Home জাতীয় বিদেশ ফেরতদের তারকা হোটেলে কোয়ারেন্টিন

বিদেশ ফেরতদের তারকা হোটেলে কোয়ারেন্টিন

অনলাইন ডেস্ক : ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। দেশেও বাড়ছে সংক্রমণের হার। এর মধ্যে যোগ হয়েছে করোনার শক্তিশালী একটি ধরন। যুক্তরাজ্যে করোনার যে নতুন রূপ পাওয়া গেছে, তার কাছাকাছি শক্তিশালী ধরনের অস্তিত্ব মিলেছে বাংলাদেশেও। এ অবস্থায় শীত মৌসুমে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে সরকার। প্রথম ঢেউয়ের ভুলত্রুটি বিশ্লেষণ করে প্রণয়ন হচ্ছে কর্মপরিকল্পনাও। এর অংশ হিসেবেই একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়নে হার্ডলাইনে যাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর আদলে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে এবং তাদের মাধ্যমে অন্যরা যেন আক্রান্ত না হন সে লক্ষ্যে দেশের কয়েকটি তারকা মানের হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এ সিন্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশ ফেরত যাত্রীরা দেশে নামতেই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ খরচে উন্নত মানের (টু-স্টার, থ্র্রি-স্টার, ফাইভ-স্টার) হোটেলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টেনে থাকার সুযোগ পাবেন।

ওই হোটেলেই তাদের থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হবে। কোনো যাত্রী হোটেলে যেতে না চাইলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য পাঠানো হবে সরকার নির্ধারিত দিয়াবাড়ি বা হজক্যাম্পে। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ওই মিটিংয়ে অংশ নেওয়া বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের যাত্রীরা বাংলাদেশে ঢুকলেই তাদের যেতে হবে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। তবে বিদেশি বা বাংলাদেশি বিত্তশালীদের স্বাচ্ছন্দ্যে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থার অংশ হিসেবে দেশের কয়েকটি তারকা হোটেলে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেহেতু তারা পশ্চিমা বিশ্বের লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত। বিমানবন্দরে অবতরণের পর যাত্রীদের ইচ্ছা বা আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন তারকা হোটেলে পাঠানো হবে। সেখানে গিয়েই স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের করোনা স্যাম্পল সংগ্রহ এবং আনুসাঙ্গিক সেবা প্রদান করবেন। কোনো যাত্রীর করোনা পজিটিভ হলে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতালে পাঠানো হবে। যাত্রীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থার দেখভালে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষিত সদস্যরা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় সংক্রান্ত ওই সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে বাংলাদেশে এলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও সব বিদেশিকে নেওয়া হবে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে। ১৪ দিনের সতর্কতামূলক এ ব্যবস্থার সব খরচও বহন করতে হবে নিজেদের। এটি বাস্তবায়নের জন্য দেশের কয়েকটি তারকা হোটেলের সঙ্গে চুক্তিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

অন্যদিকে বিদেশফেরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সরকারি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র। সেখানে সরকারই তাদের খরচ বহন করবে। তবে প্রবাসীদের কেউ তারকা হোটেলে কোয়ারেন্টিন করতে চাইলে নিজেকেই বহন করতে হবে সব খরচ। আর কোয়ারেন্টিন এড়াতে কারও পক্ষে যদি তদবির আসে, তা হলে উভয়ের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, দেশের সব বন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্নের পর থাকবে চুক্তিবদ্ধ হোটেল ও কোয়ারেন্টিন সেন্টারের তালিকা। সে অনুযায়ী আগতরা নিজেদের পছন্দমতো হোটেলে উঠতে পারবেন। ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন সম্পন্নের পর রিয়েল টাইম পিসিআর টেস্ট হবে। তাতে করোনা নেগেটিভ এলেই কেবল মিলবে মুক্তি। যদি পজিটিভ আসে তা হলে আরও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন ও চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বিমানবন্দরে করোনার সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাইয়ে বসেছে বার কোড স্ক্যানার। খুব সহজেই এতে বোঝা যাবে সার্টিফিকেট আসল না নকল।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ জন্য উন্নতমানের হোটেলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে বিদেশিদের নিজ খরচে থাকতে হবে। আর প্রবাসী বাংলাদেশিরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। আবার ইচ্ছা করলে নিজ খরচে তারকামানের হোটেলেও থাকতে পারবেন। করোনাকালেও বিদেশফেরত যাত্রীরা যেন দেশে ফিরে উন্নত বিশ্বের আদলে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে থাকতে পারেন সে লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Exit mobile version