অনলাইন ডেস্ক : বছরের শেষ দিকে এসে বিদেশে নতুন তেল ও গ্যাস প্রকল্পের সরকারী অর্থায়ন বন্ধ করে কঠোর নতুন নীতি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে অটোয়া। গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত নতুন নীতিটি সমস্ত ফেডারেল বিভাগ, ক্রাউন কর্পোরেশন এবং পাবলিক এজেন্সি সহ বিশেষ করে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কানাডার (ইডিসি) জন্য প্রযোজ্য হবে।
ন্যাচারাল রিসোর্সেস কানাডা (এনআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত এজেন্সির কাছে বর্তমানে আন্তর্জাতিক জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রæতিবদ্ধ ২.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন রয়েছে – যেটি নবায়ন করা হবে না। নতুন এ নীতি কানাডার বাইরের সমস্ত তেল ও গ্যাস কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে; এ ক্ষেত্রে কোম্পানির সদর দপ্তর যেখানেই থাকুক না কেন। তবে গুরুত্বপূর্ণভাবে বিদ্যমান জীবাশ্ম জ্বালানী সুবিধার জন্য ডিকার্বনাইজেশন প্রকল্পগুলোকে বাদ দেওয়া হবে।
তবে সরকার বলেছে, কিছু অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলোকে ছাড় দেওয়া যেতে পারে, যদি তারা কঠোর মানদণ্ড পূরণ করে যেখানে এই প্রকল্পের জন্য কোনও কার্যকর নবায়নযোগ্য বিকল্প নেই। যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ প্রায় ৪০টি দেশের পাশাপাশি গত বছর কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে কানাডা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা কীভাবে পূরণ করবে তা নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বছরের ফেডারেল বাজেটে অটোয়া ২০২৩ সালে তেল, গ্যাস এবং কয়লা কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত সম্পদ ব্যয়ের জন্য নির্দিষ্ট ট্যাক্স ছাড় বাদ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়াধীন নয়টি অন্যান্য ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা করেছে। এর আগে অটোয়া গার্হস্থ্য জীবাশ্ম জ্বালানী প্রকল্পের সকল সরকারী অর্থায়ন বন্ধ করতে তার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিলো। এ ছাড়াও ইঙ্গিত দিয়েছিলো যে, আগামী বছরের শুরুর দিকে আরও বিশদ কর্মপরিকল্পনা আসছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, নতুন জারি করা নির্দেশিকাগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি সংক্রান্ত কানাডা সরকারের ভবিষ্যত গার্হস্থ্য কাঠামোর থেকে আলাদা এবং তা পূর্বনির্ধারিত নয়। সরকার স্বীকার করে যে অদক্ষ জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি অভ্যন্তরীণভাবে দূর করার জন্যও কাজ করা উচিত এবং ২০২৩ সালের প্রথম দিকে অতিরিক্ত উল্লেখযোগ্য জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি বাদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা পূর্বে সতর্ক করেছেন যে, নীতিটি নতুন প্রকল্পগুলো স¤প্রসারণ করতে চাওয়া তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলোর জন্য মূলধনের ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি একটি উদ্বেগের কারণ, যা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।
ইডিসি বলেছে যে, এটি ২০২১ সালে ৬.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির বার্ষিক অর্থায়ন প্রসারিত করবে।
নতুন নীতিকে পরিবেশবাদীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বিশ্ব উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করার জন্য ধনী দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পগুলোতে সাহায্যকারী পুঁজির প্রবাহকে আটকানো গুরুত্বপূর্ণ।
এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্সের জাতীয় জলবায়ু প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়া লেভিন বলেছেন, কানাডা হল জি২০-এর সবচেয়ে খারাপ জীবাশ্ম জ্বালানী অর্থদাতাদের মধ্যে একটি। আমরা শীর্ষে এক বা দুই; তাই এটি আমাদের জলবায়ু প্রতিশ্রুতির জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন তেল ও গ্যাস প্রকল্পগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়া বন্ধ করব।
বিজ্ঞান খুব স্পষ্ট, আইইএ (আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা) খুব স্পষ্ট; জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য যে কোনও অর্থায়ন তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ করার সাথে বেমানান, বলেন লেভিন। লেভিন বলছিলেন যে, তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল নতুন নীতিতে ভাষার ব্যবহার। যা “কানাডার অথবা এর মিত্রের জ্বালানি সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করা সহ” জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তিতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর জন্য দরজা খোলা রাখতে পারে। এর ফলে লেভিন মনে করেন যে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি প্রকল্পের সমর্থকরা শোষণের চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে সরকার এই ত্রুটিগুলো ব্যবহার করে সত্যিকারের একটি শক্তিশালী নীতি লঙ্ঘন বা অবমূল্যায়ন করছে না।” সূত্র : ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট