অনলাইন ডেস্ক : আরব উপদ্বীপের উপসাগরীয় অঞ্চলের মাত্র ১১ হাজার ৫৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি দেশ কাতার, জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসী; কিন্তু এই কাতারের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে বসল বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর।

উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য আরব দেশগুলোর মতো জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বিপুল মজুতের কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বে এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ কাতার। কিন্তু বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের ফুটবলভক্তদের যাবতীয় সমালোচনা, কটুক্তি ও ঘৃণাসূচক মন্তব্যকে পাত্তা না দিয়ে সফলভাবে একটি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে পারায় আন্তর্জাতিক বিশ্বে আলাদাভাবে গুরুত্ব বাড়ছে দেশটির।

জাতিসংঘে নিযুক্ত কাতারের দূত শেখ আলিয়া আল থানি রয়টার্সকে বলেন, ‘ফুটবল বিশ্বকাপের আবেদন কেবল খেলার মধ্যেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং নানা জাতির ফুটবলভক্তদের মধ্যে একটি মেলবন্ধনও গড়ে তোলে এই বিশ্বকাপ। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আমরা আসলে বিশ্বকে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভাতৃত্বের বার্তা দিতে চেয়েছি।’

ফুটবলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা ফিফার কাছ থেকে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আসর আয়োজনের স্বত্ত্ব কাতার পায় ২০১০ সালে। তারপর থেকে দেশের ভেতর আটটি ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরি করেছে দেশটির সরকার। সদ্য শেষ হওয়া আসরের ম্যাচগুলোর আয়োজন হয়েছে এসব স্টেডিয়ামেই।

তবে ২০১০ সালে এই দায়িত্ব পাওয়ার দু’বছরের মধ্যেই বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতারে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করাতে বাধ্য করা এবং কম মজুরি প্রদানের অভিযোগ উঠতে থাকে কাতারের বিরুদ্ধে। গত মে মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একটি জোট ফিফা এবং কাতারের সরকার ও ফিফা বরাবর প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশ্বকাপের প্রাইজমানির ৪৪ কোটি ডলার শ্রমিকদের বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে কাতারের সরকার এবং ফিফা— কোনো পক্ষই এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি।

কাছাকাছি সময়ে কাতারের অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক শ্রমিক অধিকার ও শ্রমিকসংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে অর্থদাতা সংস্থা ইকুইডেম একটি স্বাধীন অভিবাসী শ্রমিককেন্দ্র গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছিল দেশটির সরকারকে। সেই প্রস্তাবও গ্রহণ করেনি দেশটির সরকার।

তবে কাতার সরকারের কর্মকর্তারা বলেছেন, শ্রমশোষণের যেসব অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে— সেসব ভিত্তিহীন এবং ভুলতথ্যে পরিপূর্ণ। বিশ্বকাপ আসরের অবকাঠামো নির্মাণে যেসব শ্রমিক কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে ২০১৮ সালে জারি করা নতুন শ্রম আইনে মজুরি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।

দেশটির বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট আয়োজন কমিটির সচিব হাসান আল থাওয়াদি যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই দেশের শ্রম আইন সংশোধন করতে চাইছিলাম, কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে উঠছিল না। বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন আমাদেরকে সেই সুযোগ দিয়েছে।’