সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. আবুল হাসনাত

অনলাইন ডেস্ক : রিজেন্ট হাসপাতালের পর সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাস শনাক্তে ভুয়া নমুনা পরীক্ষার প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব। কারও শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কিনা সেটি তারা অনুমোদনহীন অ্যান্টিবডি কিট দিয়ে পরীক্ষা করছিল। তবে যে রিপোর্ট দিচ্ছিল সেখানে আরটিপিসিআর ল্যাবের। অথচ এই হাসপাতালে কোনো আরটিসিআর ল্যাব নেই।

এ ধরনের ভয়ঙ্কর প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ পেয়ে গতকাল বেলা পৌনে ২টার দিকে অভিযানে যায় র‌্যাব। সেখানে গিয়ে র‌্যাব জানতে পারে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্যই প্রতি রোগীর কাছ থেকে তারা ১০ হাজার করে টাকা নিচ্ছিল।

শুধু তা-ই নয়, অভিযানে র‌্যাবের অভিযানে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ১১ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রীও পাওয়া গেছে। অপারেশন করার আগে রোগীকে অজ্ঞান করতে এই সার্জিক্যাল সামগ্রী ব্যবহার করা হতো। অভিযানে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাতসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে থাকা র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনার নমুনা পরীক্ষায় হয়তো অ্যান্টিবডি কিট বা ডিভাইস ব্যবহার করেছে। এ ধরনের কিট বা ডিভাইস ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের কোনো অনুমোদন নেই। যদি তারা এটি না করে থাকে তবে পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিচ্ছে। কারণ তাদের এখানে আরটিপিসিআর ল্যাবই নেই। করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি পেয়েছিল। পরে সেই অনুমতি বাতিল করা হয়। অনুমোদনহীন এসব কিট তারা কোথা থেকে এনেছে তা বলতে চাইছে না। তারা র‌্যাবের অভিযানের শুরু থেকেই বলে আসছে এ ধরনের কোনো কিট তারা ব্যবহার করছে না।

অভিযানের সময় দেখা যায়, তারা একবার ব্যবহারের সার্জিক্যাল সামগ্রী একাধিকবার ব্যবহার করছে। এমনকি প্যাথলজি টেস্টের উপকরণ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করছে না। এদিকে র‌্যাবের অভিযানের সময় বেরিয়ে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের মতো সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরও লাইসেন্স নেই। এই হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। এর পর তারা সেটি নবায়ন করেনি। এমনকি এক বছর পার হলেও তারা সেটি নবায়নের জন্য আবেদন করেনি। তবে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর চলতি মাসের ১৩ তারিখে নবায়নের আবেদন করেছে। তবে সেটি এখনো নবায়ন হয়নি। আরটিপিসিআর ল্যাব না থাকলেও তারা কীভাবে নমুনা পরীক্ষা করছে সেটি খতিয়ে দেখতেই অভিযানে চালানো হয়। বেলা পৌনে ২টা থেকে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, করোনা ভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন ছিল না সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। তারাও বলেছে তারা কোনো পরীক্ষা করছে না। কিন্তু অভিযানের সময় করোনা পরীক্ষার ফলের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব প্রতিবেদনে হাসপাতালের লোগোও রয়েছে। তা হলে এই প্রতিবেদনগুলো ভুয়া। কারণ তাদের আরটিপিসিআর ল্যাব নেই। যদি তারা পরীক্ষা করেই থাকে, তবে তা অনুমোদনহীন অ্যান্টিবডি কিট অথবা ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা করেছে। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান শুরু করি। তারা কীভাবে নমুনা পরীক্ষা করেছে সেটি বলতে নারাজ। এখানে যে রিপোর্টগুলো পেয়েছে এগুলোয় স্পষ্টই দেখা যায় এসব পরীক্ষা তাদের এখানেই হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শুধু ভুয়া পরীক্ষা করছে না, যেসব মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না, এগুলো একাধিকবার ব্যবহার করছেন। তারা এসব সামগ্রী হাঁড়িপাতিলে পাউডার মিশিয়ে স্যানিটাইজ করছে বলেও আমরা দেখেছি। এটাও একটি বড় অনিয়ম।

র‌্যাবের হাতে আটক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবুল হাসনাত বলেন, তারা শুধু একটি অ্যান্টিবডি টেস্ট করেছেন। ডা. নারায়ণ ভৌমিক এই কিট নিয়ে এসেছেন তার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার জন্য। প্লাজমা দেবেন বলেই তিনি এই পরীক্ষা করেছিলেন। করোনার নমুনা পরীক্ষার কোনো রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। অ্যান্টিবডি টেস্টের রিপোর্টগুলো তাহলে কীভাবে এসেছে- এই প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেননি।

১১ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী : র‌্যাবের অভিযানের সময় হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচটি সার্জিক্যাল সামগ্রী (এনডোট্রাসিয়াল টিউব) পাওয়া গেছে। এসব সার্জিক্যাল সামগ্রী অপারেশন করার সময় রোগীদের অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত হতো বলে জানিয়েছেন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা। এসব সার্জিক্যাল সামগ্রী যাচাই করে দেখা যায়, এগুলোর কোনোটির মেয়াদ ২০০৯ সালে আবার কোনোটির মেয়াদ ২০১১ সালে শেষ হয়েছে। হাসপাতালটির বাকি চারটি অপারেশন থিয়েটার তালা মারা।

অভিযানে উপস্থিত ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এসব সার্জিক্যাল সামগ্রী অপারেশন করার সময় রোগীর গলার ভেতর ঢোকানো হয়। তবে এই সামগ্রীগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ‘রোগীর মৃত্যুঝুঁকি’ রয়েছে।