অনলাইন ডেস্ক : বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন জনপ্রিয় পানীয়গুলোর বেশিরভাগেই থাকে অতিরিক্ত চিনি, যা দীর্ঘমেয়াদে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

শীত এলেই অনেকের দিনের শুরু বা শেষ হয় এক কাপ ফেনা ওঠা কফি, হট চকলেট, এগনগ, কিংবা দুধ চা দিয়ে। আর শীতের দিনে ছুটিতে কোথাও গেলে রিসোর্ট বা হোটেলে হট চকলেট আর কফি তো বাধ্যতামূলক বলা যায়। এসব পানীয় খেতে মজাদার হলেও এগুলো আমাদের শরীরের ভয়াবহ ক্ষতি করে সেটা অনেকেই জানেন না। পানীয়গুলো নীরবে আপনার হাড়ের ক্ষতি করতে পারে বলছে চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন জনপ্রিয় পানীয়গুলোর বেশিরভাগেই থাকে অতিরিক্ত চিনি, যা দীর্ঘমেয়াদে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।

যেভাবে হাড়ের ক্ষতি হয়
হেলথলাইনের প্রতিবেদনে জানা যায়, আমাদের হাড় শুধু শরীরের কাঠামোই নয়, এটি ক্যালসিয়ামের ভাণ্ডার হিসেবেও কাজ করে। হাড় দুর্বল হলে অস্টিওপোরোসিস, হাড় ভাঙা কিংবা পিঠ বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ডায়েটিশিয়ান কেজিয়া জয় জানান, অতিরিক্ত চিনি শরীরে ক্যালসিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম কমে যায়।

এছাড়া নিয়মিত বেশি চিনি খেলে ভিটামিন ডি-এর কার্যকারিতাও ব্যাহত হতে পারে, যা ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে হাড় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।

কোন পানীয় কতটা ক্ষতিকর
ডায়েটিশিয়ান হান্না অ্যান্ডারসন বলছেন, প্রতিটি পানীয়ের প্রভাব একরকম নয়
হট চকলেট: দুধ থেকে কিছু ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়, কিন্তু বাজারজাত হট চকলেটে এক কাপেই ২০–৩০ গ্রাম চিনি থাকতে পারে।

এগনগ: ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকলেও এক কাপেই ৩০০ ক্যালোরির বেশি ও ২০ গ্রাম চিনি থাকে।

মাল্ড ওয়াইন ও সাইডার: মসলা থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিললেও অ্যালকোহল ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়।

পেপারমিন্ট মোকা কিংবা জিঞ্জারব্রেড লাতে: বড় সাইজে ৫০ গ্রাম বা তারও বেশি চিনি—পুষ্টিগুণ প্রায় নেই বললেই চলে।

কতটা চিনি নিরাপদ
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দৈনিক ক্যালোরির সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ হওয়া উচিত যোগ করা চিনি থেকে।
পুরুষদের জন্য: দিনে প্রায় ৩৬ গ্রাম
নারীদের জন্য: দিনে প্রায় ২৫ গ্রাম
অর্থাৎ, একটি বড় ফেস্টিভ ড্রিংকই প্রায় পুরো দিনের চিনি কোটা শেষ করে দিতে পারে।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প নিয়ে পরামর্শ
ছুটির দিনে গরম গরম হট চকলেট, এগনগ বা ফেনা ওঠা কফির লোভ সামলানো কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পানীয় পুরোপুরি বাদ না দিলেও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া বা স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ডায়েটিশিয়ান হান্না অ্যান্ডারসন জানাচ্ছেন, হাড়ের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে হট চকলেট তৈরি করা যায় আরও স্বাস্থ্যকরভাবে। তার পরামর্শ আনসুইটেনড কোকো পাউডার, লো-ফ্যাট দুধ এবং সামান্য মধু, মেপল সিরাপ বা স্টিভিয়া ও মনক ফ্রুটের মতো নন-নিউট্রিটিভ সুইটেনার ব্যবহার করলে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

যারা বাজারজাত হট চকলেট মিক্স ব্যবহার করেন, তাদের জন্যও পরামর্শ আছে কম চিনিযুক্ত মিক্স বেছে নিন। চাইলে গরম পানি বা দুধে চকলেট ফ্লেভারড বোন ব্রথ বা কোলাজেন পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে প্রোটিন বেশি থাকবে, কিন্তু চিনি থাকবে কম। অ্যান্ডারসন আরও বলেন, ফাংশনাল মাশরুম ব্লেন্ড দিয়েও তৈরি করা যায় ভিন্ন স্বাদের হট কোকো, যা স্বাদ নষ্ট না করেই বাড়তি স্বাস্থ্যগুণ যোগ করে।

মাল্ড আপেল সাইডারের স্বাদ পছন্দ হলে চিনিযুক্ত পানীয়ের বদলে চিনি ছাড়া আপেল সাইডার টি ব্লেন্ড চেষ্টা করতে পারেন। অথবা দারুচিনি, লবঙ্গ, স্টার অ্যানিসের মতো উষ্ণ মসলা, লেবুর রস ও সামান্য আপেল সাইডার ভিনেগার দিয়ে ঘরেই তৈরি করা যায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর পানীয়।

কফি অর্ডার দেয়ার সময়ও একটু সচেতন হলেই বড় পার্থক্য গড়ে ওঠে। অ্যান্ডারসন বলেন, ‘ওয়ান পাম্প’ বা ‘হাফ সুইট’ বলে মিষ্টতার মাত্রা কমিয়ে নিন, হুইপড ক্রিম বাদ দিন, আর অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এড়াতে নন-ফ্যাট বা লো-ফ্যাট দুধ বেছে নিন। স্বাদের জন্য ওপর থেকে সামান্য দারুচিনি বা কোকো পাউডার ছিটিয়ে নিতে পারেন।

ডায়েটিশিয়ান কেজিয়া জয় জানান, এগনগও হালকা করা সম্ভব শুধু যোগ করা চিনির পরিমাণ কমালেই হয়। পাশাপাশি ফোর্টিফায়েড আনসুইটেনড প্ল্যান্ট-বেসড মিল্ক, কম চিনি থাকা গরম পানীয় ও হার্বাল টি শীতের স্বাদ উপভোগের ভালো বিকল্প হতে পারে। যেসব পানীয়তে প্রোটিন ও খনিজ উপাদান থাকে এবং অতিরিক্ত চিনি নেই, সেগুলো শরীরের পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়ামের অতিরিক্ত ক্ষয়ও কমায়।

শীত কিংবা ছুটির দিন মানে কেবল ক্ষতিকর পানীয় খাওয়া নয়। স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে সে কারণে খাদ্যতালিকার দিকে নজর দিতে হবে। মজাদার বলে ক্ষতিকর খাবার খাওয়া যাবে না যা পরে রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে সুস্থ থাকতে বর্তমান থেকেই খাবার নির্বাচনের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে একেবারেই অতিরিক্ত চিনি খাওয়া যাবে না।