অনলাইন ডেস্ক : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আসাদ চৌধুরীকে কানাডার মন্ট্রিয়েলে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। নগরীর পার্ক এক্সের ৪১৯ সেন্ট রক স্ট্রিটের একটি হলে মন্ট্রিয়েলপ্রবাসী বাংলাদেশিরা তাঁকে সংবর্ধনা দেন।
গত রোববার (১০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংবর্ধনা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক তাজুল মোহাম্মদ।
অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরীকে ঘিরে প্রবাসীদের মধ্যে এক অন্য রকম আনন্দময় আবহ সৃষ্টি হয়।
সংবর্ধনার জবাবে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘মন্ট্রিয়েলে এলে আমি ইউরোপের গন্ধ পাই। আর পাই স্বজন-সান্নিধ্যের মমতাময় অনুভূতি।’
কবি আসাদ চৌধুরী কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, এই কানাডা থেকেই দুজন প্রবাসী আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতির প্রথম প্রচেষ্টা চালান। কানাডার অটোয়াতে বসেই মোস্তফা চৌধুরীর মাধ্যমেই যুদ্ধশিশু নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু হয়। আর এই মন্ট্রিয়েল শহরে থেকেই তাজুল মোহাম্মদের হাতে রচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যবহুল অনেক বই। বাঙালি জাতির চিরকালের অহংকারের এই বিষয়গুলো স্বদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশ থেকে হয়নি, হয়েছে কানাডা থেকে।
আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি, কানাডার উদার বহুজাতিক সমাজের সুন্দর সহাবস্থান উল্লিখিত কাজগুলো করার সহায়ক শক্তি ছিল।’
কবি আসাদ চৌধুরী কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তাহলেই সম্ভব আপনারা যে দেশে আছেন, সেই দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের পাশাপাশি নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর আত্ম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
কবি প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তৃতায় প্রাচীন ও সমকালীন সাহিত্য, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ আর্থসামাজিক নানা বিষয়ে কথা বলেন। তাঁর ভরাট কণ্ঠের স্বভাবসুলভ বৈঠকি আড্ডা ধাঁচের বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই। অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর রচিত কয়েকটি ছড়া ও কবিতাও আবৃত্তি করেন।
সভাপতির বক্তব্যে তাজুল মোহাম্মদ বলেন, ‘এই গুণী ব্যক্তিকে আমাদের মধ্যে পেয়ে আমরা গৌরবান্বিত বোধ করছি। আজ আমরা এই সংবর্ধনা দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীকে নয়, বরং আমরাই সম্মানিত হলাম।’ তিনি প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
লেখক কৃষিবিদ শোয়েব সাঈদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কবিপতœী শাহানা চৌধুরী, ফ্রান্স স্কুল বোর্ডের কমিশনার খোকন মনিরুজ্জামান, সাংবাদিক সুমন রহমান, ড. তরুণ চক্রবর্তী, ব্যবসায়ী শামীমুল হাসান, সাবেক আমলা মিহির পাল, লেখক বিদ্যুৎ ভৌমিক, মানবাধিকারকর্মী দিলীপ কর্মকার, কবি দেলওয়ার এলাহী, সাবেক শিক্ষক এম এ গণি, উদীচী মন্ট্রিয়েলের সভাপতি বাবলা দেব, কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির সভাপতি জিয়াউল হক, সাংবাদিক রুমু ইসলাম, লেখক রণজিত মজুমদার, সাংবাদিক দেওয়ান মনিরুজ্জামান, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট মমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ও গোপেন দেব।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল সংবর্ধিত কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা থেকে আবৃত্তি। পর্বটি পরিচালনা করেন সঞ্জীব দাস। আবৃত্তি করেন আফাজ উদ্দীন তোতন, অপরাহ্ণ সুসমিতো, মুফতি ফারুক, শামসাদ রানা, জয়নাল আবেদিন খান, শামীমা কালাম ও দেলওয়ার এলাহী।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণস্পর্শী। শিল্প-সাহিত্য-আড্ডার পরিচ্ছন্ন এক ভালো লাগার আমেজ নিয়ে অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরেন সবাই।