অনলাইন ডেস্ক : পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলার জেরে ইসলামাবাদ-নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত মধ্যরাতে ভারত পাকিস্তানের নয়টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। পাকিস্তান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পাল্টা হামলার জন্য সামরিক বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছে। এরপর থেকে সীমান্ত এলাকায় উভয় পক্ষের গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বনেতারারা দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এটা হতাশার। মাত্রই এ খবর শুনেছি। আমার মনে হয়, অতীত ইতিহাসের ভিত্তিতে মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তারা (ভারত-পাকিস্তান) দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে। তারা অনেক, অনেক দশক ধরে লড়াই করছে। আমি আশা করি, এটা খুব দ্রুত শেষ হবে।
ভারতের হামলার পর বুধবার ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও। তিনি বলেছেন, উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হবে, দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ আশা করছে।
যুক্তরাজ্য
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা একটি ‘গুরুতর উদ্বেগের বিষয়’। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন এবং দ্রুত, কূটনৈতিক পথ খুঁজে বের করার জন্য সরাসরি সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। উভয় দেশের সাথেই যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ এবং অনন্য সম্পর্ক রয়েছে। আমি ভারত ও পাকিস্তানে আমার প্রতিপক্ষদের স্পষ্ট করে বলেছি যে, যদি এটি আরও তীব্র হয়, তাহলে কেউই জিতবে না।
ল্যামি আরও বলেন, গত মাসে পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দায় যুক্তরাজ্য স্পষ্ট ছিল। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সকল পক্ষকে জরুরিভাবে কাজ করতে হবে। এই অঞ্চলে ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
চীন
বেইজিং ভারতের আক্রমণকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘তারা উভয়ই চীনের প্রতিবেশী। চীন সকল ধরণের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে।’
ফ্রান্স
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট বলেছেন, ভারতের ‘সন্ত্রাসবাদের অভিশাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার’ ইচ্ছা বোধগম্য হলেও, তিনি উভয় দেশকে উত্তেজনা এড়াতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ
মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর মধ্যে ‘সামরিক সংঘাত সহ্য করতে পারে না’। সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশের প্রতি সর্বোচ্চ সামরিক সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়া
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। বুধবার এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
রাশিয়া বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের সঙ্গেই মস্কোর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। উত্তেজনা প্রশমনে মস্কো নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় তাদের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করে দেশটি।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এক্স-পোস্টে পহেলগাম হামলার ‘স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত’ করার জন্য পাকিস্তানের আহ্বানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রয়োজন দেখা দিলে মালয়েশিয়া গঠনমূলক ভূমিকা পালনের জন্য উন্মুক্ত। নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে মধ্যস্থতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
ইইউ
ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের আগে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস সাংবাদিকদের বলেন, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ইইউ মধ্যস্থতা করার এবং উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে।