নিউজ ডেস্ক : চোখে যদি না থাকে আলো, তবে তার কাছে এ রঙিন সুন্দর পৃথিবী অন্ধকারময়। অন্ধ চোখে পৃথিবীর সবই কালো। তবে সেই অন্ধ চোখে আলো দেখাতে পারে মৃতের চোখ। সেটি অমর হতে পারে অন্যকে দানের মাধ্যমে। ঠিক তেমনিভাবে নিজের দৃষ্টিকে অমর করে রাখতে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে ও ভাষা শহিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে মরণোত্তর চক্ষুদান করেন কানাডা থেকে প্রকাশিত বঙ্গবাণী পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী রাসেল।

বিভিন্ন সামাজিক, ক্রীড়া ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মেহেদী রাসেল ইতিমধ্যেই তার প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটি সংগঠন “সৈয়দ মেহেদী রাসেল ফাউন্ডেশন” এর মাধ্যমে মানবসেবায় অনন্য ভ‚মিকা রেখে চলেছেন।

মরণোত্তর চক্ষুদান সম্পর্কে নিজের অনুভূতি প্রকাশে তিনি বলেন, আমি মরে যাবো, অথচ আমার চোখ দিয়ে আরেকজন মানুষ পৃথিবীর রূপ দেখবে- এরচেয়ে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে? এই সুন্দর বার্তাটা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার। আমি এখন থেকে সেই কাজটি আন্তরিকতার সঙ্গে করতে চাই।

তিনি আরো বলেন, আমি সব সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। যখন আমি পৃথিবীতে থাকবো না তখন আমার এই দুই চোখ দিয়ে যদি অন্য একটি মানুষ পৃথিবীর আলো দেখতে পায়, সেটাই হবে আমার বড় পাওয়া।

মৃত মানুষের চোখের কর্ণিয়া দিয়ে জীবিত অন্ধ মানুষের চোখে আলো ফেরানো সম্ভব। সারাবিশ্বে এই নিয়মে অন্ধজনে আলো ছড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদিও বাংলাদেশে এই রীতিটি এখনও প্রায় অন্ধকারে, নানা কারণে। দেশে অন্ধ মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। যার সাড়ে ৫ লাখ মানুষ কর্ণিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিহীন। এই মানুষদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে। বর্তমানে দেশের মোট মৃত লোকের শতকরা দুই ভাগও কর্ণিয়া সংগ্রহ করতে পারলে এসব ব্যক্তি পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে।

ধর্মীয় কুসংস্কার, প্রশিক্ষণের অভাব ও উত্সাহমূলক প্রচারণা কম থাকায় বাংলাদেশে মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো মহত কাজ থেকে পিছিয়ে আছে। বর্তমানে পৃথিবীর মরণোত্তর চক্ষুদানের অংশীদার শতকরা ৮০ ভাগ খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী। সেখানে মুসলমানরা এ কাজে শতকরা ০.১২ ভাগের অংশীদার। শুধুমাত্র ধর্মীয় গোঁড়ামী আমাদেরকে এ মহত কাজ থেকে পিছিয়ে রেখেছে, অথচ ১৯৬৯ সালে মালয়েশিয়া, ১৯৭২ সালে আলজেরিয়া, ১৯৭৭ সালে জর্ডান, ১৯৭৯ সালে সৌদী আরবে অনুষ্ঠিত আলেমদের সর্বোচ্চ কাউন্সিলে চিকিত্সার প্রয়োজনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের পক্ষে ফতোয়া জারি করে। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের ফিকাহ একাডেমীর অষ্টম সভায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও প্রতিস্থাপন ইসলাম ধর্মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মতামত প্রদান করে।