Home আন্তর্জাতিক ‘মরতেই যদি হয়, তবে বীরের মতো মরব’

‘মরতেই যদি হয়, তবে বীরের মতো মরব’

অনলাইন ডেস্ক : গাজার আলোকচিত্রী ফাতিমা হাসৌনা জানতেন, মৃত্যু তার দুয়ারে কড়া নাড়ছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা, ইসরায়েলের হামলায় নিজের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়া, বারবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া, আর পরিবারের ১১ সদস্যকে হারানোর মতো কঠিন সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি গেছেন। ১৮ মাস ধরে ইসরায়েলের চালানো অনেক নির্মমতা সহ্য করেছেন ক্যামেরাবন্দি। এ ভয়াবহ বাস্তবতার মাঝেও ফাতিমার একটাই চাওয়া ছিল– তার মৃত্যু যেন নৈঃশব্দে না হয়; তিনি যেনো নীরবে চলে না যান। পৃথিবী জানুক তিনি চলে গেছেন।

গাজার ফাতিমারা এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন না দেখে এভাবেই অনাগত নির্মম মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ইসরায়েলের অবিরাম বোমা হামলার মধ্যে তাদের এখন তেমন কোনো প্রত্যাশা নেই। সহায়-সম্বল, স্বজন হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইলে ফাতিমা লিখেন, ‘আমি মরলে, আমার সেই মৃত্যু যেন গর্জে ওঠে। আমি যেন শুধু একটুখানি খবর বা কোনো সংখ্যায় পরিণত না হই। আমি চাই এমন এক মৃত্যু, যা দাগ কেটে যাবে সময়ের বুকে, যার ছবি কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।’

গত বুধবার উত্তর গাজায় নিজ বাড়িতে বিয়ের একদিন আগে ২৫ বছরের ফাতিমা হাসৌনা ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। সঙ্গে মারা গেছেন গর্ভবর্তী বোনসহ তার পরিবারের আরও ১০ সদস্য।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, তাদের নাগরিক ও সেনাদের ওপর হামলায় জড়িত এক হামাস সদস্যকে লক্ষ্য করে তারা এ হামলা চালিয়েছে।

ফাতিমার মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে ঘোষণা আসে যে, তাকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে ফ্রান্সের একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে, যা কান চলচ্চিত্র উৎসবের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়। ইরানি নির্মাতা সেপিদেহ ফারসি নির্মিত সেই প্রামাণ্যচিত্রের নাম ‘পুট ইউর সৌল অন ইওর হ্যান্ড এন্ড ওয়াক’। এতে ফারসি ও ফাতিমার ভিডিও কথোপকথনের মাধ্যমে গাজার জীবন আর যুদ্ধের ভেতর মানুষের টিকে থাকার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

ফারসি এটাকে বর্ণনা করছেন, ‘ফাতিমা যেন গাজায় আমার দৃষ্টিতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অগ্নিকন্যা, পূর্ণ ছিলেন জীবনে। আমি তার হাসি-কান্না, আশা ও নৈরাশাকে ফ্রেমবন্দি করেছি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান।’

ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবনযাপন করা ফারসি বলেন, তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে ফাতিমাকে একজন আলোকচিত্রী হিসেবে তার বহুল প্রচারিত কাজের জন্য ও সম্প্রতি তথ্যচিত্রে অংশ নেওয়ার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। তার সে আশঙ্কাই সত্যি হল।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক জায়গা, যেখানে ২০২৩ সাল থেকে ১৭০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তবে কেউ কেউ এ সংখ্যা ২০৬ জন বলেও উল্লেখ করেন। নিহতদের মধ্যে আল-জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক রয়েছেন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Exit mobile version