অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী মানব স্বাধীনতা সূচকে ৭ ধাপ পিছিয়ে গেছে কানাডা। গবেষকরা বলেছেন, কঠোর কোভিড-১৯ লকডাউন ব্যবস্থা মানব স্বাধীনতা সূচকে কানাডার অবস্থানকে পিছিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল। ফ্রেজার ইনস্টিটিউট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্যাটো ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত মানব স্বাধীনতা সূচকের ২০২২ সংস্করণ কানাডাকে বিশ্বের ১৩তম সবচেয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর আগে গত বছর দেশটির অবস্থান ছিলো ৬ নাম্বারে। তাছাড়া দীর্ঘ এক দশক পর প্রথমবারের মত সবচেয়ে বড় অবনমন হল কানাডার। শীর্ষ দশের তালিকা থেকে স্থান হারিয়েছে দেশটি।
গবেষণার সহ-লেখক এবং ফ্রেজার ইনস্টিটিউটের ফেলো ফ্রেড ম্যাকমোহন বলেছেন, ‘কানাডার কোভিড প্রতিক্রিয়া ২০২০ সালে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কঠোর ছিল।’ এ ছাড়াও আমাদের আইনি ব্যবস্থায় কিছু বাধা রয়েছে এবং বিভিন্ন কেলেঙ্কারি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও এর পেছনে দায়ী, তিনি বলেন। সামগ্রিক মানব স্বাধীনতা সূচক অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং কানাডার এ ক্ষেত্রে অবনমন হচ্ছে, বলেন ফ্রেড।
বিশ্বের সবচেয়ে স্বাধীন দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। আর নিউজিল্যান্ড, এস্তোনিয়া, ডেনমার্ক এবং আয়ারল্যান্ড শীর্ষ পাঁচে স্থান করে নিয়েছে। এরপর রয়েছে সুইডেন, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গ। কানাডা ১৩তম স্থানে রয়েছে, যেখানে ১১তম স্থানে সমান পয়েন্ট পেয়ে যৌথভাবে রয়েছে নরওয়ে এবং অস্ট্রেলিয়া। অন্য দিকে ১৪ তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে তাইওয়ান।
অন্যান্য আলোচিত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য ৫ ধাপ নেমে ২০ তম স্থানে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাত ধাপ নেমে ২৩ তম স্থানে, ইউক্রেন নয় ধাপ বেড়ে ৮৯ তম স্থানে এবং রাশিয়া ১২৪ তম থেকে ১১৯ তম স্থানে উঠে এসেছে। অন্য দিকে জাপান ১৬তম, জার্মানি ১৮তম, দক্ষিণ কোরিয়া ৩০তম, ফ্রান্স ৪২তম এবং ভারত ১১২তম স্থানে রয়েছে।
এ ছাড়া পাঁচটি সবচেয়ে কম স্বাধীন দেশের তালিকায় ক্রমানুসারে মিসর, ইরান, ভেনিজুয়েলা, ইয়েমেন এবং সিরিয়া রয়েছে। জিম্বাবুয়ে এবং চাদের মাঝামাঝি ১৫২ তম স্থানে রয়েছে চীন।
আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ সুদান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের মতো দেশগুলোর স্বাধীনতা সূচক মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য উপলব্ধ ছিল না।
সমীক্ষা অনুসারে, গড় মানব স্বাধীনতা সূচকের শতকরা হার ২০১৯ সালে ৭.০৩ ভাগ থেকে ২০২০ সালে ৬.৮১ ভাগে নেমে এসেছে।
বিশেষভাবে নারী স্বাধীনতা উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী — মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার নারীরা সবচেয়ে কম স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে।
ফ্রেড বলেন, স্বাধীনতা হারানোর প্রভাব অপরিসীম। স্বাধীনতাই আমাদের যা চাই তা করতে সক্ষম করে, তিনি বলেন। সুখ এবং জীবন সন্তুষ্টির উপর বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা গেছে যে— স্বাধীনতা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, যেখানে লোকেরা তাদের নিজের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে, সেটি সুখের একটি প্রধান অবদানকারী।
গবেষণায় আইনের শাসন, নিরাপত্তা, সেফটি, সম্পত্তির অধিকার, চলাচলের স্বাধীনতা, ধর্ম, সমিতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সেইসাথে সরকারের আকার, বাণিজ্য স্বাধীনতা এবং নিয়ন্ত্রণ সহ ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পরিমাপ করার জন্য ৮৩ টি পৃথক গবেষণা ব্যবহার করা হয়েছে।
কানাডিয়ান ট্যাক্সপেয়ার্স ফেডারেশনের ফেডারেল ডিরেক্টর ফ্রাঙ্কো টেরাজ্জানো বলেছেন, কানাডিয়ানরা কীভাবে তাদের অর্থ ব্যয় করতে পারবে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতার সংকটের মধ্যে ট্রæডো সরকারের বেতন এবং কার্বন ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করে ফ্রাঙ্কো বলেন, যদিও অটোয়া অত্যাধিক বিলের বেড়াজালে কানাডিয়ানদের আটকে রেখেছে, সেখানে অন্যান্য অনেক দেশ কর কমিয়ে ত্রাণ প্রদান করছে।
কনজারভেটিভ পার্টি নাগরিক স্বাধীনতার সমালোচক মেরিলিন গ্লাডু বর্তমান সরকারকে দোষারোপ করে বলেছেন, আমাদের অবশ্যই কানাডাকে পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন দেশ বানাতে হবে, যেখানে মানুষ তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে এবং নিজেদের ভাগ্যের মালিক হতে পারবে। সূত্র : ন্যাশনাল পোস্ট