৫ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি ও কানাডার বর্ডার সিকিউরিটি অ্যান্ড অর্গানাইজ ক্রাইম রিডাকশন মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার-এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভার আয়োজন করে কানাডা-বাংলাদেশ ট্রেড প্রমোশন সেন্টার (সিবিটিপিসি)। এতে দুই দেশের মন্ত্রী মহোদয় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিচেস ইস্ট ইয়র্ক-এর এমপি ন্যাথেনিয়াল আরস্ক্রিন স্মিথ, কানাডাস্থ বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমানসহ কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। আলোচনার শুরুতে টিপু মুন্সি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা উল্লেখ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডর পিতা প্রয়াত প্রধান মন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডর ভূমিকার প্রসংশা করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের তাকে দেওয়া ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’র বিষয়ে আলোকপাত করেন। এবং তাকে সম্মাননা দিতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
তিনি ফেডারেল মন্ত্রী বিল ব্লেয়ারকে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় অবস্থান করছে। তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা এবং বিচারের সম্মুখীন করার বিষয়ে কানাডার সহযোগীতা চাই।’
কানাডার বর্ডার সিকিউরিটি অ্যান্ড ওর্গানাইজ ক্রাইম রিডাকশন মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার তার বক্তব্যে মিয়ানমার কর্তৃক নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে সরকারকে বিশেষ ধন্যবাদ দেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘নব্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া ছিল কানাডার জন্য গর্বের বিষয়।‘
বঙ্গবন্ধুর খুনির প্রর্তাবর্তণের বিষয়ে জানান, বিষয়টি তিনি দ্রুতই কানাডার আইন ও বিচার মন্ত্রী এবং বর্হিগমন ও নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন।
তিনি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বাঁধাগুলো সম্পর্কে জানতে চান।
এমপি ন্যাথেনিয়াল তার বক্তব্যে বলেন, ‘তিন বছর আগে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে আমার দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। নানা দিক থেকেই দেশটি উন্নতি করছে। ভবিষ্যতে তাদের এ উন্নয়নের ধারায় আমরা বন্ধুর মত পাশে থাকব।’
বাংলাদেশের প্রতিনিধিবৃন্দ বিল ব্লেয়ার ও ন্যাথানিয়ালকে জানান, কানাডার সাথে বাংলাদেশের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কিছু বিষয় অমীমাংসীত রয়ে গেছে। যেমন- বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনের ভিসা সেন্টার পূণস্থাপন, ফেডারেল সরকারের বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভ্রমণ সতর্কীপ্রত্যাহার, প্রত্যক্ষ ছাত্র ভর্তির সুযোগ দেওয়াসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন তারা।
এছাড়া কানাডিয়ান বিনোযোগকারী ও ব্যবসায়িদের বাংলাদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানান বাংলাদেশে থেকে আসা প্রতিনিধি দলটি।
তারা উল্লেখ করেন, ‘পূর্বে যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এখন সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় সেখানে ব্যবসা করাও সহজ।’
বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের পক্ষ থেকে কানাডিয়ান ব্যবসায়ি ও উদ্যোক্তদের জন্য বাংলাদেশে বিশেষায়িত এলাকা গড়ে তোলার প্রস্থাব করা হয়।
আইটি সেক্টরে দুই দেশের মধ্য ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন বিনিয়োগকারী তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিও জোর দেন। এবং কানাডিয়ান ওষুধ কোম্পনিগুলো বাংলাদেশের কাছ থেকে ওষুধ উত্পাদনে সহায়তা নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
এ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক সাহায্য সহযোগীতা বৃদ্বির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
অতিথিরা ছাড়াও এ মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনের কাউন্সেলর করিন পেটরিসর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিজিএমইএ-এর সহসভাপতি মসিউল আলম, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মুশফিকুর রহমান, তৈরি পোশাক শিল্প ব্যবসায়ি ফজলে এলাহী, আইটি ব্যবসায়ি হানিফ মোহাম্মদ, সিবিটিপিসি-এর চেয়ারম্যান আলিমুর রহমান হায়দারি, পরিচালক সৈয়দ শামছুল আলম, অলোক চৌধুরী, মাহবুব আনাম, রেজাউল করিম তালুকদার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুস্তফা হক, সিইও নাজমুল জায়গীরদার রানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকিং প্রফেশনাল এহসানুল হক, টরন্টো ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট খোকন আব্বাস, স্থানীয় ব্যবসায়ি ও কমিউনিটির প্রতিনিধি কাফিল উদ্দীন পারভেজসহ প্রমুখ।
মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী কিছু সময় অতিবাহিত করেন এবং সিবিটিপিসি-এর কর্মকর্তাদের সাথে চা পান করেন। পরে তিনি টরন্টোর বাংলা টাউন খ্যাত ড্যানফোর্থ এভিনিউয়ের ঘরোয়া রেস্টেুরেন্ট এর প্রাঙ্গন পরিদর্শন করেন। এর পর খোকন আব্বাসসহ স্থানীয়দের নিয়ে এ এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান এবং কুশল বিনিময় করেন। তিনি স্থানীয় বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ছবি তোলেন।