Home কানাডা খবর মানুষের ভালোবাসায় আবার নির্বাচিত হবেন ডলি বেগম

মানুষের ভালোবাসায় আবার নির্বাচিত হবেন ডলি বেগম

ডলি বেগমের নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে আসা কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)’র প্রধান জগমীত সিং এবং ডলি বেগম (আরও ছবি ১৯ পাতায়)

সুহেল ইবনে ইসহাক : আগামী ২ জুন কানাডার অন্টারিও প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনে স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট নির্বাচনী এলাকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র (এনডিপি) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ডলি বেগম। ডলি বেগম ২০১৮ সালের জুন মাসে অন্টারিও আইনসভার নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন এবং কানাডার যেকোনো স্তরে নির্বাচিত পদে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম কানাডিয়ান। গত নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর ডলি বেগম নিজের নির্বাচনী এলাকা এবং অন্টারিও’র মানুষের জন্য যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তার জন্য দিন দিন তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সেই সাথে তাঁর অপূর্ব ব্যবহার তাঁকে মানুষের হৃদয়ের একেবারে কাছে নিয়ে এসেছে। তাঁর এই সব গুণাবলীর জন্য তিনি বাঙ্গালি কমিউনিটির মানুষের কাছে যেমন ভালোবাসার এক পাত্রী, ঠিক তেমনি তাঁর কমিউনিটিতে বসবাসরত অন্যান্য যে কোন জাতি, ধর্ম এবং বর্ণের মানুষের কাছে এক পছন্দের পাত্রী। নির্বাচনী বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষরা সে কারণে অবলীলায় আশা প্রকাশ করছেন, মানুষের ভালোবাসায় ডলি বেগম আবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।

কেউ লিবারেল পার্টির সমর্থক, কেউবা আবার প্রোগ্রেসিভ কনজারভেটিভের সমর্থক, কিন্তু বাঙালি কন্যা “ডলি বেগম” প্রশ্নে আজ সকলে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে নিজের স্বার্থে, কমিউনিটির স্বার্থে এক ও ঐক্যবদ্ধ। ডলি বেগমকে আবার এমপিপি নির্বাচিত করতে কমিউনিটির সিনিয়র সিটিজেন, যুব স¤প্রদায়, তরুণ সমাজ, বাঙালি ছাত্র সমাজ, আবাল-বনিতা কয়েকটি সপ্তাহ জুড়ে কাজ কর্ম ছেড়ে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। নিয়মিত ভোটারদের ফোন করা, বাসায়-বাসায় দরজা নক করে ডলি বেগমের পক্ষে ভোট চাওয়া থেকে শুরু করে অগ্রিম ভোট প্রদানে ভোটারদের সার্বিক সহযোগিতা করা, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, পার্ক, স্টেশনে যেখানে লোক সমাগম সেখানেই ভোটারদের ডলিকে ভোট প্রদানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্টারিও প্রদেশের পার্লামেন্টে একমাত্র বাংলাদেশী প্রতিনিধি, স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট নির্বাচনী এলাকার বিগত নির্বাচনে এনডিপি’র নির্বাচিত এমপিপি ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাঙালি প্রার্থী ডলি বেগম ।

বাঙালি কমিউনিটির অনেক ভোটার, সিনিয়র সিটিজেন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, টরোন্টোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, “বাঙালি হিসেবে আমরা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার্থে ডলি বেগমকে আবারো নির্বাচিত করবোই।” নেতৃবৃন্দের অনেকে বলেন, “ডলি আমাদের গর্ব, আমাদের স্বার্থেই ডলিকে আমাদের প্রয়োজন।” নির্বাচনী রাইডিংয়ের বাহিরে অন্যান্য রাইডিংয়ের বাঙালিরাও প্রাণপনে ডলির জন্য কাজ করে চলেছেন।

বাঙালি কমিউনিটির নারী-পুরুষ, ভোটার, নন ভোটার ছাড়াও রাইডিংয়ের সাধারণ ভোটার এক কথায় ডলি বেগমকেই এমপিপি নির্বাচিত করতে চায়। কারণ হিসেবে অনেকেই বলেন, “কোভিড-১৯ এর বিপর্যয়কালে আমরা ডলিকে আমাদের জন্য যুদ্ধ করতে দেখেছি, পার্লামেন্টে বোরো গলায় কথা বলে আমাদের জন্য সমূহ সবকিছুই করেছেন ডলি।”
ডলি বেগমের অনেক নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত সেচ্চাসেবক জানান যে, ডলির জন্য ভোট চাইতে গেলে অনেক-অনেক নন বাঙালি ভোটার বলেছেন, “আমরা ডলিকেই ভোট দেব, আপনারা অন্যত্র গিয়ে সময়টাকে কাজে লাগান।”

ডলি বেগমের নির্বাচনী প্রচারণা অফিসে একজন স্বেচ্ছাসেবকের সাথে কানাডার এনডিপি প্রধান জগমীত সিং এবং ডলি বেগম

ডলি বেগম টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে উন্নয়ন, প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। কুইন্স পার্কে ডলি নাগরিকত্ব, বিদেশী প্রশংসাপত্র এবং অভিবাসন পরিষেবাগুলির জন্য সরকারি বিরোধী সমালোচক।
ডলি প্রদেশ-ব্যাপী “কিপ হাইড্রো পাবলিক” প্রচারণার প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন যা সফলভাবে টরন্টো হাইড্রো এবং ওয়াসাগা ডিস্ট্রিবিউশনের বেসরকারিকরণ বন্ধ করে দেয়। তিনি স্কারবোরো হেলথ কোয়ালিশনের প্রাক্তন কো-চেয়ার এবং ওয়ার্ডেন উডস কমিউনিটি সেন্টারের ভাইস-চেয়ার, যেখানে তিনি স্কারবোরোর মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কুইন্স পার্কের লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে রাইডিংয়ের সকল সমস্যা জোরালো কণ্ঠে তুলে ধরা ও সমাধান কল্পে একাগ্রচিত্তে কাজ আদায় করে নিতে “ডলি বেগম” এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের নাম।

কানাডার রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করা ডলি বেগম হচ্ছেন বাংলাদেশে জন্ম নেয়া প্রথম ব্যক্তি যিনি কানাডার প্রাদেশিক পরিষদে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এবারও তাঁর আসন স্ক্যারবরো সাউথওয়েস্ট থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন।টরন্টোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রিয় মুখ ডলি বেগম গত চার বছরে বিরোধী দলে থেকেও ডলি বেগম বিভিন্ন সময়ে সাফল্যের সাথে নিজের বিল পাশ করিয়ে নিয়ে আসার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর সাফল্যের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আন্তরিকতা আর দৃঢ়তা থাকলে বিরোধী দলে থেকেও মানুষের জন্য কাজ করা যায়। আর এই সাফল্যের সমান অংশীদার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ, যারা নিজেদের শত চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েও আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে শক্তি যুগিয়েছেন।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীতেও তাঁর আসনের মানুষ সব সময় তাঁর পাশে থাকবেন এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন।
এমপিপি প্রাথী ডলি বেগম জানান, “এবার আমাদের এনডিপির প্লাটফর্মে আপনারা ইমিগ্র্যাশন সম্পর্কে অনেক কিছুই পাবেন।কিভাবে আমরা ইমিগ্রান্ট কমিউনিটিকে সাপোর্ট করতে পারি ফেডারেল সরকার এর সঙ্গে একসাথে কাজ করতে পারি ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির সমস্যা লাঘবে ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে, এ নিয়ে আমাদের এনডিপি প্লাটফর্মে আমরা আলোচনা করেছি ও আমাদের কর্মযজ্ঞে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জব রিলেটেড নানান সমস্যায় আমি ফেডারেল গভর্নমেন্ট এর মিনিস্ট্রিতে একটি চিঠি লিখেছিলাম, যার ফলশ্রুতিতে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জব রিলেটেড সমস্যাটির একটি সুরাহা হয়েছিল।

তাছাড়া, স্টুডেন্টদের ডাইরেক্ট স্ট্রিম (এস.ডি.এস.) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য আছে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এখনো করা হয়নি। এ বিষয়টি আমি পার্লামেন্টে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছি। আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের দক্ষতার মূল্যায়ন দেয়ার জন্য কাজ করছি।কোনো ইস্যুতে আমাদের কণ্ঠস্বর যদি আমরা সঠিক উচ্চতায় তুলে ধরতে পারি, আমি দেখছি আমরা সফলকাম হই। কারা কানাডাতে ইমিগ্রান্ট হবে না হবে এটা হচ্ছে ফেডারেল ইস্যু। ইম্মিগ্রান্টদের সেটেলমেন্ট রিলেটেড অনেক বিষয় প্রভিন্সের হাতে রয়েছে।”
বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করা দক্ষ রাজনৈতিক এমপিপি ডলি বেগম আরো জানান, “শিক্ষা, ক্রেডেনশিয়াল রিকোগনিশন, হাউসিং ফেসিলিটিজ, এখানকার প্রপার এডুকেশন, হেলথ কেয়ার, ইংলিশ ভাষা দক্ষতা, জব সিকিউরিটি ও প্রটেকশন এসব বিষয়ে প্রভিন্সের সাপোর্ট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই এসকল বিষয়ে আমি কাজ করে যাব। বিষয়গুলো নিয়ে এতদিন সেরকম আলোচনা পার্লামেন্ট পর্যন্ত উঠে আসেনি। কিন্তু এখন উঠে আসবে এবং ইম্মিগ্রান্টদের জন্য যে রকম “বিল-৯৮” এর বাস্তবায়ন হতে চলেছে, ঠিক তেমনি ইম্মিগ্রান্টদের জন্য আলোচ্য বিষয়গুলিরও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আমি কাজ করে যাবো।
আমাদের এখানে ইমিগ্র্যান্ট বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ এবং সংগঠনের সাথে বসেছি তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি তাদের সমস্যাগুলো। পাশাপাশি অন্য প্রভিন্সের একই পেশাজীবীদের সাথে কথা বলেছি, জানতে চেয়েছি ওরা কিভাবে সমাধান খুঁজে পেয়েছে, এবং সে অনুযায়ী আমরাও এগুচ্ছি। ইমিগ্রান্টদের দ্বারাই কানাডা এগিয়ে যাচ্ছে, তাই কানাডাকে এগিয়ে যেতে হলে ইমিগ্র্যান্ডদের কোনো অবস্থাতেই পেছনে রাখা যাবে না। সেই লক্ষ্যে আমাদের এনডিপি এবং আমি আপ্রাণ কাজ করে যাবো।”

টরোন্টোর বাঙালি কমিউনিটির সর্বসাধারণের দৃঢ় প্রত্যয়, ডলি বেগমকে নির্বাচিত করে বিজয়ের হাসি হাসতে চান সবাই। এ নিয়ে আজ ঐক্যবদ্ধ বাঙালি কমিউনিটি।

Exit mobile version