অনলাইন ডেস্ক : গণতান্ত্রিক পথে যাত্রার তুলনায় গত বছর বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদের এগিয়ে যাওয়া দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচক প্রকাশকারী সুইডেনের স্টকহোম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিসটেন্সের (ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ) গণতন্ত্র সূচক সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্র্যাসি রিপোর্ট-২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বের ২০টি দেশ কর্তৃত্ববাদের দিকে অগ্রসর হয়েছে। তবে একই সময়ে বিশ্বের ৭টি দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করেছে।

১৯৭০ এর দশকে গণতন্ত্রায়নের তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গণতন্ত্রবিমুখতার বিদ্যমান নেতিবাচক প্রবণতা মহামারির কারণে দীর্ঘায়িত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রসহ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোও ক্রমান্বয়ে কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কৌশল অবলম্বন করেছে। গণতন্ত্রের উল্টোপথের এই যাত্রায় তারা তাৎপর্যপূর্ণ জনপ্রিয় সমর্থনও পেয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের উল্টোপথে যাত্রায় বিশ্বের সবচেয়ে উদ্বেগজনক কিছু দেশের তালিকায় ব্রাজিল এবং ভারতকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও ২০০০ সাল থেকে ভারত মধ্য-স্তরের গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় আছে।

ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএর এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং স্লোভেনিয়ারও (ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০২১ সালের সভাপতি রাষ্ট্র এই তিন দেশ) গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

বিশ্বের বেশ কিছু দেশে হাইব্রিড বা কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে। আর এসব দেশের তালিকায় আছে নিকারাগুয়া, রাশিয়া, তুরস্ক এবং ভেনেজুয়েলা।

এতে বলা হয়েছে, অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দেশগুলোর মধ্যে এই প্রবণতা আরও গভীর। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা জেঁকে বসা দেশের সংখ্যার হিসেবে ২০২০ সাল ছিল সবচেয়ে উদ্বেগজনক। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অগণতান্ত্রিক দেশের শাসকগোষ্ঠী আরও বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে বলে ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএর এই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ বলছে, অগণতান্ত্রিক দেশগুলোতে বিশেষভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে মহামারি। যারা ইতোমধ্যে মিইয়ে যাওয়া নাগরিক কণ্ঠকে আরও চেপে ধরেছে।

নির্বাচনী অখণ্ডতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিত্তিহীন সব অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রবণতা বৃদ্ধি করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিসটেন্স বলেছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অন্যায্য বণ্টন, ভ্যাকসিনবিরোধী মতবাদ টিকাদান কর্মসূচির গতিকে নিম্নমুখী করেছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংকট এবং অবাধ স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিসটেন্স বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র সমর্থনকারী একটি আন্তঃসরকার সংস্থা। সুইডেনের স্টকহোমে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ২০০০ সাল থেকে প্রত্যেক বছর বিশ্বের গণতন্ত্র পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সংস্থাটি।