বিনোদন ডেস্ক : চার দশক আগে বাংলাদেশের রক সংগীতে লেখা হয়েছিল এক নাম ‘ওয়ারফেজ’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই নাম শুধু ব্যান্ড দল হয়ে থাকেনি, হয়ে উঠেছে এক অনুভূতির নাম। মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন তারা গায় ‘অবাক ভালোবাসা’, ‘বসে আছি একা’, ‘জীবনধারা’, ‘অসামাজিক’, ‘পূর্ণতা’ কিংবা ‘মৌনতা’ তখন হাজারো কণ্ঠ এক হয়ে যায় গানগুলোর সুরে। আজ সেই গল্প ছড়িয়ে পড়ছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে, ছুটে চলেছে দূরদেশ কানাডায়।

২০২৪ সালে, ওয়ারফেজ উদযাপন করল তাদের ৪০ বছরের সংগীতজীবন। সেই উদযাপনের অংশ হিসেবে দলটি ঘোষণা দিয়েছিল–শুধু দেশে নয়, বিদেশেও করবে বছরব্যাপী কনসার্ট সফর।

তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের শুরুতে ব্যান্ডটি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিল এক মাসের সফরে। সেখান থেকে ফিরে যেন আরও দৃপ্ত মনোভাবে, আরও সংগঠিত ছন্দে তারা এবার ছুটছে কানাডায়। এই সফরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ারফেজ কানাডা ট্যুর ২০২৫’।

এন্টারটেইনমেন্ট। তাদের ভাষায়, ‘এটি কেবল কনসার্ট নয়; এটি চার দশকের রক ঐতিহ্যের উদযাপন।’

‘ওয়ারফেজ কানাডা ট্যুর ২০২৫’ এই সফরের শুরুটা হবে ৬ সেপ্টেম্বর, অন্টারিওর লন্ডন শহরে। এরপর একে একে ওয়ারফেজ পৌঁছাবে ভ্যাঙ্কুভার (৭ সেপ্টেম্বর), এডমন্টন (১২ সেপ্টেম্বর), হ্যালিফ্যাক্স (১৪ সেপ্টেম্বর), সেন্ট জনস (১৯ সেপ্টেম্বর), রেজিনা (২০ সেপ্টেম্বর), সাসকাচুয়ান (২১ সেপ্টেম্বর), টরন্টো (২৬ সেপ্টেম্বর), অটোয়া (২৭ সেপ্টেম্বর) এবং আগামী ৩ অক্টোবর উইনিপেগ কনসার্টের মধ্য দিয়ে ওয়ারফেজের সফর শেষ হবে।

ওয়ারফেজের কানাডা ট্যুরে প্রতিটি শহরে যেন একেকটি গল্প তৈরি হবে। প্রবাসী দর্শকদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে পুরোনো গান, চেনা সুর আর হারিয়ে যাওয়া দিনের আবেগ। এ সফর শুধু একটি ব্যান্ডের নয়। এটি এক দেশের সংগীত ঐতিহ্য, এক সময়ের সংস্কৃতি বহন করে চলার নাম।

যখন কানাডার মঞ্চে ওয়ারফেজ তাদের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করবে তখন হয়তো মাঠের কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা কেউ চোখ মুছবে, মনে পড়বে তার নিজের তরুণ বয়স, ঢাকার কোনো এক সন্ধ্যা কিংবা কোনো চেনা এক মুখ।

ওয়ারফেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ড্রামার ও দলনেতা শেখ মনিরুল আলম টিপু বলেন, ‘গানে গানে ওয়ারফেজ ৪০ বছরের পথ অতিক্রম করে ফেলেছে–এটি ভাবলেই অন্য রকম এক ভালো লাগায় মনটা ছেয়ে যাচ্ছে। এটি একদিক থেকে যেমন আনন্দের, তেমনই বিস্ময়েরও। কেননা, সংগীতের মান ধরে রেখে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া মোটেও সহজ নয়। বিশেষ করে যে দেশে ব্যান্ড সংগীতের প্রতিষ্ঠার জন্য এক সময় রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। নিরীক্ষা আর অনবদ্য আয়োজন দিয়ে দেশীয় ব্যান্ডগুলো শ্রোতার মনে জায়গা করে নিয়েছে। ওয়ারফেজ হাতেগোনা সেই কয়েকটি ব্যান্ডের একটি, যারা চার দশকের দীর্ঘ সফর অব্যাহত রাখতে পেরেছে। আমরা কৃতজ্ঞ সেই সব ভক্ত-শ্রোতার কাছে, যাদের ভালোবাসা আমাদের এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে।’

বাংলাদেশের রক মিউজিকের জন্য এই সফরগুলো শুধু আয়োজন নয়, আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। প্রবাসে থাকা মানুষদের জন্য এটি যেন এক সন্ধ্যার জন্য যেন ফিরে যাওয়া নিজের শিকড়ে, নিজের ছায়ায়।

চার দশকের পথচলা পেরিয়ে ওয়ারফেজ এখন শুধু ব্যান্ড নয়, এক চলমান স্মৃতি। সেই স্মৃতির নতুন অধ্যায় এবার লেখা হবে কানাডার শহরগুলোয়, প্রতিটি গানে, প্রতিটি করতালিতে।

১৯৮৪ সালের ৫ জুন গানের ভুবনে আত্মপ্রকাশ করে ওয়ারফেজ। এরপর একে একে আটটি ব্যান্ড অ্যালবাম এবং বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবাম ও একক গান প্রকাশ করে জয় করেছে অগণিত শ্রোতার হৃদয়।