অর্ধনমিত কানাডার পতাকা (ছবি: বাংলা কাগজ)

* রানি কানাডা সম্পর্কে বিশেষ যত্নশীল ছিলেন -কানাডার গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমন
* রানি বিশ্বের আমার প্রিয় মানুষদের একজন -প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
সুহেল ইবনে ইসহাক: ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। বিবিসি জানিয়েছে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বালমোরাল ক্যাসল প্রাসাদে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজকীয় বাসভবন বাকিংহাম প্যালেস এক বিবৃতিতে বলেছে: ‘রানি আজ বিকেলে বালমোরালে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন।’
রানি এলিজাবেথ গ্রীস্মকালীন আবাস স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসল প্রাসাদে ছিলেন। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) এ প্রাসাদে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লিজ ট্রাসকে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনুমোদন দেন রানি। পরদিন বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) প্রিভি কাউন্সিলের সঙ্গে এক বৈঠক থাকলেও তা বাতিল করেন তিনি।

এপি’র খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বালমোরাল প্যালেসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সকালে পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসকরা রানির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানান। এরপর তাকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ (এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা ম্যারি) মৃত্যুর আগে তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্য এবং আরও ১৫টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রানি। এলিজাবেথ লন্ডনের মেফেয়ারে ইয়র্কের ডিউক এবং ডাচেস (পরে রাজা জর্জ এবং রানি এলিজাবেথ)-এর প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

কানাডায় ব্রিটিশ রাজের প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন যে, প্রয়াত রানি কানাডাকে পছন্দ করতেন এবং এই দেশটিকে তার “দ্বিতীয় বাড়ি” হিসাবে বিবেচনা করতেন। তিনি ছিলেন মানুষের জন্য, আমাদের মঙ্গল সম্পর্কে যত্নশীল। আমরা যখনই কথা বলতাম তখনই এটা পরিষ্কার ছিল। তিনি কানাডা সম্পর্কে যত্নশীল ছিলেন। তিনি বলেন, রানি এই বছরের শুরুতে এই পদে নিযুক্ত হওয়ার সময় তাকে একটি উপদেশ দিয়েছিলেন: তা হলো “নিজের সাথে নম্র হন।”
গভর্নর জেনারেল সাইমন বলেন, “আমি তার কথার অর্থ বুঝতে পেরেছি যে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে কঠোর পরিশ্রম করা উচিত, আমাদের বিরতির জন্যও সময় নেওয়া উচিত। ধৈর্য, বোঝাপড়া এবং সম্মানের সাথে নেতৃত্ব দিতে”। “আমি এই কথার মধ্যে বুদ্ধিমত্বা দেখতে পাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে রানিকে ভীষণ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। সেই সময় তিনি নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করেন, তার চোখ লাল ছিল। তিনি বলেন যে, রানি বিশ্বের তার প্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং তিনি সিংহাসনে ৭০ বছর ধরে শক্তি ও প্রজ্ঞার সাথে কাজ করেন। ট্রুডো রানিকে “চিন্তাশীল, জ্ঞানী, কৌতূহলী, সহায়ক এবং মজার” বলে অভিহিত করে বলেন, তিনি রানিকে খুব মিস করবেন। অশ্রুসজল ট্রুডো বলেছেন রানি ‘বিশ্বের আমার প্রিয় মানুষদের একজন’ ।

রানির সাথে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

রানি এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার বসবে কানাডার পার্লামেন্ট। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শনিবার বলেছেন, রানি এলিজাবেথকে শ্রদ্ধা জানাতে সদস্যদের অনুমতি দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার কানাডার সংসদ বসবে। “এছাড়াও, মহারাজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে সামঞ্জস্য করার জন্য, অধিবেশনের উদ্বোধন এক দিন বিলম্বিত হবে। অশ্রুসিক্ত জাস্টিন ট্রুডো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি কমনওয়েলথের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

মহামান্য রানির মহাপ্রয়াণ উপলক্ষে ১৪ সেপ্টেম্বর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেবার দিনে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পিস টাওয়ারসহ কানাডা এবং বিদেশে কানাডা সরকারের সমস্ত ভবন এবং স্থাপনাসমূহে কানাডার পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সিনেট স্পিকার, জর্জ ফুরে, একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করেন যে, রানি কানাডায় সিংহাসন থেকে দু’বার বক্তৃতা দিয়েছেন। তার শাসনামল “আগামী প্রজন্মের জন্য জনসেবা, নিঃস্বার্থতা এবং শান্ত মর্যাদার মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলবে এবং অনুপ্রাণিত করবে”।

ফেডারেল অন্তর্বর্তীকালীন কনজারভেটিভ নেতা ক্যান্ডিস বার্গেন ১৯৮২ সালে রাণীর সংবিধান আইনে স্বাক্ষর করার স্মৃতি স্মরণ করেন বলেন, এটি ছিল একটি গভীর মুহূর্ত। তিনি আরো বলেন, “অনেকে আজ বলবে যে তার চলে যাওয়া একটি যুগের সমাপ্তি, কিন্তু সত্যিকার অর্থে, মহামহিম কানাডার জাতীয় জীবনে দুটি যুগের সভাপতিত্ব করেছিলেন”। সেই সময় সাংবিধানিক আপডেট “একটি সম্পূর্ণ স্ব-শাসিত জাতি হিসাবে কানাডার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনাকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, সেই ইতিহাসের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখে যা আমাদেরকে আমরা কে করে তুলেছে।”

এনডিপি নেতা জগমিত সিং বলেছেন যে, রানি যখন ইতিহাস এবং কর্তব্যের জীবনযাপন করেছিলেন, তিনি একজন মা, দাদী এবং প্রপিতামহও ছিলেন। “আমার চিন্তা আজ তার পরিবারের জন্য, যারা তাদের জীবনে শক্তির স্তম্ভ হারিয়েছে।”

ইউনাইটেড কিংডমে কানাডার হাই কমিশনার রাল্ফ গুডেল টুইটারে বলেন যে, রানি “বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের একজন গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।”
বৃটিশ জনগণের হৃদয়ে রাজপরিবারের জন্য ভালোবাসা চিরস্থায়ী করতে আজীবন কাজ করে গেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি শুধু বৃটেনের ইতিহাসের সবথেকে দীর্ঘ সময় ধরে রাজত্বই করেননি, তিনি ছিলেন কর্তব্যপরায়ণ এবং নিজের প্রজাদের প্রতি নিবেদিত। তাই বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুতে শোকে ছেয়ে গেছে সমগ্র বৃটেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ শতায়ু হবেন এমন আশা ছিল বৃটিশদের। কিন্তু ৯৬ বছর বয়সে তার বিদায়ের পর শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। ‘ভালোবাসার রানি’র মৃত্যুর খবরে তাদের চোখে ছিল পানি। বৃটেনের বিভিন্ন স্থানে থাকা অন্য রাজকীয় প্রাসাদগুলোর সামনেও একইচিত্র দেখা গেছে। গত ৭০ বছর ধরে রানি এলিজাবেথ যেভাবে বৃটিশ জনগণকে আগলে রেখেছেন তা স্মরণ করছে বৃটিশরা। রানির উদ্দেশ্যে ছোট ছোট বার্তা লিখে রাজকীয় প্রাসাদগুলোর প্রাঙ্গণে রেখে যাচ্ছেন তারা। এ রকম এক চিরকুটে লেখা ছিল, শান্তিতে বিশ্রাম নিন রানি।