‘তৃতীয়া তিথি’ অনুষ্ঠানে মঞ্চে (বাম থেকে) রনি পালমার, প্রজ্ঞা লাবনী, শহীদ খোন্দকার টুকু ও জাহিদ হোসেন

সেরিনা শরিফ : গত ১৪ই জানুয়ারি, শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় টরন্টোর ৯ ডজ রোডের রয়েল কানাডিয়ান লিজিয়ন এর মিলনায়তনে অন্যমেলা এবং ডিসিআই কানাডার আয়োজনে প্রজ্ঞা লাবনী ও শহীদ খোন্দকার টুকু’র আবৃত্তি-সঙ্গীত সন্ধ্যা ‘তৃতীয়া তিথি’ উপস্থিত দর্শকদের এক অপূর্ব মুগ্ধময় সময় উপহার দেয়। এবারের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল ‘ডিসট্রেশ চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল’ (DCI) এর জন্য অর্থ সংগ্রহ। আয়োজকদের পক্ষে থেকে জানানো হয় ‘তৃতীয়া তিথি’ অনুষ্ঠান থেকে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করা হবে অসহায় ও বঞ্চিত শিশুদের মঙ্গলের জন্য।

অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রজ্ঞা লাবনীর আবৃত্তির মাধ্যমে। তিনি আবৃত্তি করেন, ‘অন্তর মম বিকশিত করো’। তারপর শহীদ খোন্দকার টুকু শুরু করেন রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’। তাঁদের দু’জনের প্রায় দুই ঘণ্টার এক অসাধারণ পরিবেশনা উপস্থিত সকলে আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর আবেগের সাথে উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক ও শ্রোতার সারি থেকে পিন পতন শব্দ ছিল না, শুধু ছিল মাঝে মধ্যে উচ্ছ¡সিত হাততালির শব্দ। অনুষ্ঠানে বিরতির ব্যবস্থা ছিল, যখন আয়োজকদের পক্ষ থেকে দর্শক শ্রোতাদের জন্য কেক, শিংগারা ও কফির ব্যবস্থা করা হয়। উপস্থিত সকলে এই আতিথিয়তার প্রশংসা করেন। প্রজ্ঞা লাবনী ও শহীদ খোন্দকার টুকু’র অসাধারণ কবিতা এবং গানের পরেই অরুণা হায়দার ও সুলতানা হায়দার সহ ‘সুকন্যা’ নৃত্য গোষ্ঠীর কয়েকজন শিল্পীর একটি মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘটে।

প্রজ্ঞা লাবনী ও শহীদ খোন্দকার টুকু

জ্যাকুলিন রোজারিও’র অনবদ্য উপস্থাপনায় ‘তৃতীয়া তিথি’ এক অসাধারণ মাত্রায় উপনীত হয়। সেই সাথে এর মিউজিকে ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ জাহিদ হোসেন এবং কানাডার প্রখ্যাত তবলাবাদক রনি পালমার। লাইটিং ও সাউন্ড এ ছিলেন ডাক্তার আনিস এবং মিম।

 

শহীদ খোন্দকার টুকু
প্রজ্ঞা লাবনী

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেও দর্শক শ্রোতারা যেন অপেক্ষায় ছিল আরও গান আর কবিতার জন্য। বলা যেতে পারে, অনুষ্ঠানটি শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। প্রজ্ঞা লাবনী ও শহীদ খোন্দকার টুকু’র কাছ থেকে একরাশ আনন্দ, তৃপ্তি নিয়ে আগামীতে আবারো এমন পরিছন্ন অনুষ্ঠান পাওয়ার প্রত্যাশায় রইলো দর্শক শ্রোতা।

নৃত্যে অরুণা হায়দার, সুলতানা হায়দার ও অন্যান্যরা

উল্লেখ্য, টরন্টোর প্রিয়মুখ সঙ্গীত শিল্পী শহীদ খোন্দকার টুকু ও বাংলাদেশের আবৃত্তি জগতের পরিচিত মুখ প্রজ্ঞা লাবনী’র বন্ধুত্ব সেই শৈশব থেকে, তাঁরা দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে পাশাপাশি বড় হয়েছেন। তাঁদের ছোটবেলার সেই বন্ধুত্বটা সময়ের পরিক্রমায় হয়েছে আরো পরিণত, পরিমিত এবং গভীর। তাঁদের এই বন্ধুত্বকে আরো সমৃদ্ধ করেছে তাঁদের দুজনের কথা আর সুরের বন্ধন।

উপস্থিত দর্শক

সেই বন্ধন থেকেই তাঁরা কয়েক বছর আগে শুরু করেন আবৃত্তি আর গান দিয়ে গাঁথা প্রথম অনুষ্ঠান ‘এমনো যামিনী মধুর চাঁদিনী’, যা অনুষ্ঠিত হয় ইয়রকুড লাইব্রেরীর থিয়েটার হলে। অনুষ্ঠানটির সাফল্য দুজনকে উদ্বেলিত করে, তারপর প্রতি বছর না হলেও অন্ততঃ দুই এক বছর পর পর একটা অনুষ্ঠান মঞ্চায়ন করার পরিকল্পনা নেন তাঁরা।

উপস্থিত দর্শক

তাঁদের দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় কোভিড অতিমারীর ঠিক আগে। বিসি এর ফান্ড রেইজিং ইভেন্ট হিসেবে ‘সাতকাহন’ মঞ্চস্থ হয় বাংলাদেশ সেন্টারে। অনুষ্ঠানটিতে প্রচুর দর্শকের সমাগম হয়।