আকতার হোসেন : গেল বছর থেকে রুমানার একই কথা, পড়ালেখা আর ভাল লাগছে না, আমাকে ঘরে তুলে নাও। প্রতি সপ্তাহেই নাকি তার বিয়ের প্রস্তাব আসছে। সত্য-মিথ্যা যাচাই করার কোন প্রয়োজন দেখেনি শাকিব। অস্থায়ী এক চাকরির ভরসায় শাকিব বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল রুমানাদের বাসায়।

মিসেস চৌধুরীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাড়তে মোটেই বাধল না শাকিবের। বন্ধুর মা তিনি। যখনই ওই বাসায় গিয়েছে তখনই ছেলের মত যত্ন করে খাইয়েছেন। তবুও বিয়ের প্রস্তাব শুনে মিসেস চৌধুরী এমন আচরণ করতে লাগলেন যে শাকিবকে কখনও চিনতেনই না। খুব অপমান বোধ করলো শাকিব।

চৌধুরী সাহেব সেখানে উপস্থিত থাকলেও তিনি ছিলেন নির্বাক। পরিবারটির নিয়মনীতি এরকমই, মিসেস চৌধুরীর হাতেই সব নিয়ন্ত্রণ। বাবা-মা’র সামনে রুমানা মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারলো না। এ দৃশ্য শাকিবকে আরো বেশি অবাক করলো। রুমানাকে সামনে দাঁড় করিয়ে মিসেস চৌধুরী শাকিবকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যে হুট করে বিয়ে করতে চাইছো, তা বাবা তোমার বেতন কত?

পুনঃপুনঃ একটা প্রশ্ন এমনভাবে করা হলো যার সন্তোষজনক উত্তর শাকিবের জানা ছিল না। শাকিবের নীরবতার মধ্যে থেকে টেনেটুনে তার দুর্বলতাকে তুলে নিয়ে এলেন মিসেস চৌধুরী। মনের মানুষটির সামনে শুধু নিম্ন আয়ের জন্য অপমানিত হতে হচ্ছে, কি করে শাকিব এ পরিস্থিতির সামাল দেবে।

এর পরেও অনেক কাণ্ড ঘটে গেল। মিসেস চৌধুরীর অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো এভাবে। একটা অস্থায়ী চাকরির জোরে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করতে এসেছে। যে-বাড়ির গেটের ভিতর দিয়ে নিচু হয়ে ঢুকতে হয়, সে-বাড়ির মেয়ে হবে তোমার স্ত্রী! বাড়ির বাইরে গেট কি আমরা সাধে লাগাই? গরু-ছাগল চোর-ডাকাত নানান বিপদ থেকে নিরাপদে থাকার জন্যই আমরা বাড়ির বাইরে গেট লাগিয়ে রাখি। এই যে, এই মুহূর্তে তুমিও একটা বিপদ হয়ে ঘরের ভেতর বসে আছ সেটাই বা কম কিসে? তোমাদের বংশের সকলে মিলেও যদি রোজগার করতে পথে নেমে যাও তবুও টাকাপয়সা এমনকিছু কামাতে পারবে না যা আমরা এখনি আমাদের মেয়ের পেছনে খরচ করছি। রুমানাকে যদি সত্যি সত্যি তোমার পছন্দ হয়ে থাকে, যাকে তুমি নাম দিয়েছ ভালোবাসা, তাহলে মাসে মাসে ওর নামে ফুল কিনে হাইকোর্টের মাজারে গিয়ে রেখে এসো। তোমার বেতনের টাকায় সেটা হয়তো কুলাতে পারবে। ভালোবাসলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন চিন্তা মাথা থেকে হটিয়ে কেরানি বাবার সংসারের হালটা শক্ত করে ধরো গিয়ে। রুমানা তোমার চোখের সামনে থেকে এই মুহূর্তে চলে যাবার পর আর কোনদিন ওর দিকে ফিরেও তাকাবে না। এটাই তোমাদের শেষ দেখা।
শাকিব ঘরে ফিরে এসে মায়ের কোলে মাথা গুঁজে বসেছিল। ওর মা’ও চাইছিল ছেলেটা যেন আরো কিছুক্ষণ এভাবেই বসে থাকে। ছোট ছেলে হেলাল তখন পাশেই দাঁড়ানো। জন্ম থেকেই ছোট ছেলে হেলাল মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। মহল্লার লোক ওকে পাগল বলে ডাকে।

ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শাকিবের মা বলল, এখন উঠে হাতমুখ ধুয়ে আয়, খাবার বেড়ে দিচ্ছি, খেয়ে ঘুমিয়ে নে। সকাল হলে দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। শাকিবের চোখ আর কোনদিন সকাল দেখেনি। ঘরে ফেরার আগে সেই ব্যবস্থাটুকু সে করে এসেছিল। মায়ের কোলে মাথা গুঁজে পৃথিবীর শেষ সুখ পেতে চেয়েছিল কাল রাতে। নিজ হাতে আত্মহত্যার দলিলে শুধু একটা কথাই লিখে গিয়েছিলÑ ‘বাবা তোমার বেতন কত?’
যে সংসারটা আগে থেকেই নিম্ন আয়ের ছিল, ধীরে ধীরে রূপ পরিবর্তন হয়ে তার নাম হলো অভাবী পরিবার।

ছোট ছেলে হেলাল এখন সম্পূর্ণ যুবক। ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক কারণ সে’ই হয়তো অনুভব করতে পেরেছিল। যারা সুস্থ মানুষ তাদের কেউ কথাটার ভেতর ঢুকতে পারেনি। অথবা পারলেও মনে ধরে রাখেনি। লোকমুখে শুনে শুনে কথাটা হেলালের মাথায় স্থায়ী হয়ে গেছে। কাজেই হেলালের পাগলামির বুলি ওই একটাই- বাবা তোমার বেতন কত?
পরিচিত অপরিচিত যাকেই পছন্দ হবে তার হাত টেনে একই কথা বলতে থাকবে। একবার, দু’বার, তিনবার, তারপর হাত ছেড়ে দেবে। প্রশ্নের শুরুতে স্বভাবসুলভ একটা হাসি থাকলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার প্রশ্ন করার সময় একটা হাত ঢাল বানিয়ে মুখের উপর তুলে রাখবে, যাতে কিল চড় মুখে না লেগে হাতের উপর দিয়ে উড়ে যায়। পাগলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়াকে অনেকেই প্রয়োজন মনে করে না, তবুও হেঁটে হেঁটে তার একই প্রশ্ন করা। যতক্ষণ ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব না করবে ততক্ষণ সে এগিয়ে যাবে, ক্ষুধার টান পড়তেই বাড়িমুখো হবে। ফেরার পথেও দেখে-শুনে প্রশ্ন করতে থাকবে। চেনা মানুষজন তাকে কিছু বলে না। বেতন পাগলকে তারা স্নেহ করে। কেক বিস্কুট কিনে দেয়। কারোটা সে নেয়, কারোটা ফেলে দেয়। তবে অপরিচিত লোকজন তাকে বেশ উত্যক্ত করে। বকাঝকা তো ভাল, কেউ কেউ হেলালকে ড্রাইভারের হাতেও তুলে দেয়। ক্ষুধার চাপে ঘরমুখো হেলালের প্রশ্নের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে গিয়ে বাড়তে থাকে চলার গতি। ক্ষুধা যত বাড়ে ততই ত্বরান্বিত হয় কদম ফেলা। প্রায়সময় বাড়িতে ফিরে আসে দৌড়াতে দৌড়াতে; ঘরে ঢুকে গেলে বাইরের বেলাটাও বেশিক্ষণ টিকে থাকে না। ক্ষুধা আর অন্ধকার এ-দু’টোর আগমনে তার সব প্রশ্ন হারিয়ে যায়। দু’টোকেই তার ভীষণ ভয়।

ঘরে ঢুকে বাবাকে কোনদিনই কিছু জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু মাকে ছাড় দেয় না। মায়ের হাত টেনে টেনে বলবে, বাবা তোমার বেতন কত। ওর মায়ের উত্তর একেক দিন একেক রকম; কোনদিন বলবেন একশো টাকা, কখনো লাখ টাকা। আজ বললেন, আমার বেতন জেনে তোর কোন লাভ নেই, আমি পেটে-ভাতে কাজ করি। আয়, ভাত খেতে আয়।
একদিন সোনারূপার পাত দিয়ে বানানো বিশাল একটা খোলা গেট দেখে চট করে ভেতরে ঢুকে পড়ল হেলাল। আনোয়ার উল্লাহ্ নামক একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা থাকেন এ-বাড়িতে। সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার উল্লাহ্ সকালে অফিসে যাবার জন্য বের হয়েই দেখেন একটা কাটা ঘুড়ি তাদের কদম গাছের উপর ঝুলছে। তাই দেখে তিনি সিকিউরিটিকে এমন জোরে হাঁক দিলেন, মনে হলো যেন কামান দাগছে। এ-গাছটা যে ঘুড়ি-গাছ নয়, কদম ফুলের গাছ, কথাটি খুব অল্প বাক্য ব্যয় করে আনোয়ার উল্লাহ্ সিকিউরিটির ছেলেটাকে বুঝিয়ে দিলেন। এ-বাড়িতে খুব বেশিদিনের ডিউটি না হলেও আজমান নামের এই যুবকটি ইতিমধ্যে জেনে গেছে যে আনোয়ার উল্লাহ্ অসম্ভব ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু তার দাপটের কোনো কমতি থাকে না। আজমান সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকলো। আনোয়ার উল্লাহ্র আদেশ যদি এমন হয়, কদম ফুলের গাছের উপর বসে থাকা কাটা ঘুড়ি মালিককে দশ মিনিটের মধ্যে এনে দিতে হবে, আজমান সেটা নয় মিনিটেই করে দেখাবে। আনোয়ার উল্লাহ্ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর আদুরে কন্যা সুমি আজমানকে আদেশ দিল অক্ষত অবস্থায় ঘুড়িটা উদ্ধার ক’রে সেটা যেন কোনো গরিব ছেলেকে দিয়ে দেয়া হয়।

যতই ক্ষমতা থাকুক, সুমির কথার উপর কোনো কথাই বলেন না আনোয়ার উল্লাহ্। একটাই মাত্র মেয়ে, মেয়ে যা সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটাই যখন করতে হবে তাহলে আর দেরি করে কি লাভ। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময় আচমকা আনোয়ার উল্লাহ্র হাত টেনে হেলাল বলতে লাগলো, বাবা তোমার বেতন কত? আল্লাহ্ প্রদত্ত ফেরেস্তা ছাড়া এমন কাজ ইহজগতের কারো পক্ষে করা অসম্ভব। নিজ বাড়ির গেটের ভেতর আনোয়ার উল্লাহ্র হাত ধরে টানা, তা’ও আদুরে কন্যার সামনে! এই অপরাধের শাস্তি হাবিয়া দোযখেও হবার কথা নয়। হেলাল প্রথা অনুযায়ী তিনবার প্রশ্নটা করতে ব্যর্থ হলো। দ্বিতীয়বার একই কথা বলেছে কি অমনি প্রচণ্ড একটা ঘুষি এসে পড়ল হেলালের ঠোঁটের উপর। কয়েক সেকেণ্ড আগে ঘুড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে আজমানকে ঠিকমত শায়েস্তা করতে না পারার ক্রোধ তখনো বহমান। সময় নষ্ট হলে সুমি কি বলতে কি বলে ফেলে তাই ঠোঁট কেটে রক্তঝরা মুখের উপর আরো কয়েকটি বজ্রাঘাত ক’রে ফেললেন আনোয়ার উল্লাহ্। রক্তাক্ত অবস্থায় হেলাল সবুজ ঘাসের উপর গড়াগড়ি করতে লাগল। আনোয়ার উল্লাহ্ ছোটবেলায় যেভাবে ফুটবল খেলতেন ঠিক সেভাবেই মানব বল দিয়ে খেলতে শুরু করে দিলেন। আজমান খেলোয়াড় এবং বলের পিছু পিছু এমনভাবে ঘুরতে লাগলো যেন হাই-কিক্ খেয়ে মানব বল উপরে উঠে না যায়। তেমন কিছু অবশ্য হলো না। খেলাতে স্বভাবতই হেলাল পরাস্ত।

বাবার আচরণটি নিয়ে সুমি সারাদিন ভেবেছে। সামান্য লঘু অপরাধের শাস্তি এত বড় হলো কেন? পাগল ছেলেটির মুখ থেকে বেরিয়ে আসা তাজা রক্ত যেমন সুমিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, সাথে সাথে সুমি এ’ও ভেবেছে আজমান যখন পাগল ছেলেটাকে বের করে দিতে চেষ্টারত, তখন সে আজমানকেও একই প্রশ্ন করে বসল। এত বড় ঝাপটা বয়ে গেল অথচ সেদিকে কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই। প্রশ্ন করাটাই যেন একমাত্র লক্ষ্য। অজানা অচেনা একটা লোকের প্রশ্ন মুখে মুখে কয়েকবার উচ্চারণ করার কারণে সুমির মাথার ভেতর সেটা গেঁথে যেতে লাগলো। আবছা আবছা ক’রে সুমির মনে পড়ল ছোটবেলার কথা। ছোট একটা গলিতে তিন কামরার ঘরে থাকত ওরা। সেখান থেকে গিয়েছিল আজিমপুরের হলুদ কলোনীতে। খেলার সরঞ্জামের মধ্যে ছিল মাটির চারা দিয়ে কুত্কুত্ খেলা, দড়ি লাফানো আর বৃষ্টির দিনে লুডু খেলা। ঝট্পট্ সুমির বাবার কতগুলো পদোন্নতি ও বদলির কারণে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করলো। যে কোনো ন্যায়নীতির পক্ষের সরকারি কর্মকর্তার জীবনে উন্নতি আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়, তার বাবা একজন সৎ পুরুষ। অনেক লোক তার ব্যক্তিত্বের কারণে তাঁকে অনুসরণ করে চলে। বাবাকে নিয়ে সুমির বেশ গর্ব। তবুও একটি সন্দেহ দূর করতে সুমি তার বন্ধু সমতুল্য একজন সিনিয়র ভাইকে ফোন করলো রাত দশটায়।
বি.সি.এস. পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের জন্য বসে আছে অনীক। খুবই মেধাবী ছাত্র। বিদেশের বড় বড় স্কলারশীপ যারা অনায়াসে পায়ে ঠেলে দেয় সেই জাতীয় যুবক। খুবই দেশজ। রাত দশটার সময় সুমির ফোন আসাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তবুও সুমির গলা শুনে অনীক একটু ঘাবড়িয়ে গিয়ে বললো, কি খবর রাজকন্যা? অনীক সুমিকে রাজকন্যা বলেই ডাকে। সুমি একটা গল্প আঁটলো। সে বললো, তার এক মামাতো বোনের বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। গরিব মামার মেয়ে, সারাজীবন কষ্ট করেছে। যার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে সে একজন সদ্য চাকরিলব্ধ সরকারি কর্মকর্তা। তার এই মামাতো বোনটা কি গরিব বাবার ঘরে থেকে গরিব স্বামীর ঘরে যাচ্ছে? সুমির উৎকণ্ঠার জবাবে অনীক বললো, সরকারি চাকরিজীবীদের টাকাপয়সার কি কোন কমতি আছে? একটু অসৎ হলেই তো মুঠি ভরা টাকা।

  • অনীক ভাইয়া, তুমি কি করে বুঝলে আমার মামাতো বোনের হবু স্বামী অসৎ লোক? তুমি নিজে কি অসৎ হতে পারবে?
  • তাহলে তো তোর বোনের বারোটা বেজে গেছে। জোড়াতালির জীবন থেকে সে আর বের হতে পারলো না। পারলে বিয়েটা ঠেকিয়ে দে।
  • কি সব বলছো, সরকারি অফিসাররা কি সব বিনা বেতনে চাকরি করে নাকি?
  • তুই কি সরকারি পে-স্কেলটা বুঝিস?
    সুমির গল্প বলাটা এতক্ষণে কাজে লাগলো। এখন সে আসল আলাপে ঢুকলো। সুমির প্রশ্নের কারণে অনীককে বাংলাদশ সরকারের পে-স্কেলটা বুঝিয়ে বলতে হলো।
  • দাঁড়াও দাঁড়াও, কি সব কঠিন ফিগার। একটু নোট করে নিতে হবে। অনীকের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তার বাবার আনুমানিক বেতন কত হতে পারে সেই ফিগারের উপর আঙুল রেখে একদম আকাশ থেকে পড়লো সুমি।
  • অনীক ভাইয়া, তোমার কথা সত্যি হলে বাবার বেতনে আমাদের সংসার চলার কথা বড়জোর এক কি দু’ঘণ্টা!
  • এই মেয়ে, তুই তো হলি এ-যুগের রাজকন্যা! রাজকন্যাদের সংসার কি বেতনের টাকায় চলে?
  • তার মানে, আমার বাবা…!
  • হঠাৎ তুই তোর বাবার বেতনের পেছনে লাগলি কেন? তোর বাবা কি তোকে কম সুখে রেখেছে? সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়ায় তোর নামে দু’টো ফ্ল্যাট বাড়ি, চিটাগংয়ে তোর নামে পাহাড় কেনা আছে, তুই এত ছাইপাঁশ হিসেব করছিস কেন?
  • শুধু তাই নয় অনীক ভাইয়া, বাবা আমাকে দিয়ে তিনবার তিনটি বিদেশি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউণ্ট খোলার ফর্মে সই করিয়ে নিয়েছে। তার মানে বিদেশি ব্যাঙ্কেও আমার নামে প্রচুর টাকা আছে।
  • সেজন্যই তো বলি, আমাকে বিয়ে র্ক। তোর টাকা-পয়সায় আমি দেবদাসের মত শুধু মদ গিলবো আর নাচ দেখবো।
  • অনীক ভাইয়া ঠাট্টা রাখ। আমি তোমাকে একটু পরে আবার ফোন করছি। এখন রাখি।
  • এই শোন্ শোন্ …।
    না, সুমি আর কোনো কথাই শুনলো না। সারারাত সে বাতি নিভিয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারি করে বেড়ালো।

পরের দিনে সকালে সুমি তার বাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্ন করার অনুমতির অপেক্ষায়। আদুরে মেয়ে কত ভদ্র-নম্রভাবে বড় হচ্ছে সে-কথা উপলব্ধি ক’রে আনোয়ার উল্লাহ্ নিজেকেই বাহবা দিতে লাগলেন। সুমির কিছু বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। কারো কারো ঘরে ফুটফুটে সন্তান এসেছে। সঠিক রাজপুত্রের সন্ধান মেলেনি তাই সুমির বিয়েটা এখনো হয়নি। যে কুমারী মেয়ের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি সে কিনা একটা প্রশ্ন করার জন্য অনুমতি চেয়ে অপেক্ষা করছে। সুশিক্ষা দিলে যে কি ফল পাওয়া যায় সুমি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

  • বলো মা, কি জানতে চাও, এই বলে আনোয়ার উল্লাহ্ তার পাশে এসে মেয়েকে বসতে বললেন। সুমি আগের জায়গাতে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো জ্জ বাবা, তোমার বেতন কত ?
    আকাশ থেকে বড়শি ফেলে কে যেন সুমির মা’র চোখ টেনে ধরলো। একটা সিংহের গর্জনে এখনি যেন সমস্ত পাখির ডিম ফেটে যাবে, এ পৃথিবী পাখি-শূন্য হবে, ভয়ে তিনি একটা কেঁচোর মত এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন। আনোয়ার উল্লাহ্ কি ভুল কিছু শুনেছেন, নাকি গতকালকের সেই ছেলেটার প্রশ্ন এখনো কানের ভেতর ঘুরঘুর করছে? (চলবে)