নির্বাচনী বিতর্কে অংশগ্রহণকারী ফেডারেল নেতৃবৃন্দ (বাম থেকে) লিবারেল পার্টির জাস্টিন ট্রুডো, ব্লক কুইবেকের ইয়েভেস ফ্রাংকোইস ব্লাঞ্চেত, এনডিপি’র জগমিত সিংহ এবং কনজারভেটিভ পার্টির এরিন ও’তুলে। সব ডানে টিভিএ মডারেটর পিয়ের ব্রুনেউ

অনলাইন ডেস্ক : গত ২রা সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, কুইবেকে প্রথমবারের মত এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে কানাডার প্রধান দলগুলোর ফেডারেল নেতৃবৃন্দ নির্বাচন পরবর্তী কানাডার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অস্ত্র বিষয়ে কী ধরনের নীতিমালা এবং পদক্ষেপ নেয়া হবে তা নিয়ে ফরাসী ভাষায় মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন। কুইবেকের প্রভাবশালী গণমাধ্যম টিভিএ-এর আয়োজনে দুই ঘন্টাব্যাপী এই বিতর্ক কানাডার প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মনোভাব এবং চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বিতর্ক এ মাসের ২০ তারিখে ফেডারেল নির্বাচনে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলবে। এ নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন লিবারেল পার্টির জাস্টিন ট্রুডো, ব্লক কুইবেকের ইয়েভেস ফ্রাংকোইস ব্লাঞ্চেত, এনডিপি’র জগমিত সিংহ এবং কনজারভেটিভ পার্টির এরিন ও’তুলে।

বিতর্কের প্রথম পর্যায়ে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কোভিড-১৯ নিয়ে তাঁর সরকারের সাফল্যের বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। জাস্টিন ট্রুডো ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, গত ১৯ মাসে কোভিড-১৯ মহামারীতে তাঁর সরকার যেভাবে গোটা দেশের মানুষকে সঠিক পথে চালিত করেছে, সেজন্য আগামী নির্বাচনে তাঁর সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দিয়ে জয়ী করে এক সুন্দর কানাডা নির্মাণের আহবান জানান। ট্রূডো তাঁর বক্তব্যে কোভিড-১৯ মহামারী থেকে দেশ এবং দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে অত্যন্ত সফল মনে করেন এবং গত জুলাইয়ের মধ্যে কানাডার সবার জন্য ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিশ্চিত করতে সফল হয়েছে বলে দাবী করেন। সেই সাথে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর সরকার দেশে কোভিড-১৯ এর চতুর্থ-ওয়েভ থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য সরকারী কর্মচারী এবং ভ্রমণকারীদের জন্য ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। বিষয়টি উল্লেখ করে ট্রুডো কনজারভেটিভ নেতা এরিন ও’তুলের দিকে তীর ছুঁড়ে বলেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণে কনজারভেটিভ নেতার প্রতি আস্থা রাখা যায় না, কারণ তিনি তাঁর দলের কর্মী এমন কি ফেডারেল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু প্রার্থীকে এ পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন নি।

ও’তুলে ট্রুডোর এই কথার বিপক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ট্রুডোর কথাটা সঠিক নয়। তিনি বলেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই নিয়েছেন এবং সবাইকে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছেন। তবে তিনি বলেন, নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে প্রতি কানাডিয়ানের নিজস্ব মতকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। তিনি ট্রুডোর বাধ্যতামূলক নীতির সমালোচনা করে বলেন, দেশের এই স্বাস্থ্য-সংকটের সময়ে ট্রুডোর জোর-জোবস্তি ভাব দেশের মানুষের মধ্যে এক বিভক্তি রেখা টেনে দিচ্ছে।
সারা দেশের কোভিড মহামারীর এই সংকটাপন্ন অবস্থায় ট্রুডোর নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি বিতর্কে উপস্থিত তাঁর তিনি প্রতিপক্ষই কঠোর সমালোচনার সাথে উল্লেখ করেন। তাঁরা তাঁর এই সিদ্ধান্তকে হঠকারিতামূলক উল্লেখ করে বলেন, ট্রুডো নিজ এবং নিজ দলের সুবিধা খোঁজার জন্য সারা দেশকে এক ভয়ংকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা উল্লেখ করেন, যেখানে এই মহামারী একবারে নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল, সেখানে এই মুহূর্তে নির্বাচনী প্রচারের জন্য সেটা আবার আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে ট্রুডোর কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে বøক কুইবেকের নেতা ইয়েভেস ফ্রাংকোইস ব্লাঞ্চেত উল্লেখ করেন, যখন ফেডারেল এ পার্লামেন্ট একেবারে সুন্দরভাবে চলছিল, তখন এমন একটি নির্বাচন দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই সব ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে। তবে এর প্রতি উত্তরে জাস্টিন জানান, বøক কুইবেকের নেতার এই বক্তব্য কিছুটা পাগলামির মত শোনাচ্ছে, কারণ হাউস অব কমন্স এ কানাডার জনস্বার্থের কয়েকটি বিলে যখন তাঁর দলের এমপিদের চার বার বিরোধীতা তাঁকে এই নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

কোভিড মহামারী নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও বাকযুদ্ধে মৃত্যুপথযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতারা একে অপরের নীতির সমালোচনা করেন এবং তাঁদের প্রস্তাবিত মতকে সমর্থনের পক্ষে যুক্তি দেন। ফরাসী ভাষার এই বিতর্কের আয়োজক টিভিএ এর পক্ষে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিক পিয়ের ব্রুনেউ।