মহামারি করোনা কাল – এক অভাবনীয় কঠিন সময়, মানব জাতির জন্যে এক মহা উৎপাত। “সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং” জাতীয় আরোপিত বিধিনিষেধের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে আজকাল মানুষ চলার পথে পাশের মানুষটি থেকে কমপক্ষে দুই ফুট দূরত্বে সরে যায়। এ অবস্থা দেখে মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই কথা “মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে / ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে।” আর আজ এ কেমন অস্পৃশ্যতা কোভিড-১৯ পাল্টে দিয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রণালী, সূচিত করেছে নানা অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন। আজ আমরা কাজ করি “ফ্রম হোম”, লেখাপড়া করি “অনলাইন”, কনফারেন্স করি “ভার্চুয়ালি”। “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা” ভেবে ভেবে আমরা যারা একসময় ঘুরে বেড়াতাম আপন ইচ্ছেমতো, ডানা-ভাঙ্গা পাখির মতো আজ আমরা অন্তরীণ আপন ক‚লায়। এ অবস্থায় দুই বছর পর সামনা-সামনি বসে “লাইভ” অনুষ্ঠান দেখার আমন্ত্রণ পেয়ে সব কাজ ভুলে গিয়ে একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম।
এই প্রতিশ্রæতি রক্ষায় সেদিন সাঁঝের বেলায় গিয়েছিলাম গানের ঝর্ণাতলায়- পঞ্চ-শিল্পীর পরিবেশনায় বাংলা টেলিভিশন কানাডার নিরীক্ষাধর্মী সংগীতানুষ্ঠান ‘গানের আড্ডা’-য়। আড্ডা শব্দটা ইনফরম্যাল; একটু ঘরোয়া-ঘরোয়া গন্ধ আছে যা আমাদের বহুভাষী, (বহুভাষা-ভাষী নয়), বাঙ্গালিদের স্বভাবের সাথে মানায় ভালো। আড্ডায় শিল্পীরা নিজেদের পছন্দমত গান করেন, গান নিয়ে কথা বলেন, এবং সহশিল্পীরাও সবাই সবার গান মনোযোগ দিয়ে শোনেন। ফলে ‘বাফে’ ডিনারের মতো শ্রোতা-দর্শকরা একসাথে পেয়ে যান নানান উপাদেয় উপকরণ – পরিবেশনায় শিল্পীর স্বকীয়তা এবং গান নিয়ে শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা যা অনুষ্ঠান উপভোগে এক বাড়তি মাত্রা যোগ করে। পঞ্চ-শিল্পীর গানের আড্ডায় বাংলা টেলিভিশন কানাডার স্টুডিওতে সেদিন উপস্থিত ছিলেন সর্বসাকুল্যে ১৪ জন। পাঁচ শিল্পীর বাইরে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক দেখ-ভাল করার জন্যে চার জন কর্মকর্তা আর বাকি পাঁচ জন আমরা শ্রোতা-দর্শক।
প্রারম্ভিক চা-চক্রের পর শুরু হলো পঞ্চ-শিল্পীর, (ঠিক বললাম কি?), হ্যাঁ পঞ্চ-শিল্পীর গান, পঞ্চ-কবির নয়। শিল্পীরা হলেন, পরিবেশনার ক্রম-অনুসারে, স্নিগ্ধা চৌধুরী, নন্দিতা গোমস, সুনীল গোমস, এ, এফ, এম, আলিমুজ্জামান এবং চন্দন পাল। তাঁরা গাইলেন চার কবির গান এবং সেই সাথে কিছু আধুনিক। শুরুতেই মাইক্রোফোন নিলেন সাজ্জাদ আলী – বাংলা টেলিভিশন কানাডা-র নির্বাহী পরিচালক। তার স্বভাব-সুলভ সংক্ষিপ্ত, সরস এবং সবিনয় শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি আগত সবাইকে স্বাগত জানালেন এবং সবাইকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেইসাথে করোনার জন্যে আরোপিত বিধিনিষেধ এবং ষ্টুডিওর ধারণ ক্ষমতার অপ্রতুলতায় ইচ্ছা থাকলেও আরো বেশি শ্রোতাকে আমন্ত্রণ জানাতে অপারগতার কথা তুলে ধরেন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন “সব ভালো তার শেষ ভালো যার”। তাঁর ধারণা কেটে যাবে এই অভিশপ্ত করোনা কাল; ক্রমশ আরো শিথিল হবে আরোপিত বিধিনিষেধ; রাত শেষ হবে, পাখির কল-কাকলি শোনা যাবে ডালে-ডালে, ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। প্রকৃতি আবার ফিরে পাবে আপন ছন্দ, ফুটে উঠবে তার সুন্দর শোভা। সেদিন বাংলা টেলিভিশন কানাডার সুরের ধারার ‘লাইভ’ সংগীতানুষ্ঠান হলভর্তি শ্রোতা-দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে আবারো মঞ্চ মাতাবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে সাজ্জাদ ভাই মাইক্রোফোন তুলে দিলেন নুরুন নাহার সুপ্তির হাতে। সুপ্তি গানের আড্ডার এই ১১তমপর্বের সঞ্চালক। প্রথমেই তিনি অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক সজীব চৌধুরীকে কিছু বলার অনুরোধ জানালেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রাক-কথনে সজীব চৌধুরী করোনা-ক্লিষ্ট দুই বছর কোন ‘লাইভ’ অনুষ্ঠান আয়োজনের অনিবার্য্য অপারগতার কথা তুলে ধরেন । সেইসাথে এই বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন যে আমন্ত্রিত শিল্পীরা সবাই সঙ্গীতপ্রেমী; লাইভ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁরা সঙ্গীত-চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। সজীবের আমন্ত্রণে উপস্থিত দর্শকদের পক্ষে মিসেস সুজিতা দত্ত খুব ছোট্ট করে তাঁর অভিব্যক্তি তুলে ধরেন এভাবে “দীর্ঘ দু’ বছর পর আজ গানের আড্ডায় আসতে পেরে মনে হচ্ছে রুদ্ধ ঘরের দরজা ভেঙ্গে খোলা আকাশের নিচে মুক্তাঙ্গনে দাঁড়িয়েছি।”
শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে এবার গানের পালা। তাঁর সহজাত সাবলীলতায় সুপ্তি গান গাইতে অনুরোধ জানালেন অনুষ্ঠানের প্রথম শিল্পী স্নিগ্ধা চৌধুরীকে। স্নিগ্ধার গানে তবলা সংগতে আছেন সজীব চৌধুরী। স্নিগ্ধা এবং সজীব উভয়ে বাংলা টেলিভিশন কানাডার অন্যতম সংগঠক। দীর্ঘ দু’বছর পর সামনা-সামনি বসে গান করতে পারার আনন্দ উপস্থিত সকলের সাথে সহভাগ করে নেন স্নিগ্ধা। তাঁর কণ্ঠে অনুষ্ঠানের প্রথম গান রবীন্দ্রনাথের সেই আশা জাগানিয়া ব্রহ্মসঙ্গীত – “একি এ সুন্দর শোভা, কী মুখ হেরি / এ আজি মোর ঘরে আইল হৃদয়নাথ!” এ হৃদয় নাথই বিশ্বরাজ। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় – যে প্রত্যাশায় সাজ্জাদ ভাই তাঁর স্বাগত ভাষণ শেষ করেছিলেন তারই প্রতিধ্বনি যেন শুনতে পেলাম স্নিগ্ধার গাওয়া উদ্বোধনী সংগীতে। ঠিক বলতে পারবোনা এই ভাবগত সাযুজ্য পূর্বপরিকল্পিত, না স্রেফ কাকতালীয়।
সত্যি কী সুন্দর শোভা বিশ্বরাজের! কী অপরূপ লীলা তাঁর – “নিশি সুন্দর বিমল নীলাম্বর”। স্নিগ্ধা খুব নিমগ্ন হয়ে গান করে। গান শুনতে শুনতে মনে হয় তাঁর অসীমে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারাতেই যেন আনন্দ অপার। স্নিগ্ধার কন্ঠে মন ছুঁয়ে যাওয়া দ্বিতীয় গান “আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে” আমাদের ভাবতে শেখায় “বিশ্বরাজ” এর অসীমতার কাছে আমাদের নিজেদের ক্ষুদ্র “আমি”-র অহঙ্কার অর্থহীন আস্ফালন মাত্র। তাই পরিপূর্ণ প্রশান্তির প্রত্যাশায় জীবনদেবতার উদ্যেশ্যে শিল্পীর সুরে সুরে আমরাও প্রার্থনা জানাই “আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধূলার তলে/ আমারে আড়াল করিয়া দাঁড়াও হৃদয়পদ্মদলে।” বিশ্বচরাচরে সর্বত্র বিরাজিত সেই বিশ্বরাজের সাথে আমাদের অন্তর্নিহিত সংযোগ সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশ যা অনেক সময় থাকে আমাদের দৃষ্টির অগোচরে, উপলব্ধির বাইরে। কিন্তু যখন আমরা অন্তর্মুখী হই তখন দেখতে পাই তাঁর “চরণপানে নয়ন করি নত / ভুবন দাঁড়িয়ে আছে একান্ত।” স্নিগ্ধার কণ্ঠে তৃতীয় গানআমার “খেলা যখন ছিল তোমার সনে” সেই উপলব্ধিই জাগিয়েছিল আমাদের মনে।
ফেব্রæয়ারি আমাদের ভাষার মাস, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাস। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্নিগ্ধা বিশ্বরাজের বিশাল পাঠশালা থেকে আমাদের নিয়ে এলেন স্বদেশের মাটিতে। শহীদদের স্মৃতি হৃদয়ে ধারণ করে আকন্ঠ আবেগে এবার তিনি গাইলেন পঞ্চ-কবির অন্যতম অতুলপ্রসাদের সেই আবেগ জাগানিয়া গান, “মোদের গরব মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা”।
সুপ্তি এবার গাইতে আহবান জানালেন শিল্পী নন্দিতা গোমস-কে। নন্দিতা গোমস বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, যদিও তিনি নিজেকে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তাঁর শাড়ির রং দেখে আঁচ করা গিয়েছিলো বিশ্বচরাচর থেকে তিনি আমাদের নিয়ে আসবেন মাটির ধরাতলে, বসন্তের অপরূপ শোভামণ্ডিত আমাদের চিরচেনা বাংলার প্রকৃতিতে। ফাগুন রং এর মাস। নন্দিত শিল্পী নন্দিতা গোমস পর পর পরিবেশন করলেন রবীন্দ্রনাথের তিনটি বসন্তের গান – “মম অন্তর উদাসে…”, “নিবিড় অমা-তিমির হতে।…”, এবং “তুমি কিছু দিয়ে যাও প্রাণে …”। গানের কথায়, ভাবে, আবেগে, আর শিল্পীর সুরের মূর্ছনায় আনন্দে উদ্বেলিত শ্রোতা। বসন্তের উদাসী হাওয়ায় প্রাণে লাগে দোলা, চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফুলের বর্ণিল বাহার, আর জ্যোৎস্নাপ্লাবিত পূর্ণিমা নিশি। শিল্পীর পরিশীলিত পরিবেশনার সুর ও বাণীর নান্দনিক আবহে বিমুগ্ধ শ্রোতা-দর্শক বাইরে তুষারের চাদরে ঢাকা জমাট প্রকৃতির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে একান্তে অনুভব করলেন “ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক” “আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।”
আসরের তৃতীয় শিল্পী সুনীল গোমস – টরন্টোর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটি পরিচিত নাম। দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে নিয়োজিত আছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চায়, তবু তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি “I’m still learning”। ঠিকই বলেছেন তিনি। জানার তো শেষ নেই, আর রবীন্দ্রনাথকে জানাতো আমাদের কখনো ফুরোবে না। সুনীলদা রসিক সুজন। সদা থাকেন আনন্দে, রাখেন আনন্দে সবাইকে আড্ডার আসরে। শুরু করলেন তিনি আনন্দের গান দিয়ে। নিমগ্ন চিত্তে যখন গাইলেন “সদা থাকো আনন্দে সংসারে নির্ভয়ে নির্মল প্রাণে”, স্নিগ্ধ, শান্ত রসে সিক্ত হয়ে পরম প্রশান্তিতে সকলের মন ভরে গেলো। এর পরে তিনি গাইলেন “সবার সাথে চলতেছিল অজানা এই পথের অন্ধকারে” প্রেম পর্যায়ের একটি গান। শিল্পীর শেষ গানে আবার বেজে উঠলো নিবেদনের সুর – “তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর।” কে এই সাথি? তিনি “জীবনদেবতা” – নিজেকে নির্ভর করতে রবীন্দ্রনাথ যাঁর কাছে ফিরে যেতেন বারে বারে – সংশয়ে, সংকটে, সন্তাপে, সান্ত¡নায়, যেমন করে শিশু নিজেকে নিরাপদ ভাবে মায়ের কোলে। ভরা আবেগে শিল্পী গাইলেন “নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে।” গানের কথা ও শিল্পীর সুরের ইন্দ্রজাল উপস্থিত সকলের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিলো।
এখানে বলা যায় প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক আবু সায়ীদ আইয়ুব এর মতে রবীন্দ্রসঙ্গীতে “শব্দ-ঐশ্বর্য্য ও ধ্বনিগরিমা যেমন অসাধারণ তেমনি অসাধারণ কথা ও সুরের মিতালি।” রবীন্দ্র গবেষক সুধীর চক্রবর্তী রূপকের মাধ্যমে কথাটি আরো সহজ করে বলেছেন। তাঁর মতে সুর ও বাণীর সম্পর্ক কাপ ও ডিশের সম্পর্কের মতো। কাপের গায়ে যদি ফুল আঁকা থাকে, তবে প্রজাপতি আঁকতে হবে ডিশের গায়ে। একেই বলে “হারমনি”।
এরকম মিতালি থাকলেই সংগীতের আসল “বিভা” বেরিয়ে আসে। আজকের আসরের তিন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর প্রত্যেকের পরিবেশনায় বাণী ও সুরের সেই মেলবন্ধন চোখে পড়েছে।
আড্ডার আসরে এবারে গাইলেন বিশিষ্ঠ ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত শিল্পী এ, এফ, এম, আলিমুজ্জামান। গানের জগতে আছেন দীর্ঘদিন। সঙ্গীত তাঁর “প্যাশন”। টরন্টোতে একটি গানের স্কুল পরিচালনা করেন। তাঁর পাঞ্জাবির কালো রং দর্শকদের আবারো স্মরণ করিয়ে দিলো ফাগুন মাস শোকের মাস, ভাষার জন্যে আত্মবলিদানের মাস। শহীদদের স্মরণে তিনি যখন গাইলেন “শহীদ মিনার ফুলে ফুলে গেছে ঢেকে” তখন শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় ভরে ওঠলো আমাদের হৃদয় কানায় কানায়, আর স্মৃতির পর্দায় ভেসে উঠলো ফুলে ফুলে ঢাকা ২১শে ফেব্রুয়ারির শহীদ মিনার, আমাদের স্মৃতির মিনার, বাঙালির জাতীয় চেতনার উৎসকেন্দ্র। এবার তিনি চলে গেলেন আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের গানে। গাইলেন “মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় চাঁপার ফুল।” আমরা যখন ডুবেছিলাম শিল্পীর গানে, আসরে উপস্থিত আমাদের ভাবি (আলিমুজ্জামান ভাই এর জীবনসাথি) হয়তো তখন ফিরে গিয়েছিলেন সেই দিনের স্মৃতিতে যেদিন এই প্রিয় মানুষটি তাঁর খোঁপায় প্রথম গুঁজে দিয়েছিলেন চাঁপা ফুল।
সুপ্তির আহ্বানে এবার গান শুরু করলেন আসরের শেষ শিল্পী চন্দন পাল। ছিলাম ফাগুনে, শিল্পী আমাদের নিয়ে এলেন শ্রাবণের ঘন মেঘের দিনে। প্রথম গান নজরুলের ভজন। দরাজ কণ্ঠে গাইলেন “গগনে কৃষ্ণমেঘ দোলে, কিশোর কৃষ্ণ দোলে বৃন্দাবনে, ঝুলনদোলায় দোলে।” শিল্পীর সুরের ছন্দে আর সজীবের তবলার বোলে দুলতে লাগলাম আসরে উপস্থিত আমরা সবাই। শ্রাবণে এসে চন্দন আবার আমাদের নিয়ে গেলেন ফাল্গুনে, আমের মঞ্জরির মধুর গন্ধমাখা বসন্তের উদাসী হাওয়ার দিনে। গাইলেন “বেলফুল এনে দাও চাই না বকুল, চাই না হেনা এনে দাও আমের মুকুল।” আসরে ইতোমধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ আর নজরুলের গান শুনেছি। পঞ্চ-কবির আর একজন দ্বিজেন্দ্র লাল রায়। এবার মন আকুল-করা একটি দ্বিজেন্দ্রগীতি। গানের সুরে শিল্পীর উদাত্ত আহ্বানে “বেলা বয়ে যায়, ছোট্ট মোদের পানসি তরী সঙ্গে কে কে যাবি যায়!” তন্ময় হয়ে আমরাও উঠে গেলাম সেই পানসি তরীতে। এরপর শ্রোতাদের অনুরোধে চন্দন গাইলেন মান্না, হেমন্ত, আর আশা-র কিছু গান। তাঁর কণ্ঠে গান শুনতে শুনতে মনে হলো সব বনে যেমন চন্দন কাঠ থাকেনা, তেমনি সব আসরেও চন্দনের মতো স্বভাব-শিল্পীর সাক্ষাৎ মেলেনা। চন্দন যখন আসরের শেষ গানটি গাইলেন “বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা”, তখন ঘড়িতে বাজে রাত সাড়ে নয়টা। দূর নীলিমায় তখন বাঁকা চাঁদ উঠে গেছে।
আসরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব শিল্পীর সাথে তবলায় সঙ্গত করেছেন তবলা শিল্পী সজীব চৌধুরী। তাঁর ধৈর্য এবং নিষ্ঠা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।টেরই পেলামনা কিভাবে গানে গানে কেটে গেলো আড়াইটা ঘন্টা! সত্যিই তো মনের মধ্যে সুরের যে প্রেরণা তা ব্যাখ্যার অতীত!
ধন্যবাদ শিল্পীদের, ধন্যবাদ বাংলা টেলিভিশন কানাডা-কে মন-ভালো-করা একটি সঙ্গীত সন্ধ্যা উপহার দেয়ার জন্যে।