অনলাইন ডেস্ক : সরকারবিরোধীদের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ চলছে।নির্বাচন বর্জন করা ৬৩ টি দল সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। যুগপৎ ধারায় তিনটি প্লাটফর্ম থেকে এবারের আন্দোলন করা নিয়ে আলোচনা চলছে এসব দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে।বরাবরের মতোই বিএনপি এই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকবে।

বাম, ডান, মধ্যপন্থি ও ইসলামি ৬৩ টি দল আন্দোলন সফল করতে আরও কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে। করণীয় নির্ধারণ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ভার্চুয়ালি অথবা সরাসরি বৈঠকও করছেন তারা। সেখানে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি পালনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

একই দাবিতে এক মঞ্চে নয়, যুগপৎ ধারায় তিন প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলনে নামার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ২৬ ডিসেম্বরের পর যে কোনো সময় তাদের আন্দোলনে দেখা যেতে পারে। এজন্য বিএনপিসহ অন্তত দশটি দলের প্রতিনিধিরা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র আরও জানায়, বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটের পাশাপাশি যুগপতে না থেকে একই কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতে ইসলামী। আগামীতে তারা একসঙ্গে নামার বিষয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। তাদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাম কয়েকটি দল ছাড়া নির্বাচন বর্জন করা ইসলামিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও মাঠে নামার বিষয়ে কথা চলছে। ইসলামী আন্দোলন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আন্দোলনে থাকছে। এছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদও আরেক প্ল্যাটফর্মে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে থাকবে। এ নিয়ে দলগুলো প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে কিছু জানাতে চাইছে না। বিএনপি নেতাদের মতে-নির্বাচনি ট্রেন মূলত ১৮ ডিসেম্বর থেকে চলবে। তফশিলের পর নির্বাচনি ট্রেন চলার কথা থাকলেও তা এখন থেমে আছে। ট্রেনের টিকিট বিক্রি চলছে। এ টিকিট কেউ কেউ পাবেন না, আবার পেলেও বসতে অস্বস্তিবোধ করবেন। তাই রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন তারা। পরে এ উদ্যোগের বিষয়ে আন্দোলনের মাঠই সবকিছু স্পষ্ট করে দেবে।

প্রায় দেড় মাস ধরে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমমনা দল এবং জামায়াতে ইসলামী। বুধবারের পর থেকে একই কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছে দলগুলো। সোমবারের আগে জাতীয় দিবসের কর্মসূচি ছাড়া কোনো কর্মসূচি নেই। এ সময়ে দলকে আরও সংগঠিত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। সাংগঠনিক জেলার পর এখন সাবেক সংসদ-সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। পাশাপাশি আন্দোলনের বিষয়ে নির্বাচন বর্জন করা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। দাবি আদায়ে সমন্বয় ও ঐক্যের ওপর জোর দিচ্ছেন দলটির হাইকমান্ড। ১৮ ডিসেম্বরের পর দ্বিতীয় পর্বের কর্মসূচি শুরু করার কথা রয়েছে। যে আন্দোলনে কর্মসূচির ধরন কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে। ২৬ ডিসেম্বরের পর ‘অলআউট’ কর্মসূচি নিয়ে দাবি আদায়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যেসব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে, তার মধ্যে কিছু রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে আছে। আর কিছু আছে যুগপৎ আন্দোলনে নেই। প্রথম তো সবাই যুগপতে হয়তো যুক্ত হবে, তারপর যদি সবাই আলোচনা করে মনে করে কাঠামোর পরিবর্তন দরকার সেটা করতে হবে। এখন হাতে সময় কম। কিন্তু সবাই যারা আন্দোলনে আছে তারা আলোচনা করে যদি মনে করে যে আন্দোলনের ধরনের কিছু পরিবর্তন আনা দরকার সেটা তো হতেই পারে।’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মাঠে একই রকম কর্মসূচি দিচ্ছে। সেটা আমাদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই কর্মসূচি সেট করছি। যেহেতু নির্বাচন এগিয়ে আসছে, স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন আরও জোরদার হবে। সেক্ষেত্রে আরও কত কাছাকাছি থেকে আন্দোলন করা যায়, সেই বিষয়টি আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।’

প্রায় একই ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করছে চরমোনাইর পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারাও আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে আন্দোলন করছি। একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে যত রাজনৈতিক দল আছে, কিভাবে আন্দোলন গতিশীল করা যায় সে বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও হবে। দাবি আদায়ে আমরা আশাবাদী। কারণ জনগণ তো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছে।’