
অনলাইন ডেস্ক : একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শক্ত অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। গত ২৪শে মার্চ, শুক্রবার কানাডার রাজধানী অটোয়ায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে উভয় দেশের নেতারা এ বিষয়ে আলোচনা করেন। গণতান্ত্রিক শক্তি জোরদারকরণ এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, একনায়কতান্ত্রিক জোটের মোকাবেলা ছিল এ বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। মস্কোয় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের কয়েক দিনের মধ্যেই বাইডেন-ট্রুডোর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, গত ২৩ শে মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট দু’দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে কানাডায় আসেন।
রুশ অভিযানের বিরুদ্ধে বাইডেন ও ট্রুডো দু’জনই ইউক্রেন ও ন্যাটো জোটের প্রতি তাঁদের অটল প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুত্বরোপ করেন। বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন বিষয়ে তাঁরা চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানকে পশ্চিমা দেশগুলো আগ্রাসন হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট ও রুশ প্রেসিডেন্টের বন্ধুত্ব প্রকাশ পেয়েছে এবং দুই নেতাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো ও বাইডেন চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক ও সহযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারণ চীন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে কোনো অস্ত্রই সরবরাহ করেনি। বাইডেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো, জি৭, দক্ষিণ কোরিয়া ও কোয়াডকে (যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান) নিয়ে মিত্রতা বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা উল্লেখযোগ্যভাবে আমাদের জোট স¤প্রসারণ করেছি। চীন রাশিয়াকে কী প্রতিশ্রুতি দিতে পারে? ন্যাটো অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা।’
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রæডো বলেন, ‘আজ আমরা ইউক্রেনের জনগণের প্রতি আমাদের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। কারণ তারা পুতিনের নৃশংস ও বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করছে।’ ট্রুডো জানান, সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আইবিএমের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে। কানাডায় ব্যাটারি ও বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি (ইভি) উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত খনিজের প্রাচুর্য রয়েছে। তবে চীন বর্তমানে বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। ট্রুডো খনিজ ব্যবহার ও প্রযুক্তি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজেট প্রস্তুত করছেন। আগামী মঙ্গলবার সেটি প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রুডো বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা ও চীনের দৃঢ় উত্থানে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা উত্তর আমেরিকায় বাজার গড়তে সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে সৌর প্যানেল ব্যাটারি সবকিছুতে একে অন্যের দিকে ঝুঁকছি।’ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেমিকন্ডাক্টরে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য মার্কিন ও কানাডিয়ান কোম্পানিগুলোয় ৫ কোটি ডলার ঘোষণা করেছেন বাইডেন। আর কানাডা নিকটবর্তী মেয়াদে সেমিকন্ডাক্টর প্রজেক্টে ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় করবে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, দুই দেশ ক্লিন পাওয়ারের ওপর নজর দিয়েছে এবং এনার্জি ট্রান্সফরমেশন টাস্কফোর্সের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা তাদের অভিন্ন স্থল সীমান্ত দিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত অতিক্রম বন্ধ করার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম অভিন্ন স্থল সীমান্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার। নতুন চুক্তিটি সীমান্তে অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধে কাজ করবে। চুক্তি অনুযায়ী, অবৈধভাবে পার হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত দেয়া হবে। ইতোমধ্যে কানাডা ১ হাজার ৫০০ অভিবাসী ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। সূত্র ঃ খবর রয়টার্স ও সিএনবিসি