স্পোর্টস ডেস্ক: ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে পেরিয়ে গেছে ৩৬টি বছর। এর মাঝে স্বাদ নেওয়া হয়নি বিশ্বকাপের। এমন হিসেব-নিকেশ নিয়ে মরুর দেশে পা রেখেছিল আর্জেন্টিনা। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে সেই আশায় গুড়ে বালি হয়েছিল আলবিসেলিস্তাদের। কিন্তু সেই দৃশ্যপট বদলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মেসিরা।

এদিকে আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরের ক্যারিয়ার জুরে কি নেই! ক্লাব ফুটবলে এমন কিছুর অর্জন নেই যেটা মেসির নেই। বার্সেলোনার হয়ে স্পেনে হয়েছেন সর্বজয়ী। এরপরে ফ্রান্সেও পিএসজিকে জিতিয়েছেন লীগ ওয়ান শিরোপা। গোল্ডেন বুট, বেস্ট প্লেমেকার অ্যাওয়ার্ড তো আছেই, জিতেছেন রেকর্ড গড়া সর্বোচ্চ সাতবার ব্যালন ডি’অর।

তারপরও সমালেচনায় আসতেন এই জাদুকর। কারন জাতীয় দলের হয়ে মেসি কোনও অর্জন নেই। সেই সমালেচনাও মেসি ঘুচিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২০২১ সালে ঘরে আনে কোপা আমেরিকা শিরোপা। এত শত অর্জনের ভীড়েও যদি লিওনেল মেসির জীবনে অপ্রাপ্তি বলতে যদি কিছু থাকে, তা হলো বিশ্বকাপপের সোনালী ট্রফি।

এই আর্জেন্টাইন তারকা ২০০৬ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে জেতেন উদীয়মান খেলোয়াড় পুরস্কার। পরে এই খুদে জাদুকর ২০১০ বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছেন। তবে সেই সময়ের কোচ আর্জেন্টিনার কিংবদন্তী ডিয়োগো ম্যারাডোনা মেসিকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন।

তবে ২০১৪ বিশ্বকাপ মেসির ক্যারিয়ারের সেরা সময়। কারন নিজের ফর্ম আর পুরো দল, দুটো মিলেই হয়েছিল জমে ক্ষীর। তবে সেবার মেসি আর বিশ্বকাপ স্বপ্নের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক মারিও গোৎজে। তার গোলেই স্বপ্নভঙ্গ হয় আলবিসেলেস্তাদের।

আর ২০১৮ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা ছিল কাগজে কলমে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বাজে দল। পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে ২০০২ বিশ্বকাপের পর এতটা বাজে ছিল না। সেইবার মেসি যদি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত না হতেন, তাহলে গ্রুপ স্টেজেই বিদায়ঘণ্টা বাজতো আলবিসেলেস্তেদের।

ফুটবল দলীয় খেলা। ওয়ান ম্যান আর্মি নৈপুণ্যে অথবা একজনের কাঁধে চড়ে হয়তো অনেক দূর আগানো যায়, ট্রফি জেতার কাছাকাছি যাওয়া যায়, তবে ট্রফি জেতা যায় না। ২০২২ বিশ্বকাপের মেসি ২০১৪’র মতো তরুণ না হলেও ধার একটুখানিও কমেনি। নিজের ব্যক্তিগত ফর্মের পাশাপাশি মেসি এবার পাশে পেয়েছে একটি ভারসাম্যপূর্ণ স্কোয়াডকে। কাগজে কলমে হয়তো এই স্কোয়াডের সবাই বিশ্বসেরা না, তবে তারা সবাই যোদ্ধা। মেসির জন্য তারা প্রতিটি ম্যাচকে যুদ্ধ মনে করেন।

এই যোদ্ধাদের নিয়েই শুরু হয় মেসির বিশ্বকাপ মিশন। তাদের নিয়েই মেসি এসেছেন এতটা দূর। তবে এই যোদ্ধাদের প্রধান সেনাপতি লিওনেল মেসি, সেটি ম্যাচের পর ম্যাচ তার পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে। সৌদি আরবের সাথে করলেন ১ গোল, মেক্সিকোর সাথে শুরুতে অবিশ্বাস্য এক জায়গা থেকে করলেন গোল, এরপর এঞ্জো ফার্নান্দেসকে করলেন এসিস্ট। পেলেন সেই ম্যাচের ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার।

হয়তো আজ ক্রোয়েশিয়ার সাথেই মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্নের অবসান ঘটবে। নয়তো ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকর আর্জেন্টিনাকে ক্রোয়েশিয়ার বাধা টপকে বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে নিয়ে যাবে। ফলাফল যাই হোক, এখন পর্যন্ত মেসির বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে নিন্দুকেরাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে বাধ্য। নিজের শেষ বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যের কোনো কমতি রাখেননি মেসি।

কাতার আসরে মেসির এই নৈপুণ্যে কিংবদন্তি ডিয়োগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেইবারের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়েছিল তার হাতে সোনালী ট্রফিটি উঠেই, তবে মেসি কি ম্যারাডোনাকে ছুতে পারবে?