শাহনুর চৌধুরী : রুশ আগ্রাসন মোকাবেলায় ইউক্রেনের জন্য পাঠানো অস্ত্র ‘ভুল হাতে’ অথবা কালোবাজারে চলে যেতে পারে। অথবা এসব অস্ত্র রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বাজেয়াপ্ত করে ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিষেশজ্ঞরা।

কানাডিয়ান বেসরকারি নিরস্ত্রীকরণ গ্রæপ প্রজেক্ট প্লাগশেয়ার্সের গবেষক কেলসি গেলাঘের বলেছেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতি একটি জটিল ও অনিশ্চিত পর্যায়ে পৌঁছানোর সাথে সাথে কানাডিয়ান অস্ত্রের চালান চুরি হওয়া, হারিয়ে যাওয়া বা প্রতিপক্ষের হাতে পড়ে অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ছে। কেউ কেউ সতর্ক করেছে যে, ইউক্রেনে পৌঁছানোর আগেই এ সব অস্ত্রের কিছু অংশ কালো বাজারে চলে যেতে পারে আবার কিছু অস্ত্র রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বাজেয়াপ্ত করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে পারে। কেলসি গেলাঘের বলেন, আসল হুমকি হচ্ছে এই যে, রুশ হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেন সরকার এসব অস্ত্রের চালান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ফলে এগুলো ‘ভুল হাতে’ চলে গিয়ে অপব্যবহার হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কানাডা ইউক্রেনকে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। এসব সাহায্যের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক-সিস্টেম, রকেট লাঞ্চার, হ্যান্ডগান, মেশিনগান ও গোলাবারুদ। এসব অস্ত্র ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে একচেটিয়াভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এসব অস্ত্র শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে বা তাদের শেষ পরিণতি কী হতে পারে তা নিশ্চিত নয়। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া প্রতিদিনই আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি করছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রুশ অগ্রগতির বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব লড়াই করে যাচ্ছে। যুদ্ধের ফলাফল এখনো অনিশ্চিত হলেও পরিস্থিতি যে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই ইউক্রেনের জন্য পাঠানো অস্ত্রের চালান কতটা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষক ড. কোস্তানজা মুসু বলেছেন, ইউক্রেনে পাঠানো অস্ত্রের কিছু চালান ‘ভুল হাতে’ চলে যাওয়ার আশঙ্কা আমরা সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে পারি না। অতীতে এমন ঘটনার অনেক উদাহরণ আছে। মুসু আরো বলেন, গত বছর আফগান সরকারকে উৎখাতের সময় মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে তালেবানদের মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ন্যাটো বাহিনীর জন্য পাঠানো এসব অস্ত্র যে কোন উপায়ে তালেবানদের হাতে চলে গেছে। এছাড়া তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরও বিপুল পরিমাণ মার্কিন অস্ত্রের মজুদ জব্দ করেছে। যুদ্ধের মাঠে এভাইে এক পক্ষের অস্ত্র বেহাত হয়ে যেতে পারে। আফগানিস্তান ছাড়াও অতীতে সৌদি আরব, লিবিয়া ও ইরাকে পাঠানো পশ্চিমা অস্ত্রের চালান হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। ২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় সেখানে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তার ফলে পুরো আফ্রিকা জুড়ে বেআইনি অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অস্ত্রের কিছু অংশ কালো বাজারের মাধ্যমে উগ্রবাদী গোষ্ঠি বোকো হারাম ও আল কায়েদার কাছে চলে গেছে। মুসু বলেন, কানাডা ও পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার আগে নিশ্চয়ই এসব বিষয় ভেবে দেখেছেন। তারা হয়তো মনে করেছেন ‘অপব্যবহারের’ ঝুঁকির চাইতে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো ইউক্রেনের মনোবল বৃদ্ধি করা। তাই সামরিক সমর্থন ও সহায়তা চালিয়ে যেতে হবে।

ইউক্রেনে পাঠানো কানাডা ও ন্যাটো মিত্রদের অস্ত্রের শেষ পরিণতি কী হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক গেলাঘের বলেন, সব চালানই যে ‘ভুল হাতে’ যাবে তেমনটা নয়। কিছু উপাদান হারিয়ে যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয়টি হচ্ছে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের পরিস্থিতি। যদি রাশিয়া জিতে যায় তাহলে ইউক্রেনের সব অব্যবহৃত অস্ত্র তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। পূর্ব ইউক্রেনের রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠিগুলোকে এসব অস্ত্র ‘উপহার হিসেবে’ দেয়া হতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এমনটাই আশ্বাস দিয়েছেন। গত ১১ মার্চ এক অনুষ্ঠানে পুতিন বলেছেন, তিনি আটক করা পশ্চিমা অস্ত্র লুগানাস্ক ও ডোনেটস্কের সামরিক ইউনিটগুলোকে দেয়ার পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন।
গেলাঘের আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর নেই। তাই তারা যুদ্ধে জয়ী হতে না পারলে এসব অস্ত্র প্রতিপক্ষের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। সূত্র : সিবিসি