গানের কথা লেখা আর গীতিকার হিসাবে যাত্রা শুরু কিন্তু এক কথা নয়। সব গানের কথাই কবিতা যতক্ষণ না তা সুর হয়ে কণ্ঠে প্রকাশ লাভ করে। আর তাহলেই একজন গীতিকারের জন্মলাভ ঘটে।
২০১৮ সালের আগে অনেক গানে সুর করে শিল্পী মঞ্চে গেয়েছেন, ছোট বাচ্চারা কম্পিটিশানে গেয়ে প্রথম, দ্বিতীয় হয়েছে, সেই ২০০১ সাল থেকেই গীতিকার হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন টরন্টোতে মৌ মধুবন্তী। সেই সময় গানের সিডি করতে হতো, এলবাম করার সুযোগ ছিলনা। তাই আর সেইসব গানের প্রকাশ ঘটেনি। ২০১৮ সালে গীতিকার নাশিদা চৌধুরী অনেকটাই জোর করে গান প্রকাশে বাধ্য করে। ছোট বোন নাশিদার অপরিসীম ধৈর্য এই ব্যাপারে। অনেকের সাথে পরিচয় ও যোগাযোগ করিয়ে দেয়, এমনকি জাহাঙ্গীর রানার সাথেও। সেই ২০১৮ সালের এক সন্ধ্যায় দিনুবসাকের স্থায়ী লিখছেন, তখন লন্ডন থেকে গীতিকার, সুরকার, ও গায়ক জাহাঙীর রানা ম্যাসেঞ্জারে কন। মৌ মধুবন্তী বলেন, পরে কথা বলবেন তিনি গানের কথা লিখছেন। রানা শুনতে চাইলেন ও সাথে সাথেই সুর দেয়া শুরু করলেন। স্থায়ীটুকু নিয়ে সুর করে পাঠালেন এবং অন্তরা দুইটা চেয়ে পাঠালেন। এইভাবে সেই সন্ধ্যায় দিনুবসাক মন সুর হয়ে গেলে, জাহাঙ্গীর রানা শান সায়েককে বাংলাদেশে মিউজিক কম্পোজ করতে বলেন। মৌ মধুবন্তী আবদার করলেন বাউল শফি মন্ডলের কাছে গানটি গাইবার জন্য। তিন মহাদশের সার্বিক সমন্বয়ে অহর্নিশ অডিও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয় দিনুবসাক গান এবং সারা বিশ্ব জুড়ে সাড়া পড়ে যায়। এরপর একে একে আসে পঞ্চমী সুর, রাগ করো না মা। প্রবাস জীবনের করুণ কষ্টের আর্তি ফুটে ওঠে এই গানে । গানটি যৌথ কণ্ঠে গেয়েছেন বাংলাদেশ থেকে শান সায়েক ও কোলকাতা থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী সুমনা সামন্থ মুখার্জী। সুর ও মিউজিক কম্পজিশান শান সায়েক, বস্তুত মৌ মধুবন্তী অধিকাংশ গানের মিউজিক করেছেন শান সায়েক। এরপর আসে ‘বৃষ্টি ভালোবাসা’, ‘চন্দ্রাবতী মধুবন্তী’ (দলীয়), ‘জন্মশতকে মুজীব গান’ (দলীয়), ‘যে মনের দামে’, ‘জলকন্যা’ ও ‘আশা দাওনি’।
আশ্চর্যজনকভাবে ‘আশা দাওনি’ গানের সুর দেয়া হয়েছে রাজশাহী থেকে মাক্সুমুল বাড্ডু প্রখ্যাত সুরকার ও মিউজিক কম্পোজার, গানটি গেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিকের শিক্ষক পারমিতা হক কঙ্কণ। তাই মধুবন্তীর ইচ্ছে হয়েছিলো তিনি এই গানে মডেলিং করবেন রাজশাহীতে গিয়ে। রাজশাহী থেকে বিখ্যাত ফিল্ম মেকার শাহারিয়ার কামাল চয়ন ভিডিওর কাজ করেন। আশা দাওনি গানটি নাট্যকার ফেরদৌস হাসানের হাত ধরে সুরকার বাড্ডুর কাছে যায় তিনবছর আগে। সুর আর মিউজিক ও গীত হবার পরেও ভিডিও করা হচ্ছিল না বলে অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে দুই হাজার বাইশ সালে শ্যুটিং হলেও নানাবিধ কারণে প্রকাশ হবার কথা মৌ মধুবন্তীর জন্মদিনে ফেব্রæয়ারী মাসের ছয় তারিখে। কিন্তু কোয়ালিটি নিয়ে অসন্তোষ থাকায় আরো পিছিয়ে সুন্দর একটা দিন চৌদ্দ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রচুর ভালোবাসা পেতে প্রকাশ হলো আশা দাওনি। ভিডিও করাকালীন রাজশাহীতে সার্বিক সহযোগিতা করেন স্থানীয় কবি অনীক ইসলাম আর মৌ মধুবন্তীর ভাগ্নী রিসালা নূর আরুবা।
আরো দুটো গান সুর হয়ে আছে। এ কোন বাঁধনে গানের সুর করেছেন কোলকাতা থেকে পণ্ডিত শান্তনু ভট্টাচার্য এবং তার শীষ্য স্বপ্নীল রয় চৌধুরী গানটি গেয়েছেন টরন্টো থেকে। বাংলা আমার দেশের মাটি গানটি সুর করেছেন টরন্টোর সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী অরুনাভ ভট্টাচার্য। মৌ মধুবন্তী প্রায় চারশ গানের রচনা করেছেন। সব রচনাকে গানে পরিণত করা না গেলেও তিনি প্রত্যাশা রাখেন শ খানেক গান প্রকাশ করতে।
মৌ মধুবন্তীর গীতিকার হিসাবে যাত্রা শুরু সফল হোক।