অনলাইন ডেস্ক : আবারো আবুধাবি বিমানবন্দরে আটকা পড়ে আছেন বেশ কিছু বাংলাদেশি। তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট থাকা সত্ত্বেও ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পাচ্ছেন না। এ জন্য বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বেষ্টনী পেরিয়ে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারছেন না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গালফ নিউজ। এতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ৪১ জন আরোহী অবতরণ করেন আবু ধাবিতে। কিন্তু তার মধ্যে ৩০ জন যাত্রী এখন ইমিগ্রেশন ক্লিয়ান্সে না পাওয়ায় দেশটিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। এসব মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে সেখানে গিয়েছেন। তারা গালফ নিউজকে বলেছেন, তাদের কাছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈধ ভিসা আছে।

সঙ্গে আছে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ। তাদের বিষয়ে আইসিএ ওয়েবসাইটে আছে সবুজ সঙ্কেত। তা সত্ত্বেও তাদেরকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, সপ্তাহান্তে এই বিষয়টি প্রথম জানা যায়। এ সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যাওয়া ৮১ জন যাত্রী এবং এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটের ৫১ জন যাত্রী ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পেতে ব্যর্থ হন। কি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। তবে সূত্র থেকে যেসব ইঙ্গিত মিলছে তাতে মনে হচ্ছে এটা এয়ারলাইন অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে সৃষ্ট কোনো জটিলতা।
আবু জাফর বলেন, যাত্রীদের মধ্যে ৫ জন তাদের প্রসেসিং সম্পন্ন করতে সক্ষম হন। আটকে পড়েন ১২৭ জন। এরপর বেশির ভাগকেই ফিরতি ফ্লাইটে ইতিমধ্যে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে এখন আবু ধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকা পড়ে আছেন আরো ৩০ জন। তাদেরকে খাবার সরবরাহ দিতে আমরা পরামর্শ দিয়েছি বিমান সংস্থাকে। এ বিষয়ে স্থানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে সমস্যার সমাধান করার জন্য।
ওদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আটকে পড়া যাত্রীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কি ঘটতে যাচ্ছে তা জানেন না তারা। একটি ক্যাটারিং কোম্পানিতে চাকরি করেন ইব্রাহিম খলিল (৪২)। তার রয়েছে বৈধ ভিসা। তিনি বলেন, মা মারা যাওয়ায় জরুরিভিত্তিতে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি দেশে গিয়েছিলাম। আমার ছুটি ছিল ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে আমি সেই সময়মত ফিরতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত যখন শুনতে পেলাম ফ্লাইট চালু হয়েছে তখন আমি আইসিএ অনুমোদন নিই এবং আবু ধাবিতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই। ঢাকায় বিমানবন্দরে আমার সব কিছু চেক করা হয়েছে, আমি মনে করি না আমিরাতে পৌঁছার পর আমাকে এভাবে আটকে থাকতে হবে।
গত ৬ মাস ধরে ইব্রাহিম খলিলের কোনো আয় নেই। দেশে রেখে গেছেন তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। তিনি বলেন, আমি জানি বর্ধিত ছুটির জন্য আমার বেতন কাটা হবে। গত কয়েক মাসে টাকা ধার করেছি। এখন আশা করছি, আমাদেরকে আমিরাতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। আমরা স্থানীয় সময় রাত ২টায় পৌঁছার পর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছি। আমাদের পাসপোর্ট খুব সতর্কতার সঙ্গে চেক করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর আমাদেরকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। তারপর থেকে আমাদেরকে আর কিছুই বলা হয় নি।
আটকে পড়া এমন একজন কর্মী মোহাম্মদ সোহাগ (৪৩)। তিনি বলেন, এরই মধ্যে তার নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। একটি নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কেরানির কাজ করেন তিনি। তার রয়েছে বৈধ ভিসা। আবু ধাবি ফেরার জন্য তার রয়েছে আইসিএ অনুমোদন। ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি বার্ষিক ছুটিতে ছিলেন। এপ্রিলে আমিরাতে ফেরার কথা ছিল তার। তখন থেকেই তিনি আমিরাতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। ‘এক পর্যায়ে আমি আবুধাবি যাওয়ার জন্য ২৬ হাজার টাকা দিয়ে ওয়ান-ওয়ে টিকেট কিনি। আশা, আমি সহসাই কাজ শুরু করতে পারবো।’ তিনি গিয়েছেন নোয়াখালির বেগমগঞ্জের একটি গ্রাম থেকে। দেশে রেখে গেছেন পিতামাতা, স্ত্রী ও চার সন্তানকে। সোহাগ বলেন, তিনি একই প্রতিষ্ঠানে গত ১১ বছর ধরে কাজ করছেন।
জসিম উদ্দিন (৫০) আবু ধাবি গিয়েছেন বিনিয়োগ ভিসায়। তিনি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ছুটিতে ছিলেন। তিনি বলেন, ২৪০ দিরহামে আমি একটি বিজনেস ক্লাসের টিকেট কিনেছিলাম। ছুটিতে যাওয়ার পর থেকে আমার কোনো আয় নেই। আশা করি, আমাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। অবতরণের পর থেকে আমরা খাদ্য ও পানি ছাড়া অবস্থান করছি বিমানবন্দরে।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আঞ্চলিক ম্যানেজার এনসি বড়–য়া বলেছেন, তারা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পান নি। তার ভাষায়, আমরা জানি, এসব যাত্রীর কাছে রয়েছে বৈধ ভিসা। আছে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট এবং আইসিএ অনুমোদন। এ জন্য তাদেরকে আবু ধাবি যেতে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটে বিমানের আরো একটি ফ্লাইট আবু ধাবিতে অবতরণ করার কথা রয়েছে। এই ফ্লাইটে সিট বুকিং দিয়েছেন ২০২ জন। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাত্রীর সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত আবু জাফর বলেছেন, তিনি সুস্পষ্ট নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন, যাতে তা তিনি বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। ওদিকে সূত্র বলেছে, অন্য দেশের আরো কিছু বাসিন্দা ওই বিমানবন্দরে আটকা পড়েন আছেন বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও।