সৈয়দ ইউসুফ তাকি, অটোয়া: গত ৩ নভেম্বর রোববার কানাডার রাজধানী অটোয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অটোয়া শাখা কর্তৃক যথাযোগ্য মর্যাদায় জেলহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এইচএম কামরুজ্জামান চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং বাংলাদেশ গঠনের তাদের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। এছাড়া সভায় শহীদ জাতীয় চার নেতার আদর্শে দেশ গড়া এবং তাদের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের দাবি জানানো হয়।

অটোয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোমা সাইফুদ্দিন এর উপস্থাপনায় ও অটোয়া আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন – প্রধান অতিথি অটোয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রফেসর ওমর সেলিম শের, কুইবেক আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাজী আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সুইট, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন মিয়া, সৈয়দ মেহেদী রাসেল, ড. মনজুর চৌধুরী, অটোয়া আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নূরুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইফুদ্দিন প্রমুখ। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় একাত্মতা ঘোষণা ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন কানাডা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স।
৩ নভেম্বর ১৯৭৫ – বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেক কলঙ্কিত দিন রক্তক্ষরা জেলহত্যা দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের যে কয়টি দিন চিরকাল কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, তার একটি ৩ নভেম্বর। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে অন্যতমটি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের এই দিনে। বাঙালী জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৪৩ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ জাতির চার মহান সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম পরিচালক, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ সহচর, জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এমন জঘন্য, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

সভায় বক্তারা বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলী- এই চারটি নাম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ চারজনকে বাদ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা অসম্ভব। জাতীয় চার নেতা ছিলেন যেমন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত, তেমনি ছিলেন প্রখর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার অধিকারী।
যে কারাগারকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশ্বের সকল রীতি-নীতি ভঙ্গ করে সেই কারাগারেই রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে গর্জে ওঠে ঘাতকের রাইফেল আর নিমিষেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আমাদের মহান জাতীয় চার নেতা।

এই চার নেতা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন, ভালোবেসেছেন নিজের জীবনের চেয়েও বেশি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আপোস নয়, সমঝোতা নয়, কাপুরুষতা নয়, হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার নজিরবিহীন ইতিহাস তারা বিনির্মাণ করে আদর্শের রাজনীতির এক উজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন বিশ্ব রাজনীতির দরবারে। ক্ষমতার লোভকে দু’হাতে সরিয়ে এবং খুনীদের তীব্র ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে মরণের এই নিশ্চিত আহ্বান ক’জন জানাতে পারেন? বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতার নীরবতা ও আত্মসমর্পণের ঘটনায় যখন সমগ্র জাতি শোকে ও যন্ত্রণায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল, তখন ক্ষমতাকে প্রত্যাখ্যান করে এই জাতীয় চার নেতা ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রমাণ করেছেন কাপুরুষের মতো বাঁচার চেয়ে মৃত্যুতেও গৌরব। এ জন্যই তো রাজনীতির কবি শেখ মুজিবের সঙ্গে সঙ্গে এই জাতীয় চার নেতা বাঙালী জাতির ইতিহাসে এবং বাঙালীর অন্তরের অন্তঃস্থলে চির জাগ্রত, চির অম্লান, চির ভাস্বর। বাঙালী যখন অন্তরের চোখ দিয়ে শেখ মুজিবকে দেখে, তখন শেখ মুজিবের পাশাপাশি আরও চারটি মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই মুখগুলো হলো আমাদের অতি প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় জাতীয় চার নেতার মুখ।
বক্তারা আরো বলেন, ৩ নভেম্বর হত্যাকান্ডের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ অধিকাংশ দন্ডপ্রাপ্ত আসামি এখনও পলাতক, সুপ্রীমকোর্টের রায় এখনও কার্যকর হয়নি।

বাঙালী জাতির ইতিহাসকে পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত করতে হলে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসমিসহ ৩ নবেম্বরের হত্যাকান্ডের দন্ডপ্রাপ্ত সকল পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করতে হবে। এবারের জেলহত্যা দিবসে এটাই জাতির প্রত্যাশা।