Home সাহিত্য মানবজীবন

মানবজীবন

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<p><strong>তসলিমা হাসান &colon;<&sol;strong> à§§&period;<br &sol;>&NewLine;জমিলার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে ছগির গ্রামের মাদ্রাসার ইমাম আর বড় ছেলে নাসির দিনে বাজারে তরকারি বেঁচে&comma; রাতে সে চোর।<&sol;p>&NewLine;<p>ছোট ছেলে মো&period; ছগির উল্লাহর বয়স যখন সাত তখন জমিলার জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে চারদিক পানিতে ভরপুর। গ্রামের রাস্তা কাঁদায় পিছিল হয়ে আছে। সেরকম একদিনে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নাসিরের বাবা নিরুদ্দেশ হয়েছিলো। মানুষটা ছিলো ঠান্ডা প্রকৃতির। গান বাজনা করতেন। আবার নিজে নিজে গান বানতেন। গ্রাম-গঞ্জ থেকে গানের আসরের জন্য বায়না করে যেতো। শীতকালে বেশি বায়না আসতো। রাতভর গান-বাজনা চলতো। আয় রুজি বলতে এই ছিলো। আর জমিলা মাতবরের বাড়ি কাজ করে যা পেতো তাই দিয়া কোনমতে সংসারটা চলতো। একটা চাষের জমি বর্গা দেওয়া থাকতো সেটা দিয়া ৬ মাসের চাল আসতো।<&sol;p>&NewLine;<p>জমিলার এই গান-বাজনা পছন্দ হতো নাহ। সে মনে মনে ভাবতো&comma; পুরুষ মানুষ গতর খাটাইয়া রুজী করবো&excl; গান-বাজনা হইলো শখের কাম&excl; কিন্তু মুখ ফুটে সে এই কথা কখনো বলতে পারে নাই&comma; মানুষটা কষ্ট পাবে ভেবে।<&sol;p>&NewLine;<p>মাত্র à§§à§­ বছর বয়সে তার বাবা এই লোকের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দিলো। জমিলার শ্বশুর তাকে পছন্দ করে ছেলের বৌ করে আনে। বিয়ের পরের দিন জমিলাকে ডেকে বলে&comma; আমার একখান পোলা। তারে আমি মানুষ বানাতে পারলাম না। কিছু দূর পড়াইছি অনেক কষ্টে। হেই শুধু গান নিয়া পইরা থাকে। আমার এই ভিটাখান আর একখান চাষের জমি আছে। তারে কই&semi; নিজেগো জমিখানে নিজেরাই দেখভাল কইরা চাষাবাদ করি বাপ-পোলায় মিইল্লা। কিন্তু সে কয় জমি বর্গা দিয়া দেন। হেয় গান ছাড়া পৃথিবীর কিছুই বুঝে নাহ। তুমি তারে ঘরে ফেরাও গো&comma; মা। তোমার কাছে আবদার আমার&comma; তুমি তারে সংসারী করো। জমিলার ছোট মাথায় কি ঢুকলো সে জানে না&comma; শুধু মাথা কাত করে সায় দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।<&sol;p>&NewLine;<p>সংসারী করতে পারলো না জমিলা তাকে। বরং ছোট ছেলেটা হওয়ার দুই বছর পর যখন তার শ্বশুর মারা গেল তারপর থেকে যেন আরো বাহির মুখী হলো তার স্বামী। প্রায়ই বলতো&comma; সংসার আমার ভালো লাগে নাহ&excl; দেশান্তরী হইবার মন চায় শুধু। তারপর একদিন একটা চিঠি লিখে সে কোথায় চলে গেল কেউ জানে না। মানুষ হারিয়ে গেলে তাকে খোঁজ করে হয়ত পাওয়া যায় কিন্তু যে নিজে ইচ্ছে করে হারায় তাকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।<&sol;p>&NewLine;<p>নাসিরের বাবা বিভিন্ন জায়গায় গানের আসরে টাকা-পয়সা যা পেতো তাই দিয়ে কোনমতে সংসারটা চলতো আর জমিলার কাজের টাকাটাও বিপদে-আপদে কাজে লাগতো। শ্বশুরের বিরাট অসুখ হয়েছিলো। সেই অসুখে একপাশ অবশ হয়ে গেল। নড়াচড়া করতে পারতো না। আর ঐ অসুখের সময় চাষের জমিটাও বিক্রি করতে হলো ওষুধ আর ডাক্তার খরচের জন্য। মা মরা ছেলেকে বুকে তুলে মানুষ করেন জমিলার শ্বশুড়। ছেলেকে সত মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার ভয়ে আর বিয়ে করেন নাই। নাসিরের বাবা নিজের বাবার অসুখের সময় সেই ঋণ একটু হইলেও শোধ করতে পেরেছে। বাবাকে নিজ হাতে খাওয়ানো&comma; গোসল সব করতো সে। এমনকি জমি বিক্রি করতেও দুইবার ভাবে নাই।<&sol;p>&NewLine;<p>কিন্তু স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ায় পর শুধু জমিলার মাতবরের বাসার কাজের টাকা দিয়ে সংসার চলানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও মাতবর সেকেন্দার আলী ভালো মানুষ। জমিলাকে সব সময়ই মেয়ের মতো দেখতেন। জমিলাও খুব সত। বহু অভাবেও সে কখনো না বলে কিছু ধরতো নাহ। এমনকি মুখ ফুটিয়ে এটা-ওটা চাওয়ার অভ্যাসও তার ছিলো না। এসব কারণে মাতবরের বৌও তাকে খুব স্নেহ করতেন। ঘোর অন্ধকারে সেকেন্দার আলীর ঐ জ্বেলে দেওয়া আলোটুকুর ভরসায় বেঁচে থাকতে শুরু করেছিলো তারা তিনজন।<&sol;p>&NewLine;<p>২&period;<br &sol;>&NewLine;নাসির ছোট বেলা থেকেই ডানপিটে। তার সারাদিনের কাজ ছিলো লাটিম&comma; মারবেল&comma; ঘুড়ি&comma; গুল্টি বাস&comma; পুকুরে ডোবানো। জমিলার শরীরের রক্ত পানি হয়ে গেছে তাকে মক্তব পর্যন্ত পড়াতে। তারপর যখন নাসিরের বাবা চলে গেলো তখন শুরু হলো আরেক অশান্তি। হঠাত সে চুরি করা শুরু করলো। কিন্তু সে খুব অদ্ভুত চোর। কোনদিন সে চুরির জিনিস ঘরে আনতো না। বাগানে বসে ছেলেপেলে নিয়ে সেগুলো খেয়ে ফেলতো। আর কোন ঘরে ঢুকে সে বড় কিছু চুরি করতো নাহ&comma; হাতের নাগালে থাকলেও। চাল-ডাল&comma; হাঁস-মুরগি এগুলোই ছিলো তার চুরির জিনিস। কিন্তু চুরি সে করবেই&comma; বহুবার মারধর খেয়েও সে চুরি ছাড়লো নাহ।<&sol;p>&NewLine;<p>নাসির ছগির বড় হলো। ছগির কোরআন খতম দিলো মাত্র ১০ বছর বয়সে। সুর করে সে যখন কোরআন তেলাওয়াত করে তখন রাস্তার লোকজন দাঁড়িয়ে তার তেলাওয়াত শুনে। তার তেলাওয়াত শুনে মানুষের চোখে পানি আসে। তার এই সুন্দর তেলাওয়াতের জন্য গ্রামের লোকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো সগির হবে তাদের মাদ্রাসার ইমাম। তখন সগিরের বয়স ১৯। সে ইমাম হওয়ার পর থেকে জমিলাকেও মাতবরের বাড়ির কাজ থেকে বাদ দেওয়া হলো। ইমামের মা হিসেবে তার একটা আলাদা মর্যাদা আছে। তাই কাজটা বাদ হলেও মাতবরের বাসা থেকে জমিলার সংসারের নিয়মমাফিক কিছু বাজার পাঠিয়ে দেওয়া হতো।<&sol;p>&NewLine;<p>কিন্তু সগিরের সম্মান-মর্যাদা ধূলোয় মিশে যায় যখন নাসির রাতের অন্ধকারে চুরি করে আর ধরাও পরে মাঝে মধ্যে। বহুবার সে তার মা এমনকি এক-দুবার ছোট ভাইয়ের হাতেও মার খেয়েছে। তবে নাসির কখনো তর্ক করে নাহ। মার খাওয়ার সময়ও সে চুপ করে থাকে। একবার সগির তার কপাল বরাবর লাঠি দিয়ে বারি দিয়েছিলো। কপাল বেয়ে গলগল করে রক্ত পরা শুরু হলো অথচ সে নির্বিকার দাঁড়িয়েই রইলো। শেষে জমিলা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।<&sol;p>&NewLine;<p>জমিলা বুঝে&comma; তার এই ছেলেটা একটু অন্য রকম। বাপ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর সে বহুদিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়েছিলো। সারাদিন শুধু এদিক-ওদিক ঘুরতো। জমিলাও প্রথম কয়েকদিন শোকে পাথর হয়ে রইলো। তারপর জমিলা এক সময় ছেলে দুটোর জন্য সংসারে মন দিলেও নাসির যেনো কেমন একটা হয়েই রইলো। চুরি করে সে কি আনন্দ পায় তার কোন ব্যাখ্যা নেই। সংসারের সবার জন্য তার মায়া। কোনদিন সে তার ভাই বা মায়ের সাথে বাজেভাবে কথা বলেনি। কিন্তু চুরিটাও সে করবেই করবে।<&sol;p>&NewLine;<p>সকালে গোসল শেষে মাথায় তেল দিয়ে ধোয়া লুঙ্গি পরে যখন সে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন কেউ তাকে দেখে বুঝবে না এই ছেলে রাতে শরীরে তেল মেখে মাঝে মধ্যে চুরি করতেও বের হয়।<&sol;p>&NewLine;<p>à§©&period;<br &sol;>&NewLine;এক হাত লম্বা একটা কচি লাউ এনে রান্নাঘরের সামনে রাখলো নাসির। সাথে এক পোটলা ছোট চিংড়ি মাছ। জমিলা মাত্রই রান্নাঘর থেকে বের হতে যাচ্ছিলো&comma; বেলা তো কম হলো না। কলমি শাক আর ডালের বড়া বানিয়েছে সে। এইসময় এগুলো দেখে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এহন এগুলান আনছোস&comma; নাসির&quest; কে এডি এহন করবো&excl; গোসলে যামু ভাবলাম&excl; যোহেরের ওয়াক্ত না শেষ হইয়া যায়&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>নাসির কথাগুলোর উত্তর না দিয়ে সোজা ঘরে চলে গেলো। তারপর ঘরে হাতের বাকী জিনিসগুলো রেখে এসে বললো&comma; তুমি যাও মা। আমি এগুলান সব করতাছি। বলেই বটি নিয়ে লাউ কাটা শুরু করলো।<&sol;p>&NewLine;<p>জমিলা ঘরে যেতে যেতে ভাবলো&comma; দুইদিন আগে সগির রাতে খাওয়ার সময় বলেছিলো&comma; চিংড়ি দিয়া লাউ এর সালুন খাইতে মন চায়&comma; মা। তয় এহন আর্শ্বিন মাস। লাউ পাওন যাইবো কিনা কে জানে&excl; মাঠির চুলায় রান্না শেষে যখন লাউ চিংড়ির উপর ধইন্না পাতা দেওন হয়&comma; কি সুন্দর যে সে সুবাস&excl; মনে কয়&comma; বেহেস্তী খানা।<&sol;p>&NewLine;<p>নাসির এমনিতেই কম কথা বলে। তার উপর ছোট ভাইয়ের হাতে মাইর খাওয়ার পর থেকে তার সাথে একদমই কথা বলে না বললেই চলে। কিন্তু ছোট ভাইয়ের জন্য তার অনেক দরদ। সেটা জমিলা টের পায়। এদিকে সগির সব দিক থেকে ভালো হলেও তার মধ্যে মায়া মমতা বরাবরই কম। সব সময়ই সে তার নিজের সখ আহ্লাদ বা নিজের ভালোমন্দের চিন্তায় থাকে। এতটুকু বয়স থেকেই সে টাকা-পয়সা কিভাবে সঞ্চয় করবে সে হিসাব করা শুরু করছে। সংসারের জন্য এক টাকাও সে বেশি খরচ করে নাহ। যতটুকু খরচ হয় সে আর সগির সমান ভাগ দেয়।<&sol;p>&NewLine;<p>খেতে বসে সগির বললো&comma; মা&excl; আগামী শুক্রবার তোমারে নিয়া নবীনগরে একটা মাইয়া দেখতে যাবো। আমাগো গ্রামের জয়নাল চাচা সমন্ধটা আনছে।<br &sol;>&NewLine;নাসির লাউ-এর বাটিটা ভাইয়ের দিকে ঠেলে দিলো। জমিলা হঠাত্ বুঝতে না পেরে বললো&comma; ক্যান&quest; মাইয়া দেখুম ক্যান&quest;<br &sol;>&NewLine;বয়স মতো বিয়া করন ফরয&comma; সেই জন্য।<br &sol;>&NewLine;ও&excl; আমগো সগিরের কতো খেয়াল&excl; ভাইয়ের জন্য সে কতো ভাবে&comma; আল্লাহ গো। তৃপ্তির একটা হাসি মুখে এনে বললো জমিলা।<br &sol;>&NewLine;মেয়ের পরিবার শুনছি পরহেজগার। তার উপর মেয়ে পাঁচ ক্লাস পাস দিছে। বাপের জমিজিরাতও কিছু আছে।<br &sol;>&NewLine;এহন কও দেহি এমন মাইয়ারে তোমার চোর পোলার জন্য কেউ দিবো কিনা&excl; বাটির তরকারিটা প্লেটে ঢেলে নিতে নিতে বললো সগির।<br &sol;>&NewLine;জমিলা এতক্ষণে বুঝতে পারলো সগির তার নিজের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার বন্দোবস্ত করছে। সে চুপ করে তাকিয়ে রইলো সগিরের দিকে। আর নাসির নির্বিকার তার থালার শেষ লোকমাটা মুখে দিয়ে উঠে পড়লো। যেন কোন কথাই তার কানে পৌঁছেনি।<&sol;p>&NewLine;<p>৪&period;<br &sol;>&NewLine;খেয়া পারাপারের নৌকা এসে ভীড়লো লালদিঘীর বন্দরে। নৌকার ছইয়ের ভেতর থেকে একটু সামনে এসে বসলো জমিলা। বোরখার ওড়নাটা মাথার উপর তুলে দিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বাইরে। কত কত নৌকা ট্রলার আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে ভীড়ে এই বন্দরে। বহুদিন পর সে লালদিঘীতে আসলো। এখানে গঞ্জের বড় বড় ডাক্তার বসে। বাজারে ওষুধের দোকান&comma; বড় বড় কাপড়ের দোকান আরো কত কি আছে।<&sol;p>&NewLine;<p>সগিরের একবার অনেক খারাপ জ্বর হইছিলো। কি এক দূষন হইলো রক্তে&excl; লালদীঘির গঞ্জের বড় ডাক্তার দেখানোর পর অসুখ কমলো। নাসিরের বাবা তখন নিরুদ্দেশ। ডাক্তারের পরামর্শে সাতদিন ওষুধ খাওয়ানোর পর আবার আসতে হয়েছিলো এখানে। ঢাকা থেকে বাস এসে থামেও এই বাজারের থেকে একটু দূরে&comma; দেখেছিলো সে তখন। ডাক্তারের ওষুধ খাওয়ার সাত দিন পর আবার এসেও সে ঘুরে ফিরে দেখলো কতকিছু। তবে তার চোখ খুঁজে ছিলো অন্য কাউকে। মনের মধ্যে হাহাকার ঠেলে প্রাণটা বের হয়ে যাচ্ছিলো তার হারিয়ে যাওয়া স্বামীর খোঁজে। কোথাও যদি তার দেখা পাওয়া যেতো&excl; সে তার পা দু’টো জড়িয়ে ধরে বসে থাকতো আমৃত্যু। তাকে না নিয়ে সে ফিরতো না। দরকার হলে প্রাণটা তার স্বামীর পায়ের কাছে বের হয়ে যেতো তাও সে নাসিরের বাবাকে না নিয়ে ফিরতো না। সে তাকে বলতো&comma; তার নিরুদ্দেশের পর কত কত রাত সে অপেক্ষায় দরজায় বসে ছিলো। তাকে বলতো&comma; নাসিরকে সে দেখেছে এখনো বাবার জন্য নিরবে চোখের পানি ফেলতে। অনেকগুলো দীর্ঘশ্বাস জমাট বেঁধে বুকের ভেতর আটকে রইলো জমিলার। আর সেই দিশেহারা দৃষ্টি আগের মতোই খুঁজে নিচ্ছিলো হারিয়ে যাওয়া স্বামীর খোঁজ।<&sol;p>&NewLine;<p>কিছুক্ষণ পর মিষ্টি নিয়ে ফিরে এলো সগির আর জয়নাল ঘটক। নৌকা আবার ঘাট ছেড়ে বের হতে থাকলো নবীনগরের উদ্দেশ্যে। ঐ গ্রামেই তারা সগিরের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছে।<br &sol;>&NewLine;বন্দর ছেড়ে বের হয়ে আসে নৌকা। জমিলার অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে পানি পড়তে থাকে। আজ কত বছর হলো&comma; তবুও সে ঐ মানুষটার ফিরে আসার অপেক্ষা করে। তার ফিরে আসার জন্য সে নিরবে নিভৃতে কাঁদে। জায়নামাজে বসে জমিলা আকুল গলায় দোয়া করে তার স্বামীর ফেরার জন্য। সে ভাবে&comma; তার স্বামী ফিরলে নাসির আর চুরি করবে নাহ। নাসির তো এমন ছিলো না&excl; বাপ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর থেকে ছেলেটা কেমন হয়ে গেলো। কত দিন নাসির কথা বললো নাহ কারো সাথে। খাওয়া নেই&comma; দাওয়া নেই সারাক্ষণ বসে থাকতো খেয়াঘাটের পাশে দাঁড়ানো একটা নারকেলগাছ তলায়।<&sol;p>&NewLine;<p>জমিলার প্রাণটা চৈত্র মাসের দাবদাহে খটখটে মাটির মতোন হয়ে আছে তাকে একবার দেখার আশায়।<&sol;p>&NewLine;<p>à§«&period;<br &sol;>&NewLine;ধবধবে ফর্সা একটা ছোটখাটো মেয়ে খাটের কোণা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সগির আর তার মা এসেছে জয়নাল ঘটকের সাথে মেয়ে দেখতে। মেয়ে মাশাল্লাহ সুন্দর। নাসিরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করছে মেয়েকে দেখার পর থেকে। কয়েকবার সে মাথা উঁচু করে দেখলো মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানটাকে।<br &sol;>&NewLine;ঠিক সেই মুহূর্তে জয়নাল চাচা গলা পরিস্কার করে বললো&comma;<br &sol;>&NewLine;মাইয়ারে তুমি কিছু জিগাইবা&comma; নাসির বাবা&quest;<br &sol;>&NewLine;একটুক্ষণ বিরতির পর নাসির বললো&comma;<br &sol;>&NewLine;আপনার নাম কি&quest;<br &sol;>&NewLine;জড় পদার্থের মতো মেয়েকে চুপ থাকা দেখে পাশে দাঁড়ানো একজন মহিলা বললো&comma; মাইয়ার নাম পুতুল।<br &sol;>&NewLine;মুসলমান ঘরের মেয়ের নাম পুতুল&excl; নাসির আর কোন কথা জানতে চাইলো নাহ। সেদিন আর কোন কথা এগুলো না&comma; ঐখান থেকেই তারা বিদায় নিয়ে চলে আসলো ভালোভাবে। তবে নাসির মেনে নিতে পারলো না&comma; মানুষের নাম কেনো হবে পুতুল&excl; আল্লাহ তালার সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ। নিজ হাতে তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তারপর সেই মানুষের ভেতর তিনি জীবন দান করেন। আর সেই মানুষের নাম কেউ রাখে নাজায়েজ পুতুল&excl;<br &sol;>&NewLine;এই মেয়েকে সে বিয়ে করবে না বলে পরের দিনই খবর দিয়ে দিলো জয়নাল চাচাকে।<&sol;p>&NewLine;<p>৬&period;<br &sol;>&NewLine;জমিলার স্বামীর নাম মো&period; শরিফ উল্লাহ। গায়ের লোক তাকে শফু গাতক বলে ডাকতো। শফু গাতক খুবই ভালো মানুষ। কখনো কারো সাথে তার বাকবিতণ্ডা হতে দেখেনি কেউ। গলায় ছিলো অসম্ভব তীক্ষ্ম সুর। সে যখন গান ধরে&comma; রাস্তার লোকজন কাজ ফেলে দাঁড়িয়ে তার গান শুনতে থাকে। আশেপাশে ভীড় জমে যায়। শফু গাতক আজ à§§à§« বছর ধরে তার ওস্তাদ জাকির শেখ এর সাথে গাও গ্রামে ঘুরে ঘুরে গান গায় আর গান বাঁধে। দেশের উত্তর দিকের নীল হাতি এক গ্রামে এখন তাদের বাস।<&sol;p>&NewLine;<p>শফু গাতকের শরীরটা আজকাল ভালো থাকে নাহ। সত্যি বলতে তার মনটাই আজকাল খুব অস্থির হয়ে উঠেছে। অথচ কোন কারণও সে খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু এ কথা সে তার ওস্তাদকে বলতেও পারছে না। ওস্তাদ জাকির শেখ তাকে পুত্রের মতো স্নেহ করে। কখনো বাবা ছাড়া শফুকে ডাক পর্যন্ত দেন নাহ।<&sol;p>&NewLine;<p>তিনি বলেছিলেন&comma; শিল্পী হওয়া সহজ না&comma; বাবা শরীফ। শিল্পী হইতে হইলে জীবনে বড় কষ্ট থাকোন লাগে। মনের মধ্যে উথাল-পাতাল কষ্ট হইলেই গলায় সুর বসে। সংসারের মায়ায় ভালোবাসার বন্ধনের মধ্যে পইড়া রইলে কষ্ট কি বুঝোন যায় না। শূন্য বুকে সুর বাসা বানতে পারে। বুকে যদি বৌ পোলাপান বাস করে সেখানে সুর বইবো কই&comma; কয় দেহি&comma; বাবা&quest;<br &sol;>&NewLine;ওস্তাদ যখন এইসব কথা বলতো&comma; শফু গাতক তখন কেমন নেশায় বিভোর হয়ে তার কথা শুনতে থাকতো। তার তখন কোনকিছুর খেয়াল থাকতো না। কেবল মনে হতো&comma; কবে সে ওস্তাদের মতো বিবাগী হতে পারবে&excl; কবে সে শূন্য বুকে সুরের বাসা বানতে পারবে&excl; আর সেই সুর গলায় এসে নেশার ঘোর ধরাতে পারবে মানুষের অন্তরে&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>এরপর সে একদিন সংসার ছেড়ে বের হয়ে ওস্তাদের সাথে দেশান্তরী হয়। এতোগুলা বছর ধরে সে শূন্য বুকের ভেতর সুরের বাসা বানায়। গলায় আজ তার নেশাতুর সুর।<br &sol;>&NewLine;কিন্তু হঠাত এত বছর পর আজ কয়েক মাস ধরে তার বুকের ভেতর কেমন একটা খা খা শুরু হয়েছে। খালি বুকটা তার গান গাইতে গাইতে ভারী হয়ে উঠে আজকাল&comma; এমনকি দু-চোখ ভরে কান্না চলে আসে নিজের অজান্তেই। আগে তো এমন হতো নাহ&excl; প্রথম প্রথম সেও বুঝতে পারতো নাহ তার কেনো এমন হচ্ছে। আবার ওস্তাদ যাতে ব্যাপারটা ধরে ফেলতে না পারে তাই সে যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে রাখতো। কিন্তু তার মনের কষ্ট ঢাকতে গিয়ে সে শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হতে থাকে। খাওয়াদাওয়াও আজকাল গলা থেকে নামে নাহ। গলার মধ্যে কেমন একটা পাথর আটকে আছে। কিছু গিলতে গেলে সেই পাথরের ধাক্কায় খাবার ফিরে আসে মুখে। আস্তে আস্তে তার শরীরও শুকিয়ে হাড্ডির সাথে চামড়া লেগে যেতে শুরু করলো।<&sol;p>&NewLine;<p>অদ্ভুত এই দুনিয়া। বাবা বড় গাতক&comma; তার গলায় মধুর সুর। ছোট ছেলেও সেই সুর পেলো কিন্তু সে মসজিদের ইমাম। আর বড় ছেলে আজকে সমাজে চোর বলে পরিচিত।<br &sol;>&NewLine;হায়রে জীবন&excl;<br &sol;>&NewLine;হায়রে মানুষ&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>à§­&period;<br &sol;>&NewLine;দোতলা কাঠের ঘর জমিলাদের। নিচে দুইটা ঘর পাশাপাশি আর উপরে একটাই। উপরের ঘরটায় এখন সগির একা থাকে। নিচের সামনে ঘরটায় নাসির আর ভেতরে জমিলা থাকে।<br &sol;>&NewLine;এশার নামাজের পর একটু রাত করেই সগির ঘরে আসে সাধারণত। এশার পর মসজিদে বসে মুরুব্বিদের সাথে দেশের পরিস্থিতি অথবা গ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে আলাপআলোচনা করে। আজকে কিছুতেই মন দিতে না পারায় চলে আসলো নামাজ শেষ করেই। মায়ের ঘরে এসে দেখলো জমিলা নামাজের পাটিতে আর জমিলার খাটে নাসির কাত হয়ে শুয়ে আছে। খাটের লাগোয়া ব্যাড়ায় ওদের বাবার একটা হাতের ছাপ আছে। তাদের বাবা একবার কোথা থেকে একটা কমলা রঙের কৌটা এনে একটা জলচৌকি রঙ করেছিলো নিজের হাতে। কাজ শেষে হাতে রঙ লাগিয়ে তার একটা হাতের ছাপ দেয় ব্যাড়ায়।<&sol;p>&NewLine;<p>ছোট বেলায় নাসির বাবার ঐ বড় হাতের ছাপটায় নিজের ছোট হাতটা রেখে বলতো&comma; আমার হাতডা কবে এমুন বড় হইবো&comma; বাপজান&quest; এই কথা শুনে শফু হাসতো আর নাসিরকে বলতো&comma; এই তো আর কয়টা দিন গেলেই তোমার হাতখান বাপজানের চেয়েও বড় হইবো&excl;<br &sol;>&NewLine;এখনো মাঝে মধ্যে ঐ হাতের ছাপের মধ্যে নিজের হাতটা রেখে তাকিয়ে থাকে নাসির। এখন সত্যি তার হাতটা ঐ হাতের মধ্যে ঠিকঠাক এঁটে যায়।<&sol;p>&NewLine;<p>à§®&period;<br &sol;>&NewLine;আশ্বিন মাসেই উত্তরের এই দিকটায় একটু একটু করে শীত পড়তে শুরু করে। দিনে গরম এবং রাতে শীত। গরম ঠান্ডার এই রেসারেসির মধ্যে পড়ে সবারই একটু জ্বর সর্দি দেখা দেয়। আর এই শীতের শুরুতে এবার শফু জ্বরে পড়লো মারাত্মক। জ্বর যত না তাকে কবু করলো তারচেয়ে খাওয়া দাওয়া না করার ফলে সে অনেক কাহিল হয়ে পড়লো। কেউ না ধরলে সে একা একা উঠতেও পারছে না আজকাল। শফু যতই মুখে না বলুক ওস্তাদ জাকির শেখ বুঝতে পারে শফুর মন ছুটে গেছে তার ফেলা আসা গাঁয়ে। তার বুকের ভেতর এখন সংসার&comma; সন্তান এবং স্ত্রীর জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। আর ওষুধ পত্র দিয়ে তার রোগ সারানো গেলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো খুবই জরুরি। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো খুব শীঘ্রই শফুকে তার গাঁয়ে পাঠানো হবে। সে নিজে তার ফেরার সব বন্দোবস্ত করতে আরম্ভ করলো।<&sol;p>&NewLine;<p>৯&period;<br &sol;>&NewLine;পুতুলের সাথে বিয়ে না করে দেওয়ার পর আরেক বিপত্তি দেখা দিলো। সগিরের মনটা কেমন উদাস হয়ে রইলো সারাক্ষণ। কিছুতেই সে কোন কাজে মন বসাতে পারছে না। এমনকি আজকাল পুতুলকে স্বপ্নেও দেখতে শুরু করেছে। যে মেয়েটার গলার স্বর অবধি সগির শুনলো নাহ সে কিনা স্বপ্নে এসে তার সাথে গুটুর গুটুর করে গল্প করে&excl; কি তাজ্জব কাহিনী।<&sol;p>&NewLine;<p>এইতো সেইদিন সে ভোরবেলা স্বপ্নে দেখলো&comma; খুব কারুকার্য করা একটা খাটের মাঝখানে পুতুল মাথায় ঘোমটা টেনে বসে আছে। সগির একটা লাল পাঞ্জাবি পড়া। লাল এবং হলুদ রঙ সে পড়ে না&comma; স্বপ্নের মধ্যেও সে ভাবলো&comma; এটা স্বপ্ন বলেই লাল পাঞ্জাবি পড়া সম্ভব। এরপর মৃদু পায়ে সে খাটের কাছে এসে দেখলো&comma; মেয়েটা মাথা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে কাঁদছে। সগির খুব অস্থির বোধ করলো। কি এমন কষ্টে মেয়েটা এভাবে কাঁদে&excl; তার খুব অস্থির লাগলো। সে সামান্য গলা পরিস্কার করে জানতে চায়&comma; আপনি কাঁনতেছেন ক্যান&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>এবার পুতুল একটু থামলো&comma; মাথাটা একই রকম নুইয়ে রেখে ফিসফিস করে বললো&comma; শুধু একখান নামের জন্নে আপনি আমারে বরখাস্ত করলেন&comma; হুজুর&quest; এই অপমান নিয়া ক্যামনে বাঁচবো আমি&quest; ক্যামনে মাইনষেরে মুখ দেখাবো&comma; বলেন&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>এরপর ঘোমটা সামান্য ফাঁক করে চোখ তুলে তাকালো সে সগিরের দিকে। সেই ডাগর কালো চোখ দেখে নিজের অজান্তেই সগিরের মুখ থেকে বের হয়ে আসলো&comma; সুবহানাল্লাহ&excl; সুবহানাল্লাহ&excl; আর সাথে সাথে নিজের উচ্চারিত শব্দের আওয়াজে তার ঘুমও ভেঙে গেলো।<br &sol;>&NewLine;কাত হয়ে শুয়ে থাকা শরীরটা ঘামে ভিজে উঠেছে। সে মাথার উপর ঘুরতে থাকা পাখাটার দিকে তাকালো। বোঝার চেষ্টা করলো&comma; সে সত্যি এখন কোথায়&excl; তার ঘরের ভেতর আধ খাওয়া চাঁদের সুতোর মত একটা আলোর রসি এসে পড়েছে। সেই আলোয় সে বুঝতে পারলো এটা তার ঘর আর খাটের উপর কেউ নেই। একটু ধাতস্থ হয়ে সে উঠে বসলো। তারপর পুনরায় স্বপ্নটার কথা তার খেয়ালে আসলো। ঠিক কতক্ষণ সে স্থির হয়ে বসে ছিলো জানে না। যখন দূর থেকে ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ কানে আসলো ঠিক তখনই সে সিদ্ধান্তটা পাল্টালো। এই মেয়েকেই সে বিয়ে করবে। এই মেয়েকে সে মনে স্থান দিয়ে ফেলেছে। আর তাই তার কোন কাজে মন বসে না&comma; জাগরণে স্বপ্নে তাকেই সে দেখছে। কিন্তু তাদেরকে শর্ত দিবে&comma; পুতুলের নাম পরিবর্তন করে খাদিজা রাখতে হবে। শরীয়তে নিয়ম আছে&comma; আকিকা দিয়ে নাম পরিবর্তন করা যায়। আমাদের নবী সাঃ এর চারজন স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমতী এবং সুন্দরী ছিলেন খাদিজা রহঃ। পুতুলের নাম পরিবর্তন করে খাদিজা বেগম নাম রাখবে সগির।<&sol;p>&NewLine;<p>১০&period;<br &sol;>&NewLine;ফজরের নামাজ শেষে সগির পেছনের সারির দিকে তাকিয়ে জয়নাল চাচাকে চোখ ইশারায় তার কাছে আসার ইঙ্গিত করলো। ঘটক চাচা বুঝতে পেরে একটু অপেক্ষা করলো মুসল্লীদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য। তারপর মসজিদ ফাঁকা হয়ে গেলে সে সগিরের কাছে এসে দাঁড়ালো। বাইরে শীতের সকালের হাওয়ায় বেশ ঠান্ডা লাগছিলো। উলের চাদরে শরীরটা ভালো করে ঢেকে সগিরের সামনে বসলেন তিনি। রোজ ফজর নামাজ শেষে সগির কিছু দোয়া দুরুদ পড়ে একটু শব্দ করে। দরুদপাঠ শেষ করে সগির দীর্ঘ মোনাজাত করলো। জয়নাল ঘটকও সেই মোনাজাতে অংশগ্রহণ করলো আজ।<&sol;p>&NewLine;<p>মোনাজাত শেষে ঘুরে মুখোমুখি বসলো জয়নাল চাচা আর সগির।<br &sol;>&NewLine;চাচা&excl; আমি ঐ মাইয়ারেই বিয়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আল্লাহ চাহেতো আপনি আমার মত পরিবর্তনের এই কথা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। তবে একখান শর্ত আছে&excl; জয়নাল ঘটক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সগিরের দিকে। তারপর শর্ত শুনে তিনি বললেন&comma; এইডা খুবই উত্তম প্রস্তাব&comma; বাবা&excl; আমি আইজকাই নিজে গিয়া মাইরার বাবারে তোমার এই মত পরিবর্তনের কথা জানাবো। আর তুমি নিশ্চিন্তে থাইকো&comma; তারা তোমার এই শর্তে অরাজি হইবো না। তুমি বরং বিয়ের তারিখটাও ঠিক কইরা রাখো সুবিধা মতন।<&sol;p>&NewLine;<p>ভোরের আলোর মতো ঝলমলে হয়ে উঠলো সগিরের মন। আজকের ভোরের সোনালি রোদ্দুর যেনো অন্য রকম একটা আনন্দ ছড়িয়ে দিলো পুরো মসজিদে। সেই হলদে রঙের আলোর দিকে তাকিয়ে সগির কতক্ষণ বসে ছিলো সে জানে নাহ। বিয়ের আয়োজন&comma; কেনাকাটা&comma; তারিখ খরচাপাতি সর্বাপরি পুতুলের মুখখানা চোখের উপর ভাসতে থাকলো তার সারা সকাল ঝুড়ে।<br &sol;>&NewLine;বেলা পড়ে এলে একজন লোক এসে দাঁড়ালো সগিরের সামনে।<br &sol;>&NewLine;হুজুর&excl;<br &sol;>&NewLine;স্বপ্নের ঘোর থেকে বাস্তবে এসে হঠাত উত্তর দিতে পারলো না সগির। তার ওমন নিথর দৃষ্টি দেখে লোকটি বললো&comma;<br &sol;>&NewLine;হুজুরের শইলডা খারাপনি&quest;<br &sol;>&NewLine;এবার সগির উঠে দাঁড়িয়ে বললো&comma; নাহ&comma; বলো কি সংবাদ&quest;<br &sol;>&NewLine;আপনার আম্মা আপনার খোঁজ করতেছেন। বেলা হইয়া গেলো&comma; আপনি এখনো বাড়ি যান নাই দেইখা সে আমারে খবর নিতে পাঠাইলো।<br &sol;>&NewLine;সগির বুঝলো আসলেই সে কি ধ্যানে মগ্ন হয়ে ছিলো যে এতটা বেলা হয়েছে সে টেরই পায়নি। তারপর আর কথা না বাড়িয়ে লোকটিকে বিদায় দিয়ে সে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথ ধরলো।<br &sol;>&NewLine;এরপর সবকিছু খুব তড়িঘড়ি হয়ে গেলো। সগিরের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো পুতুলের বাপ। পৌষ মাসের ৯ তারিখ আকিকা সম্পন্ন হবে পুতুলের। আর আকিকার পরের দিন ১০ পৌষ বিয়ার তারিখ ধার্য হলো।<&sol;p>&NewLine;<p>সগির তার জামানো টাকায় খাদিজা বেগমের জন্য একটা সোনার বালা বানাতে দিলো লালদিঘীর গঞ্জের দোকানে। আর শাড়ি কাপড় অন্যান্য অনেক জিনিসপত্রও কেনা হলো তার বৌ-এর জন্য। সগিরের বৌ-এর জন্য নাসির তার মায়ের হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিলো। ছোট ভাইয়ের বিয়েতে সেও উঠে পড়ে লাগলো বিভিন্ন কাজে।<&sol;p>&NewLine;<p>সগির সকাল-বিকাল তার বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত থাকে। বিয়ের দিন সে কাকে কাকে বরযাত্রীর জন্য নিবে তার একটা হিসেব করার জন্য সে মাতবরের বাড়ি যায়। মাতবর চাচারে সে তার প্রধান অভিভাবক হিসেবে বলে&comma; আমার বাপ নাই&comma; দাদা। বড় ভাই তারে সমাজে পরিচয় দেওয়া যায় না। আপনি আমার মেইন গারজেন। আপনি যা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে। তবে আমি চাই না আমার বিয়াতে আমার ভাই উপস্থিত থাকুক। এর বাইরে আপনি যারে যারে নিতে চান সে সে বিয়াতে উপস্থিত থাকবে&comma; মাতবর দাদা।<br &sol;>&NewLine;মাতবর জমিলাকে মেয়ের মতো আদর করে। আর সে এও বুঝে জমিলার বড় পোলাটা বাপ নিরুদ্দেশ হওয়ার পর থেইকা চুরি করলেও সে পোলাটা মনের দিক থেইক্কা ভালো। ভাই আর মায়রে সে অনেক মহব্বত করে। তাই আজকে সগিরের মুখে এই কথাটা শুনে তার মনটা খারাপ হলো। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো&comma; আইচ্ছা&comma; তুমি এহন যাও&excl; আমি পরে এই ব্যাপারে তোমার লগে কথা কমু।<&sol;p>&NewLine;<p>বাড়ি এসে সগির দেখলো তাদের উঠান নতুন করে গোবর&comma; ভাতের মাড় আর মাটি দিয়ে লেপছে নাসির। সে সেদিকে না তাকিয়ে তার মাকে ডাকতে লাগলো&comma; মা&excl; মাতবর দাদার বাড়ি গেছিলাম। হেই কারে কারে বিয়ায় নিতে চায় তার লিষ্টিটা করোন দরকার। তয় তোমার বড় পোলারে কিন্তু বিয়ায় নেওন যাইবো নাহ। কে আবার বিয়ার মধ্যে চোররে চিন্না ফেলে কওন তো যায় নাহ। জমিলা ব্যথিত চোখে তাকিয়ে থাকে উঠানের দিকে। সকাল থেকে বাড়ির উঠানটা লেপছে নাসির। ভাইয়ের বিয়ার জন্য কত আয়োজন করছে সে। উঠান লেপা&comma; ঘর ধোর পরিস্কার&comma; আরো কত কি&excl; এমনকি বিয়ায় পরোনের জন্য একটা হইল্দা রঙের পাঞ্জাবি কিনছিলো গতকাল। রাতে সগির উপরে চলে গেলে আস্তে আস্তে বের করে পাঞ্জাবিটা। তারপর মায়ের সামনে ধরে জিগ্যেস করে&comma; কেমুন হইছে মা&quest; ছোট ভাইয়ের বিয়ায় তো আর পুরান পাঞ্জাবি পড়ন যায় নাহ। আইজ হাট তোন কিনছি এইডা। ভালো হইছে&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>জমিলা পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়া দেইখা কয়&comma; অনেক সুন্দর হইছে&comma; বাপজান। তোরে মানাইবো।<br &sol;>&NewLine;তারপর মুখটা একটু বেজার কইরা কয়&comma; তয় সগিরের বিয়াটা ভালোও ভালোও হইয়া গেলে আমি কিন্তু তোর বিয়া দিমু। জয়নাল ভাইরে কমু&comma; একটা সংসারী দেইখা মাইয়া আইন্না দিতে তোর জন্য।<&sol;p>&NewLine;<p>নাসির হঠাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা কয়&comma; মা&excl; বাপজান থাকলে কত খুশি হইতো&excl; আমগো সগিরের বিয়ায় বাপজান হইতো পোলার বাপ। তার কত কদর হইতো। মসজিদের ইমাম তার পোলা। কতই না গর্ব কইরা সে বিয়ায় যাইতো&comma; মা।<br &sol;>&NewLine;জমিলা দেখে নাসিরের চোখ দুটো পানিতে ছলছল করে উঠছে। সে বুকের মধ্যে জড়ায়ে ধরে ফিসফিস করে বলে&comma; আয়রে আমার বাজান&excl; এহনো তোর বাপরে ভুলবার পারলি নাহ&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>à§§à§§&period;<br &sol;>&NewLine;শফু গাতকের জ্বরটা কমেছে কিন্তু তার শরীরের জোরটা তেমন বাড়েনি। সে বসে আছে তার ওস্তাদ জাকির শেখের সামনে।<br &sol;>&NewLine;বাবা শফু&excl;<br &sol;>&NewLine;জি ওস্তাদ&excl;<br &sol;>&NewLine;তোরে আর রাখা যাইবো না এহানে। তোর মন ছুইটা গেছে রে। মন ছাড়া হুদা শইলডা রাখোন যায় না বেশিদিন। তুই তোর গায়ে ফেরত যা&excl;<br &sol;>&NewLine;শফু গাতক কোন জবাব দেয় না। আসলে জবাব দেওয়ার কিছু নাই। সেও জানে তার মন এখন আর তার নিয়ন্ত্রণে নাই। সে এখন সেই দূরে তার সংসারের দিকে ছুটে চলে গেছে। তাকে চুপ থাকতে দেখে জাকির হোসেন আবার আবার কথা বলে উঠে। এ মাসের ৯ তারিখ আমরা এই গাও ছাড়বো আর ঐ দিনই করিম তোরে তোর গ্রামে গিয়া রাইখা আসবো ঠিক করছি। তারপর নৌকার পাটাতন থেকে উঠতে উঠতে ওস্তাদ বলে&comma; তোর জিনিসপত্র সব গোছগাছ করে রাখিস&comma; বাবা।<&sol;p>&NewLine;<p>দূরে কোথাও একটা অচেনা পাখি কান্নার শব্দে ডেকে যাচ্ছে এক নাগারে। সেই দিকে কান দিয়ে শফু ভাবে&comma; তার বাড়িতে সব ঠিক আছে তো&excl; পোলা দুইডা কত বড় হইছে&excl; তারা তাগো বাপরে চিনতে পারবো তো&excl; তয় সগির না চিনলেও তার বড় পোলা নাসির তারে ঠিক চিনবো।<br &sol;>&NewLine;আর জমিলা&excl; অভিমানে যদি তার সাথে কথা না কয়&excl;&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>à§® তারিখ সকালে নবীনগর থেকে এক লোক আসলো সগিরের কাছে। পুতুলের বাপ তাকে পাঠায়ছে একটা খবর নিয়ে। পুতুলের বাপ লোক মারফত জানতে পারছে&comma; সগিরের একটা বড় ভাই আছে এবং সে চোর। আর এই চোরের ঘরে সে মেয়ে বিয়ে দিবে নাহ। এই বিয়ে ভেঙে দিলো পুতুলের বাপ। খবরটা দিয়ে লোকটা আর দাঁড়ালো নাহ। সগির তখন মাত্র মাতবরের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো পথেই ঐ লোকের সাথে তার দেখা। এই কথা শোনার পর সে সোজা চলে গেলো জয়নাল ঘটকের বাড়ি। জয়নাল চাচাও খবরটা পেয়েছে। ঐ লোক প্রথমে ঘটকের বাড়ি খবরটা দেয় তারপর সগিরের বাড়ির দিকে যায়। সগির তারে যাইয়া কয়&comma; অহন আমি কি করুম&comma; চাচা&quest; সব আয়োজন শ্যাষ করছি। দাওয়াত দেওয়া হইছে সকলরে। এহন আমি সমাজে কেমনে মুখ দেখামু&quest; মাইনষেরে কি কমু&quest;<br &sol;>&NewLine;আমারে কন&comma; এতে আমার কি দোষ&quest;<&sol;p>&NewLine;<p>জয়নাল ঘটক চুপ করে থাকে। সেইবা কি করবে&excl; টুপ করে নিরবতা নেমে আসে তাদের দুইজনের মধ্যে। ঐ নিরবতায় যেন পানির ভেতর মাছের শ্বাসপ্রশ্বাস শুনতে পায় তারা দু’জন। তারোও কিছুক্ষণ পর সগির ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে ঘটকের বাড়ি থেকে। কুয়াশা তখন চারধার ডেকে ফেলেছে।<&sol;p>&NewLine;<p>ঐ কুয়াশা ভরা রাতে নদীর পাড়ে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে কাটিয়ে দেয় সগির। ভোরের আলো ফোটার পর সে উঠে দাঁড়ায়। লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে নদীর পাড়ে। কিছু কিছু নৌকা লালদীঘি থেকে এসে ভীড়তে শুরু করলো ঘাটে। সগির ধীর পায়ে বাড়ির পথ ধরে। বাড়ির উঠানে এসে দেখলো ঝকঝকে উঠানে বসে বসে শরীরে তেল মাখছে নাসির। নাসির সকালে তেল মেখে পুকুরে যায় গোসলে। তারপর তৈরি হয়ে সে বের হয় বাজারের উদ্দেশ্যে। আজ নাসিরকে গায়ে তেল মাখতে দেখে সগিরের মাথায় রক্ত উঠে গেলো&comma; সে দৌড়ে রান্নাঘর থেকে একটা দা নিয়ে এসে দাঁড়ালো নাসিরের সামনে&comma; তারপর নাসির কিছু বুঝে উঠার আগেই সোজা কোপ দিলো তার গলা বরাবর। এক কোপে দা’টা অনেকখানি ঢুকে গেলো গলায়। চিত্কার করে উঠলো সগির&comma; তেল মাইঝা চুরি করতে যাবি&comma; শুয়োরের বাচ্চা&quest; তোর চুরির দিন আইজকা শ্যাষ। নাসির কাটা গরুর মতো ছটফট করতে করতে পড়ে গেলো তার নিজের হাতে সেই সদ্য লেপে রাখা পরিস্কার উঠোনে। শুধু একবার উচ্চারণ করলো&comma; ভাইরে&excl;<&sol;p>&NewLine;<p>ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো উঠোনে। মনে হলো কেউ আলতা ঢেলে দিছে উঠোন জুড়ে। নাসিরের বিস্ফোরিত চোখের দিকে তাকিয়ে সগির আবার একই জায়গায় আরেকটি কোপ বসালো। শেষবার নাসির হাত জাগিয়ে তার ভাইকে একবার ধরতে গেলো কিন্তু ঘোলা চোখে সে কাউকেই দেখতে পেলো না। তার চোখ তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলো না ছোট ভাই তাকে এভাবে মারতে পারে। সেই চোখে কষ্ট যতটা ছিলো তার চেয়েও বিস্ময় ছিলো বেশি।<&sol;p>&NewLine;<p>জমিলা সকালে উঠেই মাতবরের বাড়ির দিকে ছুটলো। রাতে সগির বাড়ি ফেরেনি। সে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু সগিরের অপেক্ষায় নাসির সারারাত জেগে ছিলো। সকালে জমিলা উঠতেই দেখে নাসির ঘরের দাওয়ায় বসে আছে ভাইয়ের জন্য। মাকে দেখে বললো&comma; সগির তো এহনও আইলো না&comma; মা&excl; একদিন বাদে বিয়া। কি কাজে কোথায় আছে আল্লাহ জানে&excl; তুমি একটু মাতবর দাদার বাড়ির দিকে যাইয়া দেখবানি&comma; মা&quest; ঘর তোন তো দাদার বাড়ি যাওনের কথা কইয়া বাইর হইছিলো।<&sol;p>&NewLine;<p>শফু গাতকের নৌকা ভিড়েছে নদীর পাড়ে। ওস্তাদের আরেক চ্যালা করিম শফু গাতকরে ধরে ধরে নৌকা থেকে নামালো। গ্রামে এসে বুক ভরে শ্বাস নিলো শফু। পরিচিত হাওয়ায় তার শরীরে যেন হারিয়ে যাওয়া আত্মাটা আবার ফিরে আসলো। সে দীর্ঘক্ষণ করিমকে ধরে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রওনা হলো শফু।<&sol;p>&NewLine;<p>উঠোনে একটা সাদা কাপড়ে ঢাকা লাশ। রক্তের ধারাটা গিয়ে একটা গাছের পাশে গিয়ে জমেছে জমাট বেঁধে। লাশের উপর ভনভন করছে কয়েকটা মাছি। জমিলা রান্নাঘরের দরজায় বসে সেই মাছিগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মাছি গুলান কি চায়&excl; এরা তার পোলার কাছে ক্যান ঘুরঘুর করতাছে। পোলাডা সারারাইত ঘুমায় নাই আর এহন ঐ মাছি গুলানের জ্বালায় ঘুমাইতেও পারবো নাহ। সে ঐ দূর থেকে হুসহুস করে হাত নাড়তে লাগলো।<&sol;p>&NewLine;<p>জীবনে কখনো কখনো এমন কিছু অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয় নেমে আসে যার জন্য পাল্টে যায় জীবনের গতি&comma; প্রেক্ষাপট&comma; নিত্য নৈমিত্তিক ধারা। শুধু বহমান দিনগুলো অচেনা অজানা স্রোতের সাথে চলতে থাকে। কারণ জীবনের বৈশিষ্ট্যই হলো চলমান।<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version