অনলাইন ডেস্ক : ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে বিশ্বজুড়ে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে এবং অভিযান দীর্ঘ হলে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি দেখা দেবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

অভিযানরত রুশ বাহিনীকে ইউক্রেন থেকে তাড়াতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতাও কামনা করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে ইতালির পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে (যুদ্ধের প্রভাবে) বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বাড়ছে এবং কিছু দেশে ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন বরাবরই বিশ্বের শীর্ষ খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একটি; কিন্তু রুশ বাহিনীর গুলি ও বোমাবর্ষণের মধ্যে থেকে কীভাবে আমরা ফসল বুনতে পারি?’

লেবানন, মিশর, ইয়েমেনসহ বেশ কিছু দেশ গত কয়েক বছর ধরে তাদের বার্ষিক গমের চাহিদার জন্য ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল; কিন্তু যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছে গমের দাম। এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতমাসের তুলনায় ইতোমধ্যে গমের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

ইউক্রেনে অভিযানরত রুশ বাহিনীকে ‘আগ্রাসনকারী’ উল্লেখ করে মঙ্গলবারের ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনে আগ্রাসন শেষে ইউরোপে ঢুকবে রুশ বাহিনী। এ কারণে ইউরোপের উচিত সর্বাত্মকভাবে এখন ইউক্রেনের পাশে থাকা।

তিনি বলেন, ‘রুশ বাহিনী মনে করে, ইউক্রেন হলো ইউরোপের প্রবেশদ্বার। এই দুয়ার দিয়েই অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপে ঢোকার পরিকল্পনা নিচ্ছে তারা। কিন্তু আমি জানি, ইউরোপ কখনও বর্বরতাকে প্রবেশাধিকার দেবে না।’

জেলেনস্কির বক্তব্যের জবাবে ইউক্রেনের বীরোচিত ভূমিকার প্রশংসা করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও শরণার্থী বিষয়ক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রয়োজনে দেশটিতে ইতালীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

দ্রাঘি বলেন, ‘এই যুদ্ধ আসলে ইউক্রেনের জনগণ, যারা মস্কোর সম্প্রসারণবাদিতাকে ‍ইতোমধ্যে রুখে দিয়েছে এবং আগ্রাসী বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করতে ইতোমধ্যে সক্ষম হয়েছে, তাদের আত্মমর্যাদার সঙ্গে রুশ সরকারের ঔদ্ধত্যের লড়াই।’

পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো দেশটিকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্যপদ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।

ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।

কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।

অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

মঙ্গলবার ২৭তম দিনে পৌঁছেছে এই অভিযান।

সূত্র: রয়টার্স