অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা শিথিলের নিশ্চয়তা দাবি করেছে ইরান। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তি করতে হলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে পরিষ্কার নিশ্চয়তা দিতে হবে, এমন দাবিই জানিয়েছে দেশটি।
সোমবার (২ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই সরকারি বার্তাসংস্থা আইআরএনএ-কে বলেন, “নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত অবসান কবে, কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চাই আমরা।”
বাঘাই অভিযোগ করেন, “যুক্তরাষ্ট্র এখনও এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা দেয়নি।”
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানকে একটি “গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব” পাঠিয়েছে বলে দাবি করলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইরান এই প্রস্তাবকে ‘শুরু করার মতোও কিছু নয়’ বলে মনে করছে এবং তা প্রত্যাখ্যানের জন্য খসড়া তৈরি করছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ও বার্তাসংস্থা রয়টার্স-এর বরাতে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ওই প্রস্তাবের মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করার দাবি রয়েছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে তেমন কিছু নেই। এ কারণেই তেহরানের দৃষ্টিতে প্রস্তাবটি “অগ্রহণযোগ্য”।
আল জাজিরা বলছে, গত ৭ সপ্তাহ ধরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালাবে তার নিশ্চয়তা। আর ইরান চাইছে, দীর্ঘদিনের কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক, যা দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে।
ইরান অবশ্য বরারবই বলছে, তারা শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। তবে ফাঁস হওয়া জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে অনেক বেশি এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মাত্রার কাছাকাছি (যা প্রায় ৯০ শতাংশ)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ যাতে ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব, যদি আরও পরিশোধন করা হয়। মূলত ইরানই একমাত্র দেশ যার পারমাণবিক অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও এতো উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম তৈরি করছে।
ইরান এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং দাবি করেছে, কিছু পশ্চিমা দেশ জাতিসংঘের ওপর চাপ দিচ্ছে যাতে তারা ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
দুই পক্ষই আলোচনা নিয়ে আশাবাদী হলেও মূল বিতর্ক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার অধিকার নিয়ে। আইএইএ-এর সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, ইরান গত তিন মাস ধরে প্রতি মাসেই এমন মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে যা একেকটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সূত্রের মতে, ইরান চাইলে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যে পারমাণবিক বোমাও বানাতে সক্ষম। যদিও ইরান বরাবরই বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে নতুন একটি চুক্তির জন্য ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ১২ এপ্রিল থেকে কমপক্ষে ৫ দফা আলোচনায় বসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সম্পর্কে বাঘাই বলেন, “কোনো নথি গ্রহণ করা মানেই সেটা মেনে নেওয়া নয়, এমনকি এটাও মেনে নেওয়া নয় যে সেটা গ্রহণযোগ্য।”