অনলাইন ডেস্ক : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে চলমান সহিংসতায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি। তবে ইম্ফলের স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সংবাদপত্রগুলো অন্তত ১১ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। রাজ্যে চলমান সহিংসতায় এই প্রথম প্রাণহানির কথা জানাল রাজ্য সরকার।

সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষকে উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পুলিশ মহাপরিচালক পি ডউঙ্গেল। এ ছাড়াও প্রায় এক হাজার জন মণিপুর থেকে আসামের কাছাড় জেলায় আশ্রয় নিয়েছে বলে সেখানকার এসপি জানিয়েছেন।

কারফিউ ও দেখামাত্র গুলির নির্দেশ
রাজধানী ইম্ফলসহ গোটা রাজ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার রাতেই সেনাবাহিনী পাঠাতে শুরু করেছিল। শুক্রবার তারা জানিয়েছে, সহিংসতা বন্ধ করতে তারা আরো ২০ কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাচ্ছে। বাহিনী মোতায়েন এবং আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্র সরকার নিয়ে নিয়েছে। কোনো রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে কেন্দ্রীয় সরকার এই ধারা প্রয়োগ করে থাকে, যদিও এটি খুবই বিরল। এই ধারার প্রয়োগ অনেকটা জরুরি অবস্থা জারির মতো।

মণিপুরের সহিংসতার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্ণাটকে তার নির্বাচনী প্রচার বাতিল করে মণিপুরের ওপর নজরদারি চালাচ্ছেন বলে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে।

অন্যদিকে বিরোধী কংগ্রেস বলছে, রাজ্যের বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

ভারতীয় রেল জানিয়েছে, মণিপুরে সহিংসতার প্রেক্ষিতে তারা ওই রাজ্যে কোনো ট্রেন এখনই পাঠাচ্ছে না। আর প্রতিবেশী রাজ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং অরুণাচল মণিপুরে পাঠরত তাদের রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী ফ্ল্যাগ মার্চ করছে পুরো রাজ্যেই। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার অশান্তি কিছুটা কমেছে, তবে রাজধানী ইম্ফল ও সহিংসতার উৎস যে চূড়াচন্দ্রপুর, সেখানে এখনো প্রবল উত্তেজনা রয়েছে।

তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার আগেই দুই দিন ধরে বহু বাড়িঘর, দোকান, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। লুট হয়েছে দোকান-বাজার। সাত-আটটি পুলিশ থানা থেকে বন্দুক ও গুলি লুট হয়েছে।

পুলিশ মহাপরিচালক শুক্রবার জানিয়েছেন, যারা ওগুলো লুট করেছে, তারা যদি নিজের থেকে ফেরত দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে না। কিন্তু যারা বন্দুক ফেরত দেবে না, তাদের জাতীয় সন্ত্রাস দমন সংস্থার তদন্তের মুখে পড়তে হবে।

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বন্ধ থাকলেও অনেক ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, যার সঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতার কোনো যোগাযোগ নেই। সহিংসতা বন্ধ করতে পদকজয়ী বক্সার মেরি কম এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। খ্রিস্টান চার্চগুলোও মণিপুরে খ্রিস্টানদের ওপরে হামলা এবং চার্চগুলো রক্ষার আবেদন জানিয়েছে।