Home কলাম মুখের ভাষা

মুখের ভাষা

&NewLine;<&excl;-- Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<amp-auto-ads type&equals;"adsense" data-ad-client&equals;"ca-pub-8846063755563353"><&sol;amp-auto-ads>&NewLine;<&excl;-- End Google AdSense AMP snippet added by Site Kit -->&NewLine;<p><strong>রাশেদ নবী &colon;<&sol;strong> উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের সময় &OpenCurlyDoubleQuote;ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়” গানটি ছিল অনুপ্রেরণাদায়ক। স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল হলেও সংস্কৃতিকর্মীরা এই গান গেয়ে রাজনৈতিক প্রেরণা জাগ্রত রেখেছিল। এখনও তা গাওয়া হয়&comma; বিশেষত ফেব্রুয়ারি মাসে&comma; গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের আবেগ&comma; অনুভূতি ও দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলতে।<&sol;p>&NewLine;<p>মুখের ভাষা কেড়ে নেয়া কঠিন&comma; বিশেষত যখন সে ভাষার সমৃদ্ধ লিখিত রূপ থাকে অথবা যখন তা ব্যবহৃত হয় বিরাট জনগোষ্ঠীর মধ্যে। ভাষাকে রাজনৈতিক বাহন হিসাবে ব্যবহার করে ক্ষমতাহীন অথবা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে তাদের ভাষার সম্পূর্ণ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করা সম্ভব। সেটা সব উপনিবেশিক শক্তিই করেছে। জনবিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র বিশেষ ভাষায় লেখাপড়ার আবশ্যকতা তৈরি করতে পারে&comma; কিন্তু জনগণকে তাদের মুখের ভাষা পরিত্যাগ করতে বাধ্য করতে পারে না। সেটা সম্ভবও হয় না।<&sol;p>&NewLine;<p>সুলতান ও মুঘলরা সাড়ে পাঁচশ বছর ভারত শাসন করেও তাদের আরোপিত ফার্সি ভাষাকে ভারতবর্ষের মুখের ভাষায় পরিণত করতে পারেনি। ইংরেজরা দেশি ভাষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মূল করতে পারলেও ভারতীয় কোনো ভাষা বিলুপ্ত করতে পারেনি। পাকিস্তান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি না দিলে বাঙালিরা উর্দু শিখতে বাধ্য হত প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের জন্য&comma; যে ভাবে তারা বাধ্য হয়েছিল ইংরেজি শিখতে&comma; কিন্তু তাদের মুখের ভাষা সমর্পণ করত না। অপরদিকে&comma; বরং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে গর্বিত বাঙালিরা সংখ্যালঘু আদিবাসীদের ভাষার প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ার কারণে আদিবাসী ভাষাগুলিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে।<&sol;p>&NewLine;<p>মুখের ভাষা সহজাত&comma; আর লিখিত ভাষা আমাদের মুখের ভাষার অনুকরণ। আমরা আগে বলতে শিখি এবং অনেক পরে পড়তে ও লিখতে শিখি। সে কারণে আমরা যে ভাষায় কথা বলতে শিখি সে ভাষা সহজে ভুলতে বা বদলাতে পারি না। সামাজিক প্রগতির সাথে সাথে লিখিত ভাষা মুখের ভাষার উপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং তখন মুখের ভাষা উল্টো লিখিত ভাষাকে অনুসরণ করতে শুরু করে। যেখানে তারা একে অপরকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে&comma; সেখানে মুখের ভাষার সাথে লিখিত ভাষার ব্যবধান কমে যায়। এই বিকাশের গতিতে তাল মিলিয়ে আমরা যে ভাষায় লিখিত সাহিত্য&comma; দর্শন&comma; আইন ও বিজ্ঞান সৃষ্টি করি&comma; সেই ভাষায় প্রাত্যহিক কথোপকথন সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। লিখিত ভাষা ক্রমে হয়ে ওঠে পরিশীলিত মুখের ভাষার মানদণ্ড।<&sol;p>&NewLine;<p>বাংলাদেশে বাঙালিদের ক্ষেত্রে সেটা পুরোপুরি ঘটে নি। বাংলাদেশের সমাজে এখনও মুখের ভাষার আধিপত্য বিরাজমান। শতকরা পঁচানব্বই ভাগ বাঙালি যে ভাবে কথা বলে সে ভাবে লেখে না। এই পার্থক্য প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয় ক্রিয়াপদের ব্যবহারে। যেমন &OpenCurlyQuote;ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়’ গানটিতে ক্রিয়াপদের যে রূপ &lpar;&OpenCurlyQuote;কাইরা’&comma; &OpenCurlyQuote;কইছে’&comma; &OpenCurlyQuote;ভরাইছে’&rpar; ব্যবহার করা হয়েছে তা লিখিত ভাষার এমন কি চলিত ভাষারও রূপ নয়। এই রূপ একমাত্র ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অধিবাসীরা তাদের কথ্য ভাষায় ব্যবহার করে। লিখিত ভাষায় &OpenCurlyQuote;কেড়ে’ ক্রিয়াপদের রূপ কর্তা ও কালভেদে কখনো পরিবর্তিত হয় না &lpar;সবসময়ই তা &OpenCurlyQuote;কেড়ে’ &&num;8211&semi; ওরা কেড়ে নেয়&comma; তুমি কেড়ে নাও&rpar;&comma; কিন্তু মুখের ভাষায় তার একাধিক রূপ পাওয়া সম্ভব। শুধু এই ক্রিয়াপদ নয়&comma; যদি আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি তাহলে দেখব&comma; বাংলার প্রায় সব ক্রিয়াপদই বাংলাদেশিদের মুখের ভাষায় প্রায় প্রতি পঞ্চাশ কিলোমিটার পর পর রূপ পাল্টায়।<&sol;p>&NewLine;<p>ক্রিয়াপদ যে কোনো ভাষার কেন্দ্রীয় পদ&comma; কারণ ক্রিয়াপদ ছাড়া কোনো বাক্য সম্পন্ন হয় না। কোনো কোনো বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে। যেমন&comma; &OpenCurlyQuote;আমরা &lbrack;হই&rsqb; বাঙালি’ বাক্যটি বলার ও লেখার সময় আমরা &OpenCurlyQuote;হই’ ক্রিয়াপদ ব্যবহার করি না। চিন্তার প্রগতি ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নতুন নতুন বিশেষ্য ও বিশেষণ তৈরি করে। কিন্তু ক্রিয়াপদের বিবর্তন ভাষার অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সে কারণে তার বৃদ্ধি অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন। যেমন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ঘোড়াগাড়িকে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় এনেছে মোটরগাড়ি&comma; কিন্তু এই পরিবর্তন গাড়িকেন্দ্রীক বাক্যে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদকে সরাতে পারেনি।। আগে সবাই বলত &OpenCurlyQuote;ঘোড়াগাড়িতে &OpenCurlyDoubleQuote;চড়ব”&comma;’ আর এখন বলে মোটরগাড়িতে &OpenCurlyDoubleQuote;চড়ব”।’ আমরা কোনো বিষয় কত অর্থবহভাবে উপস্থাপন করতে পারছি তা নির্ভর করে আমাদের ব্যবহৃত ক্রিয়াপদের উপর। সে কারণে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন&comma; &OpenCurlyQuote;ক্রিয়াপদের মধ্যেই থাকে ভাষার চলবার শক্তি। &&num;8230&semi; সেই সময়কেই বাংলা ভাষার পরিণতির যুগ বলব যখন থেকে তার ক্রিয়াপদের যথোচিত প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্য ঘটেছে’ &lpar;বাঙলা ভাষার পরিচয়&rpar;।<&sol;p>&NewLine;<p>প্রশ্ন হল&comma; ক্রিয়াপদের আঞ্চলিক রূপ যা বাংলাদেশিদের মুখের ভাষাকে নানাভাবে অলঙ্কৃত করে&comma; তা কতখানি বাংলার প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র বৃদ্ধি করেছে&quest; শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য নিয়ে আঞ্চলিক উচ্চারণ বিশ্লেষণ করে বাংলা শব্দের মূল নির্ণয় করবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন&comma; কিন্তু সম্ভবত সে কাজে তিনি বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি। ক্রিয়াপদে আঞ্চলিকতা থেকে বাংলা কতখানি লাভবান হয়েছে তা ভাষাবিদদের আগ্রহের বিষয় হতে পারে&comma; কিন্তু লিখিত ভাষায় আমরা তার তেমন কোনো প্রত্যক্ষ অবদান দেখতে পাই না। বরং আমাদের সামাজিক অভিজ্ঞতা থেকে যা আমরা দেখতে পাই তা হল&comma; বাংলার এই আঞ্চলিকতা বাংলাদেশের মত ক্ষুদ্র একটা দেশের মধ্যে ব্যাপক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভেদ তৈরি করে রেখেছে। এক জেলায় উচ্চারিত ক্রিয়াপদ অন্য জেলার অধিবাসীদের কাছে শুধুমাত্র পরিহাসের বিষয়ই নয়&comma; তা সামাজিক মিশ্রণের ক্ষেত্রেও একটা বড় অন্তরায়। আঞ্চলিকতা বাংলাদেশিদের মুখের ভাষায় বৈচিত্র তৈরি করে থাকতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা বাঙালির সামাজিক আন্তসম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেনি।<&sol;p>&NewLine;<p>লিখিত বাংলার সাধু ও চলিত রূপ নিয়ে বহু বছর ধরে যে দ্ব›à¦¦à§à¦¬ ছিল&comma; তার অবসান ঘটেছে। এই দ্ব›à¦¦à§à¦¬à¦“ ছিল ক্রিয়াপদকে কেন্দ্র করে&comma; তবে এই দ্ব›à§‡à¦¦à§à¦¬ আঞ্চলিক ভাষার কোনো ভূমিকা ছিল না। বহু বছর ধরে সাধু ভাষাকে চলিত ভাষার চেয়ে শ্রেয় মনে করা হত&comma; বিশেষত চিন্তার সংবদ্ধ ও সংবেদনশীল প্রকাশের ক্ষেত্রে। চলিত রূপ মুখের ভাষার বা কথ্য ভাষার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে তা রক্ষণশীল সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে ছিল অপাঙক্তেয়এই রক্ষণশীল বলয় থেকে প্রগতিশীলরা রাতারাতি বের হয়ে আসতে পারেনি। সুকুমার রায় তাঁর গল্পে সাধু ও চলিত দুই রূপই ব্যবহার করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সতের বছর বয়সে লেখা &OpenCurlyQuote;ইউরোপ-যাত্রীর ডায়েরি’ এবং অপেক্ষাকৃত পরিণত বয়সে লেখা &OpenCurlyQuote;ক্ষণিকা’ চলিত ভাষায় রচিত&comma; যাকে তিনি বলেছেন প্রাকৃত ভাষা। কিন্তু তাঁর সবকটি উপন্যাস এবং গল্পগুচ্ছের অধিকাংশ গল্প সাধু ভাষায় রচিত। যখন থেকে লিখিত বাংলার রূপের ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দৃঢ় হয়েছে তখন থেকে তিনি আর সাধু ভাষা ব্যবহার করেননি।<&sol;p>&NewLine;<p>তাঁর পরের দিকের গল্পগ্রন্থ&comma; &OpenCurlyQuote;গল্পসল্প’&comma; &OpenCurlyQuote;তিনসঙ্গী’&comma; &OpenCurlyQuote;লিপিকা’&comma; সবগুলিতেই তিনি ব্যবহার করেছেন চলিত রূপ। দ্বিজেন্দ্রলালও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে চলিত রূপ প্রয়োগ করে রচনা করেছেন &OpenCurlyQuote;আমরা এমনি এসে ভেসে যাই&comma;’ &OpenCurlyQuote;বেলা বয়ে যায়’ এর মত অনন্যসাধারণ কাব্যগীতি। তবে সাধু রূপের প্রতি তাঁদের বিদ্রোহ খুব সহজে সাধু রূপকে কোণঠাসা করতে পারেনি। তাঁদের অনুজ&comma; নজরুল&comma; মানিক&comma; বিভূতিভূষণ এবং তিরিশ দশকের সাহিত্যিকরা কমবেশি সবাই সাধু রূপ ব্যবহার করেছেন। উভয় বাংলার সাহিত্য থেকে সাধু রূপ সর্ম্পূর্ণভাবে বিদায় নেয় পঞ্চাশ দশকে। কিন্তু বাংলাদেশে আশির দশক পর্যন্ত সংবাদপত্র&comma; সরকারি কাগজপত্র এবং আদালতের প্রজ্ঞাপনে সাধু ভাষা ব্যবহার করা হত। আনন্দবাজার পত্রিকা এখনও সম্পাদকের পাতায় সাধু ভাষা ব্যবহার করে।<&sol;p>&NewLine;<p>চলিত ভাষা এখন সর্বজনগৃহীত লিখিত ভাষার রূপ। রবীন্দ্রনাথের মতে&comma; &OpenCurlyQuote;যখন লেখার ভাষার সঙ্গে মুখের ভাষার অসামঞ্জস্য থাকে তখন স্বভাবের নিয়ম অনুসারে এই দুই ভাষার মধ্যে কেবলই সামঞ্জস্যের চেষ্টা চলিতে থাক’ &lpar;ভাষার কথা&rpar;। কিন্তু উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলাদেশে এই চেষ্টার তেমন কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র অঞ্চল তার আঞ্চলিক বাংলার মৌলিকতা নিয়ে অন্যদের সাথে দূরত্ব তৈরি করে রেখেছে। এই আঞ্চলিকতার দেয়াল এতই শক্ত যে শিক্ষা&comma; প্রযুক্তি বা যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তার এবং সা¤à¦ªà§à¦°à¦¤à¦¿à¦•কালের সামাজিক মাধ্যম কোনো কিছুই তার ভিত নড়াতে পারে নি। স্বল্পসংখ্যক শিক্ষিত&comma; শহরবাসী বাঙালি প্রমিত চলিত ভাষায় তাদের দৈনন্দিন কথোপকথন সম্পন্ন করতে সক্ষম। কিন্তু তাদের সংখ্যা এত অল্প যে তারা নিজের পরিবারের সদস্যদের কথোপকথনও প্রভাবিত করতে পারে না। কবি&comma; সাহিত্যিক&comma; শিল্পী&comma; পেশাজীবী সবাই যখন পরিবারের মধ্যে বা ঘনিষ্ঠদের সাথে কথা বলে তখন ব্যবহার করে আঞ্চলিক ভাষা&comma; আর যখন আনুষ্ঠানিক পরিবেশে কথা বলে তখন চেষ্টা করে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করার।<&sol;p>&NewLine;<p>শিক্ষিত&comma; শহরবাসী তাদের সামাজিক ও শ্রেণিস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখবার জন্য ক্রিয়াপদের এক সম্পূর্ণ নতুন রূপ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের সব শহরে এই নতুন রূপের একটা অভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। এই নতুন রূপ সাধু&comma; চলিত ও ঢাকার আঞ্চলিক ক্রিয়াপদের বিভিন্নমাত্রিক মিশ্রণ। যেমন&comma; &OpenCurlyQuote;ডাকিতেছি’ &lpar;সাধু&rpar; এর বদলে &OpenCurlyQuote;ডাকতেছি&comma; &OpenCurlyQuote;করেছি’ &lpar;চলিত&rpar; এর বদলে &OpenCurlyQuote;করছি’&comma; ইত্যাদি। ঠিক কি কারণে এই গোষ্ঠী ক্রিয়াপদের সহজ চলিত রূপ গ্রহণের বদলে আরেক ধরনের অপভ্রংশ সৃষ্টি করেছে তা ভাষা গবেষণার উপজীব্য। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে শিক্ষিত বাঙালি সোজা ক্রিয়াপদকে যতক্ষণ বাঁকাতেড়াভাবে উচ্চারণ করতে না পারে ততক্ষণ তারা তাদের প্রাণের কথা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে না। &OpenCurlyQuote;আসবেন&comma;’ &OpenCurlyQuote;থাকবেন’&comma; &OpenCurlyQuote;চলবেন’ ইত্যাদি ভবিষ্যত অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ উচ্চারণ করা কঠিন নয়। কিন্তু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি এরকম সহজ শব্দ ব্যবহার করতে গিয়ে এতই গলদঘর্ম হয় যে তা এড়াতে তারা এসব শব্দের এমন এক নতুন রূপ তৈরি করেছে যে তাদের অর্থ বোঝার জন্য অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয়। যেমন &OpenCurlyQuote;আসবেন’ এর বদলে &OpenCurlyQuote;আইসেন’&comma; এসেন&comma; আসিয়েন&comma; ইত্যাদি। এরকম অদ্ভূত বাংলা ব্যবহারের পক্ষে তাদের যুক্তি অকাট্য – ব্যাকরণসম্মত হোক বা না হোক&comma; অর্থটা তো বুঝতে পারছেন&excl; বটে&excl; কুকুর ঘেউ ঘেউ করলেও আমরা কখনো কখনো তার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারি।<&sol;p>&NewLine;<p>আমরা লেখায় ও পড়ায় প্রমিত চলিত ভাষার ব্যবহার মেনে নিয়েছি&comma; কিন্তু তাকে মুখের ভাষা হিসাবে গ্রহণ করতে এখনও তৈরি নই। এক সময় সাধারণ মানের বাংলা চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের নাটক প্রমিত চলিত ভাষায় তৈরি করা হত। স্বাধীনতার পর থেকে সেই ধারা পাল্টে যেতে থাকে। নির্মাতারা এটা প্রমাণ করে যে আঞ্চলিক ভাষায়ও নাটক-সিনেমা তৈরি করে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক হল তারা এটা প্রমাণ করতে গিয়ে শুধুমাত্র ঢাকার ভাষাকে তুলে ধরেছে। এরকম প্রবণতা শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়&comma; বহু দেশেই পরিলক্ষিত হয়। রাজধানী শহর অথবা প্রধান শহরে যে ভাষা গড়ে ওঠে&comma; সে ভাষাতে রচিত হয় সাহিত্য&comma; নাটক ও চলচ্চিত্র। যেমন বাংলা সাহিত্যের বিকাশের আদি যুগে কলকাতায় প্রচলিত কথ্য ভাষা স্থান করে নেয় সাহিত্যে। রবীন্দ্রনাথ এই প্রবণতা সমর্থন করেন&colon;<br &sol;>&NewLine;&OpenCurlyQuote;নানা জেলায় ভাষার নানা রূপ। এক জেলার ভিন্ন অংশেও ভাষার বৈচিত্র আছে। এমন অবস্থায় কোথাকার ভাষা সাহিত্যে প্রবেশ লাভ করবে তা কোনো কৃত্রিম শাসনে স্থির হয় না&comma; স্বতই সে আপনার স্থান আপনি করে। কলকাতা সমগ্র বাংলার রাজধানী। এখানে নানা উপলক্ষে সকল জেলার লোকের সমাবেশ ঘটে আসচে। তাই কলকাতার ভাষা কোনো বিশেষ জেলার নয়। স্বভাবতই এই অঞ্চলের ভাষাই সাহিত্য দখল করে বসেচে।’ &lpar;চলতি ভাষার রূপ&rpar;<&sol;p>&NewLine;<p>কিন্তু কলকাতার মুখের ভাষা কালক্রমে যে ভাবে প্রমিত চলিত ভাষা হিসাবে উদ্ভূত হয়েছে&comma; বলাবাহুল্য ঢাকার ভাষা তা হতে পারে নি। বরং জনপ্রিয় বিনোদনে এই আঞ্চলিক ভাষার আধিপত্য বাংলাদেশের অন্য জেলার মানুষদের এত প্রভাবতি করে যে তারা বহুক্ষেত্রে এই ভাষার ক্রিয়াপদ ব্যবহার আত্মীকরণ করে ফেলেছে &lpar;যাইতাছি&comma; খাইতাছি&comma; ইত্যাদি&rpar;। পাশাপাশি বিনোদন শিল্পে ঢাকার আঞ্চলিক ভাষার এই গ্রহণযোগ্যতা অন্য জেলার অধিবাসীদেরকে প্রমিত চলিত ভাষা ব্যবহারের বদলে আঞ্চলিক ভাষার প্রতি অনুগত থাকতে উৎসাহিত করেছে। আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অসমতা এই আনুগত্যকে আরো দৃঢ়বদ্ধ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে ভাবে লিখিত ভাষায় প্রমিত চলিত রূপ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে&comma; মুখের ভাষার ক্ষেত্রে তা করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা লেখার জন্য ভাষার যে রূপ ব্যবহার করতে শেখে&comma; কথোপকথনে সে ভাষা ব্যবহার করতে শেখে না। ফলে তারা পরিবারে ও প্রতিবেশীর কাছে যে আঞ্চলিক কথ্য বাংলা শেখে&comma; সেই ভাষাই ব্যবহার করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের মুখের ভাষা সামান্যই বদলায়।<&sol;p>&NewLine;<p>অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যবধান সহজে দূর করা সম্ভব ছিল মুখের ভাষাকে লিখিত ভাষায় অন্তর্ভূক্ত করে। এর একটা উদাহরণ মধ্যম পুরুষে &lpar;আপনি&sol;আপনারা&rpar;ব্যবহৃত বর্তমান অনুজ্ঞাসূচক ক্রিয়াপদ। যেমন &OpenCurlyQuote;থামা’ ক্রিয়াপদেরে অনুজ্ঞাসূচক রূপ ব্যবহার করতে বাংলাদেশীরা বলে&comma; &OpenCurlyQuote;থামেন’&comma; কিন্তু যখন লিখতে হয় তখন লেখে&comma; &OpenCurlyQuote;থামুন’ – উচ্চারণ ও বানান বিবেচনায় আলাদা দুটো শব্দ। কোনো বাংলাদেশি অকৃত্রিম ভাষায় তার অতিথিকে অভ্যর্থনা জানাতে বলে&comma; &OpenCurlyQuote;ভিতরে আসেন&comma; বসেন’। যদি কেউ বলে &OpenCurlyQuote;ভিতরে আসুন&comma; বসুন’ তাহলে তাকে বিদ্রূপের সম্মুখীন হতে হবে কারণ এরকম অনুজ্ঞা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ব্যবহার করে। উল্টোদিকে শিক্ষিত বাঙালিরা যখন ছাপার অক্ষরে &OpenCurlyQuote;আসেন’&comma; &OpenCurlyQuote;বসেন’ জাতীয় ক্রিয়াপদ দেখে তখন তারা ভুরু কোঁচাকায়। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের এই বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয় না কারণ তারা বেশিরভাগ ক্রিয়াপদ যে ভাবে বলে সে ভাবে লেখে। বাংলাদেশিরাও অনুজ্ঞাসূচক ক্রিয়াপদ যে ভাবে বলে অনায়াসে সে ভাবে লিখতে পারে কারণ ক্রিয়াপদের এই রূপের উপর আঞ্চলিকতার প্রভাব উপেক্ষণীয়&semi; বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মানুষ প্রায় একই ভাবে বলে আসেন&comma; বসেন&comma; থামেন&comma; চলেন। কিন্তু বাংলাদেশিরা আঞ্চলিকতা পরিত্যাগ না করতে যেমন বদ্ধপরিকর&comma; তাদের মুখের কথা লিখিত ভাষায় স্থান দিতে তেমনি সংকুচিত।<&sol;p>&NewLine;<p>বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার জন্য এখন আর কেউ তাদের তাড়া করছে না। বাঙালি মুক্ত&comma; বাঙালির ভাষা মুক্ত। তাদের মুক্ত ভাষাকে বিকশিত করতে হলে তাদেরকে আত্মপ্রত্যয়ের সাথে মুখের ভাষার সাথে লিখিত ভাষার সমন্বয় করতে হবে। শুধু ভাষা আন্দোলনের গর্ব দিয়ে মুখের ভাষা ও লিখিত ভাষার মধ্যে এই বিচ্ছেদ দূর করা সম্ভব নয়। বাংলাকে আধুনিক ও কার্যকর যোগাযোগের ভাষায় উত্তীর্ণ করতে হলে&comma; বাংলা সহজে শিখতে ও শেখাতে হলে এবং যুগের প্রেক্ষিতে বাংলাকে বেগবান করতে হলে বাঙালিকে তাদের ভাষায় আঞ্চলিকতার আধিপত্য হ্রাস করতে হবে।<&sol;p>&NewLine;

Exit mobile version