সোনা কান্তি বড়ুয়া : ভারতে হিন্দুধর্মের পূর্বে কাশ্যপব্দ্ধুর বৌদ্ধধর্ম (কাশ্যপব্দ্ধুর relics in Bauddhanath Pagoda in Kathmandu, Nepal) এবং মহেঞ্জোদারোর রাজর্ষি বোধিসত্ত্ব মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে বিরাজমান! মানবাধিকারের আলোকে ব্রাহ্মণ না হলে কি ভারতের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না? ভারতবর্ষে বাবরি মসজিদ ও রামমন্দির ইস্যুটি একটি প্রধান চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চা হয়ে এসেছে এবং এখনও বিরামহীনভাবে এই চর্চা চলছে। একটি রাজনৈতিক দল এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে শূন্য থেকে একেবারে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে। হিন্দু রামায়নের অযোধ্যা কান্ডে বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে গালাগাল (HATE CRIME) কেন? মৌলবাদীরা জাতিভেদ প্রথার হিন্দুধর্মকে মানবাধিকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে!

হিন্দু জাতিভেদ প্রথার সন্ত্রাসবাদের রাজনীতিতে (7th 8th and 9th Century) বিশ্বমানবতার ট্রাজেডি এবং রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করার পর বাবরি মসজিদ ভেঙেছে! বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় এমারেল্ড (মরকত মনি) বুদ্ধ মন্দিরের চারিদিক জুড়ে আছে দশরথ জাতকে বৌদ্ধ রামকীর্তির (রামায়নের) অভিনব চিত্রশালা। থাইল্যান্ডে অযোধ্যা এবং রাজা রাম বিরাজমান! (অযোধ্যা or আয়োথায়া Thai old capital city 45 miles from Bangkok) এবং রাজা রাম Present Thai King (Rama 10) আজও বিরাজমান।

মহেঞ্জোদারো স্থাপত্যশৈলীতে ধ্যানমগ্ন রাজর্ষি বোধিসত্ত¡ বিরাজমান! মহেঞ্জোদারো স্থাপত্যশৈলীতে বৌদ্ধ প্রত্নতত্ত্ব নির্দশন প্রত্নতাত্ত্বিক বৌদ্ধ ইতিহাস (5000 thousand years ago)!

বৈদিক রাজা ইন্দ্র প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ নগরদ্বয় মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা ধ্বংস করার পর প্রাচীন ভারতে বৈদিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (লেখক স্বপন বিশ্বাসের লেখা ইংরেজি বই ‘বৌদ্ধধর্ম’ মহেঞ্জোদারো হরপ্পার ধমর্, কলিকাতা ১৯৯৯), এবং বৌদ্ধ ত্রিপিটকের মধ্যম নিকায়ের মাগন্দিয় সূত্রে (সূত্র নম্বর: ১৭৫) গৌতমবুদ্ধ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “পূর্বের বুদ্ধগণ আরোগ্য পরম লাভ এবং নির্বান পরম সুখ সম্বন্ধে যেই শিক্ষা দিয়েছিলেন বর্তমানে সেই শিক্ষা সমূদয় জনসাধারনের মধ্যে প্রচলিত হয়ে রয়েছে। বান্দরবন পাহাড়ে সীতা মুরা (forest Panchabati) ও আর্য্যমিত্র বুদ্ধের পর ভবিষ্যত রাম বুদ্ধের বৌদ্ধ মহাবিহার জাদী (Buddhist Pagoda) বিরাজমান!

গৌতমবুদ্ধ তাঁর ভিক্ষুসংঘকে উপদেশ প্রসঙ্গে দশরথ জাতক (রামায়ন) সমাধান করতে গিয়ে বলেছেন, “তখন (পূর্ব জন্মে) শুদ্ধোধন রাজা ছিলেন দশরথ মহারাজা, মহামায়া ছিলেন সে মাতা, রাহুলমাতা (গোপা) ছিলেন রাজকুমারী সীতা, আনন্দ ছিলেন রাজপুত্র ভরত, সারীপুত্র ছিলেন রাজপুত্র লক্ষন, বুদ্ধ পরিষদ সে পরিষদ, আমি (বুদ্ধ) ছিলাম সে রাম পন্ডিত (দশরথ জাতক নম্বর ৪৬১, জাতক অট্টকথা, পালি টেক্সট সোসাইটি, লন্ডন)।”

গোটা রামজন্মভূমির আন্দোলনটাই বকওয়াসের রাজনীতি। ভারতীয় টিভি চ্যানেলে বাঙালি বৌদ্ধ বীর বিজয় সিংহের শ্রীলঙ্কা জয় দেখানো হয়নি কেন? গৌতমবুদ্ধের দশরথ জাতকে রামজন্মভূমির ইতিহাস! হিন্দুরাজনীতি রাম কাহিনি নিয়ে মুসলমানদের বাবরি মসজিদ কেড়ে নিল! ব্রাহ্মণ্যবাদের জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়।

বৌদ্ধ জাতকে রামায়ন এবং মহাভারত প্রসঙ্গ! ভবিষ্যত আর্য্যমিত্র বুদ্ধের পর রামবুদ্ধ খুদ্ধক নিকায় : বুদ্ধ বংস (অট্টকথা, পালি টেক্সট সোসাইটি, লন্ডন) বিরাজমান।” গৌতমবুদ্ধ সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে তাঁর ভিক্ষুসংঘ এবং জনতাকে পালি ভাষায় উপদেশ দিয়ে ছিলেন। হিন্দু লেখকগণ বৌদ্ধ জাতককে বদলায়ে রামায়ন, Betal Panchabingsati, Katha Sarith Sagar, Pancha Tantra, Hitopadesha এবং মহাভারত বানিয়েছে!

বেস্সান্তর জাতক (৫৪৭) এবং দশরথ জাতককে (৪৬১) বদলায়ে হিন্দু রামায়ন বানিয়েছে! এবং ঘট জাতক (৪৫৪), Nalinika Jataka (526), Ummadayanti Jataka (527) Sibi Jataka (499), Sambhab (515) Jataka, Kunal (295) Jataka, Kastahari Jataka ( Shakuntala 07) Kurudharma Jataka (296) এবং Several Jatakas বদলায়ে মহাভারত বানিয়েছে (Jataka by Mr. Eshan Chandra Ghosh and Ms. Purba Sengupta, Weekly Bartaman, 02 January 2016, Kolkata).!

ঘট জাতক IS THE LIFE OF শ্রীকৃষ্ণ IN THE মহাভারত MAIN CHAPTER. DEVA GARBHA ( DEVAKI ) WAS THE MOTHER AND PRINCE UPASAGAR (VASUDEVA PRINCE OF MATHURA) WAS THE FATHER OF SRI KRISNA. DWARAVATI (DWARIKA) WAS THE CAPITAL OF SRI KRISNA. NANDAGOPA (YUSHODA) WAS THE ADOPTED MOTHER OF SRI KRISNA AND THEY HAVE TEN BROTHERS ACCORDING TO THE BUDDHIST GHATA JATAKA. WE HAVE DISCOVERED SCHOLAR VIDUR, YUDHISTIR AND SANJOY IN THE SAMBHAB JATAKA (515) AND DRAUPADI IN THE KUNAL JATAKA (536). জাতক কথায় যিনি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ঋষি তাঁরই নাম মহাভারতের লেখক ব্যাসকে দিয়েছেন।

হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, (630 A.D.) আদি শঙ্করাচার্য্য (830 A. D.) এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন, বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)।”

প্রায় ৫ হাজার পূর্বে বৈদিকপূর্ব চক্রবর্তি রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্তে¡র প্রতœতাত্তিক নিদর্শন মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে বিরাজমান। বৌদ্ধ জাতকে হিন্দুরাজনীতির রামায়ন এবং মহাভারত বিরাজমান সত্বেও হিন্দুপন্ডিতগণ দশরথ জাতককে (জাতক নম্বর : ৪৬১) বদলায়ে রামায়ণ রচনা করার পর উক্ত রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে চোর (Hate Crime) এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে।

স্বাধীন ভারতের সংবিধানে মহাশান্তি মহাপ্রেম বিরাজমান সত্বেও মানব জাতি দলিত, অনগ্রসর, চন্ডাল হ’ল কেন? রামায়নের ঐতিহাসিক উত্স নিরুপণ করতে গিয়ে পন্ডিত ও ভাষাতত্ত¡বিদ ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয় কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির এক আলোচনা সভায় বলেছেন, “বৌদ্ধ দশরথ জাতকই রামায়নের উত্স (দৈনিক বসুমতি, কলকাতা, ২ মার্চ ১৯৭৮ ইং)।”

ভারতে ব্রাহ্মণদের ধর্ম এবং রাজনীতি মানুষ জাতিকে অপমান করার ফলে আজ ২৫ কোটি দলিত জনতা চন্ডাল হয়েছেন। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম পরবর্তীকালে যার নাম দেওয়া হয় হিন্দু ধর্ম। মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই অমানবিক জাতিভেদ প্রথার রাজনীতি!

মানবতাবাদী বৌদ্ধময় ভারতবর্ষকে ধ্বংস করে ব্রাহ্মণ্যবাদের হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, একথা তো সর্বজন স্বীকৃত এবং সমস্ত ঐতিহাসিক, গবেষকেরাও তা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন। বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর মন্দির”- সেই চেপে রাখা ইতিহাসের সামান্য তুলে ধরা হলো হিন্দু ধর্ম কিভাবে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করে!
সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের মাটিতে বৌদ্ধ রাষ্ঠ্রদ্রোহী। বাণভট্ট রচিত হর্ষচরিত গ্রন্থানুসারে, ১৮৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মৌর্য্য রাজবংশের বৌদ্ধ নবম সম্রাট বৃহদ্রথের (5th Generation of Emperor Asoka) প্রধান সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য্য সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে শক্তি প্রদর্শনের সময় তাকে হত্যা করে মৌর্য্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান ও শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করে চলেছে। আবার ব্রাহ্মণ্যবাদ জেগে উঠে দিনের পর দিন বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করে চলেছে। জাতিভেদ প্রথার হিন্দু সমাজে হিন্দুত্ববাদীরা মানুষ জাতিকে অপমান করার ফলে আজ ২৫ কোটি দলিত জনতা মানবাধিকারের জন্যে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন।

মানবাধিকারের আলোকে ব্রাহ্মণ না হলে কি ভারতের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না? রাম মন্দির আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় ১৯৯২ সালে ৬ই ডিসেম্বর প্রায় দুই হাজার অপাপবিদ্ধ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল লালকৃষ্ণ আদবাণীসহ হিন্দু রাজনীতিবিদের বকওয়াস রাজনীতির জন্যে।

আনন্দবাজার পত্রিকার (সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) মতে, “রামায়নের আদি হিসাবে তাঁহাদের কেহ কেহ প্রাচীনতর ভারতীয় কাহিনীর যথা: “দশরথ জাতক” (জাতক নম্বর : ৪৬১ ) এর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়াছেন। … সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির। তাঁহারা কি জানেন, হিন্দুর কাছে অতি পবিত্র পুরীর মন্দিরের প্রাক্ ইতিহাস সম্পর্কে কানিংহাম কিংবা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের কী অভিমত? তাই বলিতেছিলাম, অযোধ্যা একটি বৃহত প্রশ্ন বটে, কিন্তু নিতান্তই মনগড়া এক নির্বোধ প্রশ্ন।
হিন্দুরাজনীতির আক্রমণের শিকার বৌদ্ধ ধর্ম কেন? হিন্দু লেখকগণ “বুদ্ধ উপনিষদ” শীর্ষক বই লিখে বুদ্ধকে হিন্দুর নবম অবতার করার ষড়যন্ত্র এবং সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ‘আল্লাহ উপনিষদ রচনা’ সম্পাদন করার পর বুদ্ধগয়া ভবিষ্যত বৌদ্ধজাতির উন্নতির প্রেক্ষাপট, সেই পূত পবিত্র বুদ্ধের প্রেক্ষাপট অঙ্গনে শিবলিঙ্গের গর্ত পূজায় অত্যাচার করে নষ্ঠ করে বৌদ্ধদের ভবিষ্যতকেই ভষ্মীভূত করা হচ্ছে, শুধু প্রতীকিভাবে নয়, আক্ষরিক অর্থে।

ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পূনরুত্থান কালে অস্থির ঘটনা চাঞ্চল্যের দ্বারা চঞ্চল প্রেক্ষাপটে হিন্দুরাজনীতি (কলকাতার দেশ ৪ মে, ২০০১ পৃ: ১০) বৌদ্ধদের হাত থেকে (১) তিরুপতি বালাজী মহা বৌদ্ধবিহার (মন্দির) (২) পুরীর জগন্নাথ মহা বৌদ্ধবিহার (মন্দির) হিন্দু রাজনৈতিকগণ দখল করার পর গৌতমবুদ্ধকে হিন্দু রাজনীতির ভগবান বা অবতার বলে বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু রাজনীতি তিলে তিলে কিডন্যাপ করেছেন। (৩) বিশ্ববৌদ্ধদের পবিত্রতম বুদ্ধগয়া মহাবোধি বিহার ম্যানেজম্যান্ট কমিটিতে জোর করে পাঁচজন হিন্দু মেম্বার দিয়ে হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধগয়া দখল করে আছেন। ভারতে হিন্দুধর্মের পূর্বে মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে রাজর্ষি বোধিসত্ত্বের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিদ্যমান। হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়! হিন্দু জাতির মানবাধিকারই বৌদ্ধধর্ম!

হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ না করে বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী না হয়ে নয়জনের বুদ্ধগয়া ম্যানেজম্যান্ট কমিটিতে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটসহ আরও চারজন হিন্দু সদস্য কেন?
হিন্দুরাজনীতি হিন্দুধর্মকে মানবাধিকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে এবং কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)!

ভারতবর্ষে হিন্দু রাজনীতি বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে রামমন্দির!
মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই অমানবিক জাতিভেদ প্রথার রাজনীতি দলিত হত্যা বন্ধ কর। প্রথম বাংলা বইতে বুদ্ধের দর্শন এবং বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস জুড়ে বাংলা ভাষা চর্চায় চর্যাপদের দান বিরাজমান সত্বে ও বঙ্গাব্দ রচনায় বৌদ্ধ সভ্যতা এবং বাংলা ভাষার জনক গৌতমবুদ্ধকে বাদ দেওয়া হল কেন?

স্বাধীন ভারতের সংবিধানে বিশ্ববিজয়ী মহাশান্তি মহাপ্রেম এবং মানব জাতি দলিত, অনগ্রসর, চন্ডাল হ’ল কেন? ভারতে ব্রাহ্মনদের ধর্ম এবং রাজনীতি মানুষ জাতিকে অপমান করার ফলে আজ ২৫ কোটি দলিত জনতা মানবাধিকারের জন্যে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। “কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)।” ভারতীয় হিন্দু ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির বানানোর মত হিন্দুরাজনীতি ইসলামিক হিজরি (১৪৪১) সালকে ভেঙে চন্দ্র বা সূর্য ক্যালেন্ডারের নামে হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ (১৪২৭) রচনা করেছেন। বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? সর্বগ্রাসী হিন্দুধর্মের রাম কাহিনি নিয়ে মুসলমানদের হাত থেকে বাবরি মসজিদ কেড়ে নিল! ভারতীয় হিন্দু আধিপত্যবাদ রাজনীতি আল্লাহ উপনিষদ রচনা করে মুসলমানদের হাত থেকে বাবরি মসজিদ কেড়ে নিল এবং বুদ্ধ উপনিষদ রচনা করে বৌদ্ধদের হাত থেকে বিশ্ববৌদ্ধদের পবিত্রতম বুদ্ধগয়া ম্যানেজম্যান্ট কমিটি কেড়ে নিল! স্বয়ং গৌতমবুদ্ধ যেখানে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন সেই বৌদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির বেদখল হয়ে যাওয়াটা মেনে নিলে বৌদ্ধধর্ম ও জাতির গুরুতর অঙ্গহানি হয়ে যায়।

বিশ্ববৌদ্ধদের মিলনতীর্থ গৌতমবুদ্ধের পূত পবিত্র ধ্যানভূমি বুদ্ধগয়ায় শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে দখলে নিয়েছে। মানবতা বিরোধী এক কালো আইনের নাম “বুদ্ধগয়া ম্যানেজম্যান্ট কমিটি।” ১৯৪৯ এর বুদ্ধগয়া টেম্পল ম্যানেজম্যান্ট অ্যাক্টে চারজন বৌদ্ধসদস্য, হিন্দু জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ চার হিন্দু সদস্য (৫ জন হিন্দু সদস্য), ম্যানেজম্যান্ট কমিটি নিয়ে বুদ্ধমূর্তির সম্মুখে শিবলিঙ্গ সরিয়ে বৌদ্ধ বাতাবরন সৃষ্টির প্রয়াস ছিল। ভারতে পলিটিক্যাল হিন্দুধর্ম বৌদ্ধধর্মের গলা টিপে দিয়েছে অনেক আগে। সত্য কথা বলার উপায় নেই। ‘বৌদ্ধধর্ম তো হিন্দুধর্মের শাখা নয়’ বলতে না বলতে মৌলবাদী হিন্দুরা তেড়ে আসে।

ভারতবর্ষ বুদ্ধের দেশ। বাংলাদেশে বান্দরবন পাহাড়ে রাম জাদী (রামমন্দির) প্রসঙ্গে বৌদ্ধ দশরথ জাতকই রামায়নের উত্স এবং বাংলাদেশের বান্দরবন থেকে তিন মাইল দূরে সাঙ্গু নদীর তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি সীতা মুরায় বৌদ্ধ রাম ও সীতার বনবাস পঞ্চবটি বন বিরাজমান। আমার দেশ আমার পরম তীর্থভূমি! হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয়! বান্দরবন পাহাড়ে রাম জাদী (রামমন্দির) ২০১৯ সালে মহামহোপাধ্যায় বৌদ্ধ ভিক্ষু উ.পঞা জোতা মহাথের বাংলাদেশে বান্দরবনে রাম জাদী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন! বাংলাদেশে উক্ত রাম জাদী মহাবিহারের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি চট্টগ্রাম কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিয়ে বৌদ্ধভিক্ষু হয়েছেন। হে মোর চিত্ত গণতীর্থে জাগোরে ধীরে- / Future রাম বুদ্ধের বৌদ্ধ মহাবিহারের স্মৃতির সাগরে তীরে। রামবুদ্ধ (খুদ্ধক নিকায় : বুদ্ধ বংস অট্টকথা, পালি টেক্সট সোসাইটি, লন্ডন)! সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ দেশ দখল করার নাম ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতির হিন্দু ধর্ম! ভারতের মতো সুবিশাল দেশে সত্তর বছর পরেও এই বহু সংস্কৃতি আর বহু সত্তার সংঘাতের সমাধান হল না!

ভারতবর্ষে বাবরি মসজিদ ও রামমন্দির ইস্যুটি একটি প্রধান চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চা হয়ে এসেছে এবং এখনও বিরামহীনভাবে এই চর্চা চলছে। একটি রাজনৈতিক দল এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে শূন্য থেকে একেবারে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে। বৌদ্ধ পালরাজাগণ বাংলাদেশে চারশত বছর রাজত্ব করেছিলেন এবং ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল?
হিন্দুগণ বুদ্ধপূজা না করে ও হিন্দু রাজনীতির পান্ডাগণ গৌতমবুদ্ধের পূত পবিত্র ধ্যানভূমি বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির দখল করেছে! বৌদ্ধ ইতিহাস এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধভারতে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে বীভত্স দলিত হত্যাযজ্ঞ এবং নির্যাতন কেন? বৌদ্ধধর্মের আলোকে সম্রাট অশোকের বুদ্ধ বন্দনায় হিংসা ও লোভের নাম ধর্ম নয় / বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ দর্শন! অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং ভারতে হিংসা ব্রাহ্মণ হিন্দুত্ববাদী পশুর ধর্ম। ভারতে হিংসা, ব্রাহ্মণ হিন্দুত্ববাদী হিন্দুত্ববাদীদের ভারতে বুদ্ধগয়া মর্মভেদী ট্রাজেডিতে হিন্দু শাসকদের গভীর যড়যন্ত্র!” কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)। বান্দরবনে রাম জাদী ও সীতার পঞ্চবটি বন!

বান্দরবন রাম জাদী বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ রামায়ন! হিন্দুপন্ডিতগণ দশরথ জাতককে বদলায়ে রামায়ণ রচনা করার পর উক্ত রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে চোর এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে। আজকের ভারতে মানব জাতির ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এবং সর্বগ্রাসী হিন্দুত্বকরণের জন্য লোভ লালসা ত্যাগ করতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু জাতিকে শিক্ষা দিয়েছিলেন:
“সেই সত্য যা রচিবে তুমি,
ঘটে যা, তা সব সত্য নহে,
কবি, তব মনোভূমি,
রামের জন্ম জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে
সত্য জেনো।”

ভারতে জৈন, মুসলমান, শিখ এবং খৃষ্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কোন হিন্দু সদস্য নেই। হিন্দু রাজনীতির দাদারা মাফিয়া চক্রের মতো বৌদ্ধদের তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির শত শত বছর পর্যন্ত দখল করে আছে। জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডিতে “বৌদ্ধগণ” ভারতে হিন্দু রাজনীতির ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। আজ বৌদ্ধধর্ম ভারতের গরীব আদিবাসীদের ও ডঃ বি. আর. আম্ভেদকরের অনুসারীদের ধর্ম। জাতিভেদ প্রথা ভিত্তিক হিন্দুধর্মে বৌদ্ধদের বিন্দুমাত্র ও অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মের পথের কাঁটা।” হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধগয়ার মাধ্যমে রাজনীতির “ব্রহ্মজাল” পেতে রেখেছে। এই চাণক্য রাজনীতির কুট কৌশলে ব্রাহ্মণ্যবাদের সমাজপাঠ।

পল্লব সেনগুপ্তের লেখা “ধর্ম ও ভারতবর্ষ আদিপর্বের রূপরেখা” এবং (দেশ, Page 14, কোলকাতা, 01 November 1999) হিন্দু রাজনীতির ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে হিন্দু রাজনীতির হাতে প্রাচীনতম রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্তে¡র প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন মহেঞ্জোদারো মিউজিয়ামে বিরাজমান! সম্রাট অশোকের অষ্ঠবিংশতি বুদ্ধ বন্দনার আলোকে (The Way of the Buddha by Government of India in 1956) বৌদ্ধ ভারত মহাকাব্যের মহাকবি সম্রাট অশোক বুদ্ধগয়া মহাজনসমুদ্রে জনগণমনের মুক্তির মঞ্চে দাঁড়িয়ে জলদ গম্ভীর স্বরে ঘোষণা করেছিলেন, “অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং “সত্য মেব জয়তে।” ভারতে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করতে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মের উত্পত্তি হয়েছিল! প্রায় ৫ হাজার পূর্বে বৈদিক রাজা ঈন্দ্র বৈদিক পূর্ব (বা আর্য্যসভ্যতায় বেদের আগে) কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করলেন! হিন্দু রাজনীতির ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে ভয়ঙ্কর মিথ্যা দিয়ে ভারতের ইতিহাস রচিত হ’লো দশরথ জাতকে রামায়ন প্রসঙ্গ! হিন্দু লেখকদের আক্রমণের শিকার বৌদ্ধধর্ম কেন?

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ট, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!