অনলাইন ডেস্ক : ভারতে লকডাউন শিথিল হতেই লম্বা লাইন দেখা গেছে মদের দোকানগুলোতে। লাইন এত দীর্ঘ যে মানুষকে সামলাতে হিমসিম খেয়েছে খোদ পুলিশ। এমনকি লাঠিচার্জও করতে হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ৪০ দিন ধরে আরোপ থাকা লকডাউন সম্প্রতি প্রথমবারের মতো শিথিল করেছে ভারতীয় সরকার। আর তাতেই মদের দোকানে ভিড় জমে গেছে তৃষ্ণার্থ অনেক ভারতীয়র। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, ভারতে করোনাভাইরাসের কারণে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৫০০ জন, মারা গেছেন ১৪০০। এজন্য মার্চের শেষ দিকে আরোপ করা কড়া লকডাউনকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন অনেকে।

তবে এই লকডাউনের কারণে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা ভারতের কোটি কোটি মানুষ চাকরিহারা হয়ে গেছে।
গত মাসে কিছু শিল্প কারখানা ও কৃষিখাতের জন্য লকডাউন শিথিল করে সরকার। এরই সঙ্গে সোমব্র কিছু অফিস আদালত খুলে দেওয়া হয়। শর্ত হলো, এক-তৃতীয়াংশ কর্মী কাজ করবেন, বাকিরা বাসায় থাকবেন। কিছু কার ও মোটরবাইকও রাস্তায় দেখা গেছে। কিছু দোকানও খুলেছে।

এর মধ্যে মদের দোকানও রয়েছে। এসব দোকানের সামনে দাঁড়াতে হলে পরস্পরের মধ্যে কিছু দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দোকানের সামনে কিছুটা ব্যবধানে বৃত্তও এঁকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভোর থেকেই মানুষ ভিড় জমাতে থাকে। কেউই সামাজিক দূরত্ব রক্ষার ধার ধারেনি।
অসিত ব্যানার্জি (৫৫) নামে এক ব্যক্তি কলকাতার একটি দোকানের সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস হয়ে গেলো নির্জনভাবে থাকতে হয়েছে। এই মহামারিতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় মদ আমাদের শক্তি যোগাবে।” কলকাতার মতো নয়া দিল্লি সহ অনেক জায়গাতেই মদের দোকানে এত ভিড় ছিল যে পুলিশ ব্যাটন ব্যবহার করেছে।
উত্তর প্রদেশ অঙ্গরাজ্যের গাজিয়াবাদে দোকান খুলতেই মাস্ক পরিহিতি বহু মানুষ জড়ো হয়। ফলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ মদের দোকান বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “একটি দোকান সকালে খুলেছিল। কিন্তু এত মানুষ জড়ো হয়েছিল যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।”

কিন্তু দোকান বন্ধ হলেও আশেপাশের রাস্তা ও লেনের মধ্যে শত শত মানুষ আনাগোনা করছে এই আশায় যে দোকান হয়তো আবার খুলবে। নয়াদিল্লির এমনই এক দোকানের সামনে ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করছিলেন দীপক কুমার (৩০) নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, “এমন নয় যে বাসায় আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।”
সাগর নামে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ মদ কিনতে পারা ভাগ্যবান ক্রেতাদের একজন। তিনি জানালেন, সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি এক দোকানে যান। গিয়ে দেখেন যে দোকান তখনই খোলা হয়েছে। তিনি বলেন, “ওই সময় ২০-২৫ জন ক্রেতা ছিল। আর দোকান ২ ঘণ্টার মতো খোলা ছিল। প্রতি সারিতে ৫ জন করে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। কিন্তু লম্বা লাইনের কারণে তারা দোকান বন্ধ করে দিয়েছে।”
মহারাষ্ট্রের মতো কিছু রাজ্যে অবশ্য মদের দোকান বন্ধই রয়েছে। লকডাউন শিথিল হওয়ায় কোন দোকান খুলবে, আর কোন দোকান বন্ধ থাকবে, তা নিয়ে অনেক ধন্দের মধ্যে মদের দোকান বন্ধ থাকছে। তবে আসামের মতো কিছু রাজ্যে সোমবারেরও কয়েকদিন আগে মদের দোকান খোলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের মতো কিছু রাজ্যে অবশ্য মদ অবৈধ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাপকভাবে দেশটিতে বেড়েছে মদ বিক্রি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত হুইস্কির অর্ধেকই গেলা হয় ১৩০ কোটি মানুষের দেশটিতে। তবে শুদ্ধবাদীরা বলেন, এই হুইস্কির বেশিরভাগই আসলে হুইস্কি নয়, বরং রাম।