেষে বাইডেন এক নারীর সঙ্গে কোলাকুলি করেন। কয়েক বছর আগে ওই নারী ইসলামবিদ্বেষী হামলায় তাঁর ছেলেকে হারিয়েছিলেন।

এদিকে রয়টার্স জানায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে ফোনালাপে গাজায় যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার গাজা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকের আগের দিন মঙ্গলবার তিনি এ ফোনালাপ করেন। ফোনালাপে এরদোয়ান ও গুতেরেস ইসরায়েলের বেআইনি হামলা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের চোখে চোখ রেখে ইসরায়েল অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধ ও মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে। জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহও গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

দুই দফায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয় গতকাল বুধবার। এ পরিস্থিতিতে সময়সীমা আরও বাড়ানো নিয়ে কাতারের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। এর আগে শুক্রবার সকালে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যা চলে সোমবার পর্যন্ত। পরে মঙ্গল ও বুধবার পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ ৩০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ১০ ইসরায়েলি ও দুই বিদেশি নাগরিককে মুক্তি দেয় হামাস। ফিলিস্তিনিয়ান প্রিজনার্স সোসাইটির (পিপিএস) উদ্ধৃতি দিয়ে আলজাজিরা জানায়, বুধবার আরও ৩৫ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৩২৫ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চললেও অধিকৃত পশ্চিম তীরে হত্যা ও ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় বুধবার আরও দুই ফিলিস্তিনি শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদলু জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের বেইতুনিয়া শহর গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল বাহিনী।