Home আন্তর্জাতিক রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের

রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের

অনলাইন ডেস্ক : রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে চারটি সামরিক ঘাঁটিতে বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে রাশিয়ার ৪০টির বেশি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

নিজেদের ভূখণ্ড থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। তবে ড্রোনগুলো ইউক্রেন থেকে ছোড়া হয়নি। বরং নিশানায় থাকা রুশ সেনাঘাঁটির আশপাশের এলাকা থেকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

হামলায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে কিয়েভের দাবি সত্য হয়ে থাকলে তিন বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার ভেতরে এটাই ইউক্রেনের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ড্রোন হামলা। সোমবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত শান্তি আলোচনার আগমুহূর্তে এ হামলাকে উসকানি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে ইউক্রেনের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘রণক্ষেত্র (ফ্রন্টলাইন) থেকে অনেক দূরে অবস্থিত শত্রুঘাঁটিতে হামলার লক্ষ্য নিয়ে বড় ধরনের বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী।’ নিশানায় থাকা সাইবেরিয়ার বেলায়া বিমানঘাঁটিতে আগুন ধরেছে বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউক্রেনের এই কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা (এসবিইউ) এসব হামলা পরিচালনা করেছে। একযোগে চারটি রুশ সামরিক বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়েছে।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার যে ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো টিইউ-৯৫ ও টিইউ-২২ কৌশলগত বোমারু বিমান। এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছিল রাশিয়া।

একটি ছবিতে কাঠের তৈরি ছোট কেবিনের ছাদে অনেকগুলো ড্রোন বসিয়ে রাখতে দেখা গেছে। বলা হচ্ছে এসব ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। যেখান থেকে হামলা চালানো হয়েছে, ট্রাকে করে ড্রোনগুলো সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, সূত্র থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে, যেখানে হামলার দৃশ্য দেখা গেছে। সেখানে টিইউ-৯৫ এর মতো কয়েকটি বড় বোমারু বিমান আগুনে পুড়তে দেখা গেছে। টিইউ-৯৫ যুদ্ধবিমান মূলত পারমাণবিক বোমা বহনের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে এখন এই বোমারু বিমান দিয়ে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ড্রোনগুলো হামলার নিশানায় থাকা রাশিয়ার অনেক ভেতরের সেনাঘাঁটিগুলোর কাছাকাছি জায়গায় ট্রাকে (লরিতে) করে নিয়ে রাখা হয়। লরি থেকেই ড্রোনগুলো ছোড়া হয়।

ইউক্রেনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা জানায়, এই অভিযানের সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্পাইডারওয়েব’। ১৮ মাসের বেশি সময় নিয়ে এই অভিযানের প্রস্তুতি চলেছে। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমে ড্রোনগুলো রাশিয়ার ভেতরে পাঠানো হয়। পরে ছোট কাঠের ঘর বা কাঠামোর ছাদের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। এ অবস্থাতেই ড্রোনগুলো লরিতে তোলা হয়েছিল।

রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘ম্যাশ’ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে সাইবেরিয়ার ইরকুতস্ক অঞ্চলে কয়েকজনকে ট্রাকের ওপর উঠে ড্রোনের উৎক্ষেপণ থামাতে চেষ্টা করতে দেখা যায়।

রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সামরিক বিমানঘাঁটি থেকে পাওয়া ভিডিওতে ধ্বংস হওয়া এবং জ্বলন্ত বিমান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র এখনো স্পষ্ট হয়নি।

মস্কো অঞ্চলের ভসক্রেসেনস্কে আগুনে পুড়ছে এমন একটি বিমানঘাঁটির ভিডিওতে এক রুশ সেনাসদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে সব ধ্বংস হয়ে গেছে’। তাঁর পেছনে কয়েকটি বোমারু বিমান পুড়তে দেখা গেছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধের শুরুতে সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন অনেক কম শক্তিশালী ছিল। তা সত্ত্বেও তারা দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং বড় আকারের একটি আক্রমণাত্মক ড্রোন বাহিনী গড়ে তুলেছে, যা রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর আঘাত হানছে।

রোববার সাইবেরিয়ার ইরকুতস্ক অঞ্চলের বেলায়া নামের যে বিমানঘাঁটিতে হামলা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেটি ইউক্রেন থেকে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত।

ইউক্রেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ওই অঞ্চলের গভর্নর ইগর কোবজেভ ‘শ্রেদনি গ্রামে একটি সামরিক ইউনিটে ড্রোন হামলার’ কথা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

এ হামলার আগে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক ও কুরস্ক অঞ্চলে দুটি সেতু ধসে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। রুশ তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, বিস্ফোরণের কারণে সেতু দুটি ধসে পড়েছে।

Exit mobile version