অনলাইন ডেস্ক : কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সব বিরোধীতা উপেক্ষা করে এবং সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেশকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পথে ঠেলে দিয়েছেন। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সেখানে ফেডরেল ইলেকশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রোববার সকালে গভর্নর জেনারেল মেরি সিমনের সাথে সাক্ষাত শেষে বের হয়ে তিনি নির্বাচনের এই ঘোষণা দেন। কানাডাতে গত কয়েক মাস ধরেই আগাম নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে- কথার লড়াই চলছিল। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ও এনডিপি নেতা জাগমিতসিংসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা স¤প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যেভাবে নির্বাচনী প্রচারনার আদলে সারাদেশ ভ্রমন করেছেন তা থেকেই আগাম নির্বাচনের ধারণা স্পষ্ট হতে থাকে। এছারা পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকায় ট্রুডো প্রশাসন তাদের পছন্দমত বিলগুলো সংসদে পাস করাতে না পেরে নতুন নির্বাচনের বিষয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছিল। গত বুধবারও এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো বিলম্বিত ও বাতিল করতে বিরোধী কনজারভেটিভ এমপিরা যে কৌশল নিচ্ছে তাতে পার্লামেন্ট অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এসব আইন পাশে এনডিপিও কার্যত সেভাবে ক্ষমতাসিন সংখ্যালঘু লিবারেল সরকারের পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে নতুন মধ্যবর্তী নির্বাচনের পথে হাঁটা ছাড়া সরকারের আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু সাধারন মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই মুহূর্তে কানাডায় আগাম নির্বাচনের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন। তাদের মতে সারা বিশ্বের মতো কানাডা এখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত। দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাত মুখ থুবরে পড়েছে। এর মধ্যে আতংক ছড়াচ্ছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তথা মহামারির চতুর্থ ঢেউ। এমতাবস্থায় ফেডারেল ইলেকশনের ভোট গ্রহণ কতটা যুক্তিযুক্ত হবে তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এসব সমালোচনা উপেক্ষা করে গত রোববার সকালে গভর্নর জেনারেল মেরি সিমনের সরকারি বাসভবন রেদু হলে গিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম সির্বাচনের অনুরোধ জানান। কানাডার প্রচলিত অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের অনুরোধ গভর্নর জেনারেল রক্ষা করে থাকেন। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মেরি সিমন পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহনের তারিখ ঘোষণা করেন।
গভর্নর জেনারেল বাসভবন থেকে বের হয়ে প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে কানাডার জনগণের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা। এবং আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে নির্বাচনে ১৫৭ আসন ও ৩৯% পপুলার ভোট পেয়ে কানাডায় সরকার গঠন করে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি। সংবিধান অনুযায়ী ৪ বছর পর আগামী ২০২৩ সালে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা তবে এর মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে যদি কোন অনাস্থা আসতো এবং সরকার যদি আস্থা ভোটে পাশ না করতো তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সুযোগ ছিল। কিন্তু ট্রুডো সরকার প্রতিটি আস্থা ভোটেই উৎরে গেছে। তাই আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা কেউ ভাবছিল না।

কানাডার সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে গভর্নর জেনারেল পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন অথবা নাও করতে পারেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ রক্ষা করাটাই রেওয়াজ। ১৯২৬ সালে কানাডার ইতিহাসে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ প্রত্যাখান করেছিলেন গভর্নর জেনারেল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম লিন ম্যাকেঞ্জির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে গভর্নর জেনারেল লর্ড জুলিয়ান দেশটিতে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করেছিলেন। ফলে এরপর থেকে আর কেউ সে পথে পা বাড়ায় নি। এবার সরকার গঠনের পর থেকেই পার্লামেন্টে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে সংখ্যালঘু লিবারেলরা। তাই তারা আগাম নির্বাচনের সিদ্ধন্ত নেয়। প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচনের অনুরোধ জানাতে গভর্নর জেনারেলের কাছে যাচ্ছেন এ খবর পেয়ে এনটিপি নেতা জাগমিত সিং প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান। গভর্নর জেনারেলকে লেখা এক চিঠিতে ওই নেতা বলেন, নির্বাচনী আইনেই বলা আছে একটি নির্বাচনের চার বছর পর অক্টোবরের তৃতীয় সোমবার পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সরকার যদি আস্থা হারায় সে ক্ষেত্রে আগাম নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সে ধরনের কোন পরিস্থিতি নেই। তাই এই করোনা মহামারিকালে ভোটারদের আবার ভোটকেন্দ্রে যেতে হয়, প্রধানমন্ত্রীর এমন কোন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অটোয়া ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক ইরোল মেন্ডেস, বলেন, রানীর প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা গভর্নর জেনারেলের রয়েছে। তবে এ বিষয়ে তিনি এনডিপি নেতার অনুরোধ রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না। এ ধরনের কোন সম্ভাবনা নেই। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়নি। দীর্ঘদিনের ধারা বজায় রেখে গভর্নর জেনারেল পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। এরফলে ২ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিদায় নিতে হচ্ছে সংখ্যালঘু লিবারেল সরকারকে। এখন শুরু হবে সংখ্যাগুরু হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার লড়াই। দ্য স্টার ও রেডিও কানাডা