অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে আরও ৩০ বাংলাদেশিকে। তাদের সবাইকে হাতকড়া ও পায়ে শেকল পরিয়ে দেশে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
তাদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রায় তিন ঘণ্টা ফ্লাইটটি রানওয়েতেই অবস্থান করে। রাত ২টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের শেকল ও হাতকড়া খোলা হয় এবং অ্যারাইভাল গেটে আনা হয়।
এ সময় বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধিরা এবং দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকসহ কাউকে তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ছবি তুলতেও বাধা দেওয়া হয়।
ফেরত আসা এসব বাংলাদেশির অনেকেই মেক্সিকোসহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে দালালদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। জানা গেছে, তাদের অনেকে এজন্য জনপ্রতি ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন। তবে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এবং অনেকের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে ব্র্যাক। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে ফিরে আসা এসব অভিবাসীদের বাড়ি পৌঁছাতে অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, উন্নত জীবনের আশায় মানুষ অভিবাসী হয়। কেউ অবৈধভাবে গেলে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে ফেরত পাঠাতে পারে। কিন্তু হাতকড়া ও শেকল পরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি অভিবাসী মানুষের জন্য আজীবনের মানসিক ট্রমা হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়ায় আরও মানবিক দিকগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
উল্লেখ্য, গত ২ আগস্টও একইভাবে একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজে করে ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তখনও তাদের সবাইকে হাতকড়া ও শেকল পরানো হয়েছিল। চলতি বছর মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৬ সালে ২৭ বাংলাদেশিকে একইভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সেই সময়ও তাদের হাতকড়া ও শেকল পরিয়ে আনা হয়। তখন দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হয়।