৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বিকেল চারটায় বিসিসিএস মিলনায়তনে খেলাঘর কানাডা’র উদ্যোগে ‘সুন্দরের ছবি আঁকি’ শিরোনামে শিশুদের এক ঘরোয়া আসরের আয়োজন করা হয়। ‘ভাষার মাসে শিশুদের সাথে খেলাঘর ভাইয়া কবি আসাদ চৌধুরী’- এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে একান্তই লিভিংরুমে বসে গল্পের আসরের ধরণে সাধারণ সাদামাটা এই আয়োজনটিই শিশুদের কোলাহল-কলরব-উচ্ছ্বলতায়, তাদের গল্পে, কবিতা, গানে, আলাপচারিতায় হয়ে উঠে অসাধারণ বর্ণিল, অনন্য আলো-ঝলমল।

আয়োজকদের ভাষায়- এটি শিশুদের সাথে খেলাঘর কানাডা’র প্রথম সরাসরি সংযোগ। খেলাঘর ভাইয়ার সাথে একান্তই সাদামাটা আলাপচারিতা। একদম সাধারণ গল্পের আসর। কিছুটা একুশের গল্প, সাথে শিশুদের তাত্ক্ষণিক গান, কবিতা, কিছু কথাবার্তা। কোন প্রস্তুতি ছাড়া, মহড়া ছাড়া। একদম ব্যাকরণ ছাড়া এই আসর। এই বিকেলটি কেবলই শিশুদের জন্য।
নির্দিষ্ট সময় বিকেল চারটার বেশ আগে থেকেই শিশুদের আগমনে মুখরিত হতে থাকে বিসিসিএস মিলনায়তন। খেলাঘর কানাডা’র আহ্বায়ক জামিল বিন খলিলের সঞ্চালনায় শুরু হয় প্রথম পর্ব। ভূমিকা বক্তব্যের পর মহান একুশের সকল শহীদ ও সারাবিশ্বে অকালে ঝরে পড়া সকল শিশুদের স্মরণে দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্যে আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও এই আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা খেলাঘরিয়ান ফরিদা হক উপস্থিত সকল শিশু ও আগত সকলকে আন্তরিক স্বাগত জানান এবং সবার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন, সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে খেলাঘর কানাডা শিশুদের কল্যাণে ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন খেলাঘরিয়ান সুমন সাঈদ খেলাঘরের জন্ম ও পথ-পরিক্রমা এবং কানাডার প্রেক্ষাপটে শিশুদের মানসিক ও মানবিক বিকাশে খেলাঘরের সম্ভাব্য ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এরপর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য-সচিব খেলাঘরিয়ান শাপলা শালুক ৯ ফেব্রুয়ারির আয়োজনের পটভুমি তুলে ধরে বলেন- ভাষার মাসে এই আয়োজন হলেও এটি মুলত শিশুদের জন্য এক ঘরোয়া আসর; এক অর্থে শিশুদের সাথে খেলাঘর কানাডা’র ভাইয়া কবি আসাদ চৌধুরী ও খেলাঘরের অভিভাবকদের অনাড়ম্বর অভিষেক।

সংক্ষিপ্ত প্রথম পর্বের পর সঞ্জালক জামিল বিন খলিল এই আয়োজনের মূল পর্ব অর্থাৎ কবি আসাদ চৌধুরীর সাথে শিশুদের গল্পের আসরে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বিদগ্ধ খেলাঘরিয়ান কবি আসাদ চৌধুরীর হাতে মাইক্রোফোন তুলে দেন।

শুরু হয় কবি আসাদ চৌধুরীর পরিচালনায় শিশুদের সাথে এক অনন্য আলাপচারিতার আলোকিত অধ্যায়। শুরুতেই কবি আসাদ চৌধুরী সংক্ষিপ্তাকারে সকল শিশু ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে সারগর্ভ কিছু কথা তুলে ধরেন। এরপর বড়রা ও ছোটরা মিলে সমবেত কন্ঠে গাওয়া হয় বাংলাদেশ ও কানাডা’র জাতীয় সঙ্গীত। এক অনাবিল ভাললাগায় ছেয়ে যায় কানায় কানায় পূর্ণ বিসিসিএস মিলনায়তনের ছোট্ট আঙিনা। ৭৩টি উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল শিশুর মুখোমুখি কবি আসাদ চৌধুরী আর খেলাঘর কানাডা’র অভিভাবক নাট্যব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ দুলাল। আলাপচারিতা, শিশুদের তাত্ক্ষণিক গান-কবিতা-নাচ-গল্পে পেরিয়ে যেতে থাকে সময়। মাঝে মাঝে বড়রা শুভেচ্ছা আর আশীর্বানী জানিয়ে যান শিশুদের। কবি আসাদ চৌধুরীর যাদুকরী পরিচালনায় এগিয়ে যায় শিশুদের এই অনন্য বিকেল।

উপস্থিত শিশুদের মধ্যে অনুরাগ ইংরেজীতে মহান একুশের পটভূমি তুলে ধরে; আরিফুল ইসলাম, আদৃতা হোসেন নহর, জাহরা হোসেন, অরুনিম, স্নিগ্ধ ও মুগ্ধ বাংলায় কবিতা আবৃত্তি করে সবার জোর করতালি আদায় করে নেয়। সেইসাথে নুসাইবাহ, অঙ্কিতা ও অভিরাজের গানে মুগ্ধ হয় উপস্থিত ছোটবড় সকলেই। ফাগুনের হাওয়ায় হাওয়ায় গানটির সাথে ছোট্ট মুক্তা সাহা’র চমৎকার নৃত্য পরিবেশনা উপস্থিত সকলের প্রশংসা আদায় করে নেয়।
এই গান-কবিতা-নাচের সাথে সমান্তরালে চলতে থাকে শিশুদের সাথে চমৎকার গল্পের পর্ব। তার সাথে মাঝে মাঝে শিশুদের মধ্যে র?্যাফল ড্র ও তার পুরষ্কার বিতরণ শিশুদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহের সঞ্চার করে। তারই মধ্যে মাঝে মাঝে শিশুদের সাথে এসে গল্প করে যান উপস্থিত বড়দের অনেকেই। মুক্তিযুদ্ধের উপর গল্প করতে আসেন মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আখতার হোসেন, গল্প করেন বাংলাদেশ সেন্টারের শ্রদ্ধেয়া হাসিনা কাদের, নাট্যব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ দুলাল, বাংলামেইল পত্রিকা ও এনআরবি টিভির কর্ণধার শহীদুল ইসলাম মিন্টু, বাংলা কাগজ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এম.আর জাহাঙ্গীর, দেশে-বিদেশে পত্রিকা ও টিভি’র কর্ণধার নজরুল ইসলাম মিন্টু, নন্দন টিভি’র স্বাধীন টিপু ও মুন্নীসহ টরন্টোর সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক নক্ষত্র। শিশুদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ফুয়াদ চৌধুরী, কবি দেলওয়ার এলাহী, বাচিক শিল্পী মেরী রাশেদীন ও দিলারা নাহার বাবু-সহ অনেকেই। সকলেই খেলাঘরের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন ও খেলাঘরের পথচলায় সম্ভাব্য সকল সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। প্রাক্তন খেলাঘরিয়ানদের মধ্যে তপন সাঈদ, কানিজ ফাতেমা, লুৎফুন নাহার বকুল ও শফিক আহমেদ শিশুদের সাথে গল্পের পর্বে অংশ নিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। আপাদমস্তক খেলাঘরিয়ান জাহাঙ্গীর হোসেন বাঁশি বাজিয়ে উপস্থিত শিশু ও সকলকে মুগ্ধ করেন।
খেলাঘর কানাডা থেকে প্রকাশিতব্য ‘খেলাঘর পাতা’ নিয়ে সকল শিশুদের সাথে আলাপচারিতায় অংশ নেন সম্পাদনা পরিষদের তিন সদস্য মৌ মধুবন্তী, হোসনে আরা জেমী ও জাভেদ ইকবাল। তাঁরা আগামী মার্চ মাসে খেলাঘর পাতার প্রথম সংখ্যা প্রকাশের বিষয়ে সকলকে অবহিত করেন ও উপস্থিত শিশুদের এই খেলাঘর পাতায় বিভিন্ন বিষয়ে লেখা দেয়ার আহ্বান জানান। খেলাঘরের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকল শিশুদের শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়। আর এর ভেতর দিয়েই শেষ হয় ‘সুন্দরের ছবি আঁকি’- শীর্ষক শিশুদের আসরের দ্বিতীয় পর্ব।

এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মদিন এধরণের উপস্থিত ছোট-বড় মোট এগারো জনের জন্মদিন উদযাপন করা হয়। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেয়ালে সবার ছবি সম্বলিত আলাদা আলাদা প্ল্যাকার্ড উপস্থিত সকল শিশুদের বিশেষ করে যাদের জন্মদিন তাদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করে। একসাথে সবাই মিলে সবার ছবি সম্বলিত জন্মদিনের বিশেষ কেক কাটা হয় এবং সবাইকে খেলাঘরের পক্ষ থেকে জন্মদিনের উপহার ও খেলাঘর ভাইয়া কবি আসাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত জন্মদিনের কার্ড প্রদান করা হয়।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে এই আয়োজনের স্বপ্রণোদিত পৃষ্ঠপোষক প্রাক্তন খেলাঘরিয়ান ব্যারিস্টার ওমর হাসান আল জাহিদ ও আব্দুল মান্নাফ লোকাস-কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় এবং খেলাঘরের ভবিষ্যৎ সকল কর্মকান্ডেও তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

সবার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্বে এই আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। মিলনায়তন ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ায় বাংলাদেশ সেন্টারে প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয় এবং পুরো আয়োজনে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য অন্যান্য সকলের পাশাপাশি বিশেষ করে হাসিন রহমান, তরুনা হাসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মিথিলা রহমান নীলা-কে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

খেলাঘর কানাডার পথচলায় সকলের অব্যাহত সমর্থন, সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং সমন্বিত পরিকল্পনায় ও সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শিশুদের সাংস্কৃতিক, মানসিক ও মানবিক বিকাশে যথাসম্ভব ভূমিকা রাখার অঙ্গীকারের ভেতর দিয়ে ‘সুন্দরের ছবি আঁকি’- শিশুদের এই ঘরোয়া আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।