কবীর সুমন-এর ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের ৩০ বছর পূর্তিতে আন্তর্জাতিক পরিসরে ভার্চুয়াল উদযাপন হয় এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখে, ‘তোমাকে চাই’ এর প্রকাশের দিনে। এই আয়োজনে কবীর সুমনের সাঙ্গীতিক অভিযাত্রার অনুরাগীরা অংশ নিয়েছেন। এতে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশ এবং উত্তর আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব ছিল।
কবীর সুমনের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৬ই মার্চ, ঊড়িষ্যার কটক শহরে। সঙ্গীত অন্তপ্রাণ ও পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী বাবা সুধীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মা উমা চট্টোপাধ্যায়ের কল্যাণে সাঙ্গীতিক আবহে বেড়ে ওঠা সুমন একদিকে হিন্দুস্তানি খেয়াল যেমন শিখেছেন, তেমনি আধুনিক গানের সঙ্গেও খুব অল্প বয়স থেকেই বিস্তর পরিচয় ছিল তাঁর। গত শতকের ছয়ের দশক অর্থাৎ আকাশবাণীর পর্ব থেকে ধরলে কবীর সুমনের সঙ্গীত জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমাকে বড়ো দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। একভাগে আধুনিক বাংলা গান- যার জন্য তিনি বেঁচে ছিলেন, আরেকভাগে বাংলা ভাষায় খেয়াল- যার জন্য তিনি বেঁচে আছেন (তাঁর ভাষ্যে)।
১৯৯২ সালে ‘তোমাকে চাই’ এর মধ্য দিয়ে আধুনিক বাংলা গানের এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেন কবীর সুমন। মুক্তি আনেন আধুনিক বাংলা গানে, আর এখন মুক্ত করবার লড়াই জারি রেখেছেন বাংলা ভাষায় খেয়াল নিয়ে। সবচেয়ে বড়ো বিষয় – সুমন ধারাবাহিকভাবে বাংলা গানের সেবা করে যাচ্ছেন। তিনি বলে থাকেন, সঙ্গীত আর কিচ্ছু চায় না, শুধু সেবক চায়।
কবীর সুমন বøটিং পেপারের মতো পৃথিবীর ইত্যকার সাহিত্য-সঙ্গীত শুষে নিয়ে, তাঁর ভাষায়Ñ অনেক মায়ের স্তন্য আকণ্ঠ পান করে নিজ ক্যানভাস রাঙিয়েছেন, পুষ্ট করেছেন বাংলা সঙ্গীতের দুনিয়া। তিনি বাংলা গানকে পুষ্ট করার পাশাপাশি সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ভাবিয়েছেন আমাদের, ভাবাচ্ছেন। Bob Dylan brought intellect into our pop music – জ্যাক নিকলসনের এই কথাটি ছাপা হয় New York Times এ। আর Kabir Suman brought intellect into our modern Bengali music.
‘তোমাকে চাই’ এর ৩০ বছর পূর্তির এ আয়োজন ছিল সুমনের সঙ্গীত ভাবনা ও তাঁর সৃষ্ট সঙ্গীত নিয়ে। সুমনের গান, সুমনকে নিয়ে লেখা গান, সুমনকে নিয়ে লেখা কবিতা, সুমনের সৃষ্টি নিয়ে আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো ছিল অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল ধ্রুব বসু রায়, বিশ্বরূপ ব্যানার্জ্জী ও পিনাকী গুহর। ধ্রুব বসু রায় ‘নাগরিক’ দলটির সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কবীর সুমনের গানবাজনার সহশিল্পী ও কবীর সুমনের সঙ্গীত ভাবনার অন্যতম সাক্ষী। বিশ্বরূপ ব্যানার্জ্জী কবীর সুমনের বন্ধু, ১৯৯২ সালের তেইশে এপ্রিল ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের রিলিজ অনুষ্ঠানের সাক্ষী, ১৯৯১ সালের ৫ই মে কলকাতায় কবীর সুমনের প্রথম পেশাদার একক অনুষ্ঠানেরও সাক্ষী। পিনাকী গুহ কবীর সুমনের দীর্ঘদিনের সহশিল্পী, সুমনের অনুষ্ঠানে আলোর শিল্পী, ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানগুলোর সাক্ষী, নিজে একজন প্রথিতযশা নাট্যকর্মী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘তোমাকে চাই’ এর ২৫ বছর পূর্তির একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। উল্লেখ্য, ‘তোমাকে চাই’ এর ২৫ বছরে (২৩শে এপ্রিল ২০১৭) ইন্ডিয়া পোস্টের মাই স্ট্যাম্প পরিসেবা থেকে দুটি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছিল।
এরপর শৌভিক মিশ্র গেয়ে শোনান সুমনের ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের ‘চেনা দুঃখ চেনা সুখ’। গিটার বাজান ধ্রুব বসু রায় ও শৌভিক। ‘সুমনের গান সুমনের ভাষ্য’ নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছিল ১৯৯৪ সালে ধ্রুবপদ প্রকাশনী থেকে। পরে আবার সপ্তর্ষি থেকে বের হয়। সুধীর চক্রবর্তী এর সংকলক। এতে সুমনের ২২টি গান তিনি কোন ভাবনা থেকে রচনা করেছেন সেই নেপথ্য কাহিনির বর্ণনা আছে। সেখান থেকে এই গান সৃষ্টির গল্প পাঠ করা হয়।
‘সাড়া দাও’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন রাকা, জয়তী, মৌমিষ্টি, রাহুল, সৌম্যব্রত, পার্থ, মৃণাল, ধ্রুব ও শৌভিক। গিটারে ধ্রুব, শৌভিক ও শেইকার বাজান রাকা।
কবীর সুমনকে নিয়ে বাংলা সাহিত্য জগতের বেশ কয়েকজন অগ্রগণ্য, নন্দিত কবি কবিতা লিখেছেন। এর মধ্যে কবি অরুণ মিত্র, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, কেতকী কুশারি ডাইসন, জয় গোস্বামী, পিনাকী ঠাকুরসহ সমসাময়িক বলিষ্ঠ কবিরাও আছেন। এক রবীন্দ্রনাথ ছাড়া সঙ্গীতের আর কোনো মানুষকে নিয়ে সাহিত্য জগত এতটা জারিত হয়েছে কিনা, এতটা সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানা নেই। আবার অন্যদিকে সুমনও লিখেছেন জয় গোস্বামীকে নিয়ে ‘কবি যে কোন চুলোয় যাবে’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘ঘুমোও বাউণ্ডুলে’, অরুণ মিত্রকে নিয়ে ‘উঠে দাঁড়ালেন অরুণ মিত্র’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘ওই রাস্তার বাঁকেই হল দেখা’, সমর সেনকে নিয়ে ‘না বুঝে ছিলাম আমি যার প্রতিবেশী’, সুকুমার রায়কে নিয়ে ‘আমাকে ভাবায় সুকুমার রায়’। এছাড়াও নজরুল রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিভিন্ন গানে নানাভাবে এসেছেন। সুমনের সঙ্গীত ও সাহিত্য জগতের এই মিথস্ক্রিয়া সুমনের সঙ্গীতভাবনা অধ্যয়নে এক মাত্রা যোগ করেছে নিঃসন্দেহে। এ পর্যায়ে কবি অরুণ মিত্রের কবীর সুমনকে নিয়ে লেখা কবিতার স্বকণ্ঠে পাঠ পরিবেশিত হয়। এটি শ্রী সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের কবীর সুমনের ওপর নির্মিত ‘ফ্রি টু সিং’ (নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত) তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া, যেটির দ্বিতীয় পর্বের কাজ এখন চলছে। ‘সুমনের গান সুমনের ভাষ্য’ বই থেকে কবি অরুণ মিত্রকে নিয়ে লেখা গান ‘উঠে দাঁড়ালেন অরুণ মিত্র’র নেপথ্য কাহিনি পাঠ করা হয় কবিতা পাঠ শেষে।
এরপর ‘গানওলা’ (১৯৯৪) অ্যালবামের ৩টি গান পরপর পরিবেশিত হয়। ‘গান তুমি হও’ বাংলাদেশের সায়ান, ‘নদীর গল্প’ সৌম্যব্রত বোস ও ‘সারারাত জ্বলেছে নিবিড়’ সুযোগ বন্দোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। ‘সুমনের গান সুমনের ভাষ্য’ বই থেকে ‘সারারাত জ্বলেছে নিবিড়’ সৃষ্টির গল্প পাঠ করা হয়।
‘সন্ধ্যা’ রাগে, এই সময়ের উল্লেখযোগ্য সেতারশিল্পী পণ্ডিত হরশঙ্কর ভট্টাচার্যের সেতার বাদন পরিবেশিত হয় এ পর্যায়ে। উল্লেখ্য, কবীর সুমন বেশ কয়েক বছর ধরে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন বাংলা খেয়াল সাধনায়। তাঁর নিজের সৃষ্ট রাগের মধ্যে আছে আহির বৈরাগী, অবন-কথা, রবিশঙ্কর, জয় বাংলা, মধ্যমরঞ্জনী, দিন শেষ, আজাদ, প্রতিমা, বিবেকধ্বনি, সালামসহ আরো বেশ কয়েকটি রাগ। তেমনি সদ্য প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবীর সুমন সৃষ্ট রাগের নাম ‘সন্ধ্যা’।
সুমন বলেন, তিনি সঙ্গীতের কারিগর। নিজের গান ছাড়াও সমসাময়িক, অগ্রজ, অনুজদের জন্য বহু গান তৈরি করেছেন তিনি। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে সুমন করেছেন ১২টি গান, যেগুলো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রেকর্ড হয়েছে। তারই একটি ‘তুমি তোমার গল্প বলো’ গেয়ে শোনান জয়তী নস্কর। গিটার বাজান ধ্রুব।
এরপর কবীর সুমনকে নিয়ে লেখা এই সময়ের কবি স্বাগতা দাশগুপ্তর ‘তুমি আছ তাই’ ও শূন্য দশকের কবি সৈকত চক্রবর্তীর ‘জন্মান্তর’ কবিদের পাঠে পরিবেশিত হয়।
এ পর্যায়ে কবি বিমল দেব ‘তোমাকে চাই’ এর স্মৃতিচারণ ও সমসাময়িক পর্যালোচনা করেন। ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের ৩টি গান পরপর পরিবেশিত হয় এরপর। ‘চেনা দুঃখ চেনা সুখ’ সুজন মুখোপাধ্যায় নীল, ‘যদি ভাবো কিনছ আমায়’ তিলক গুপ্ত ও ‘মন খারাপ করা বিকেল মানেই’ অনিন্দ্য ভট্টাচার্যর কণ্ঠে (গিটারে সম্বিত চ্যাটার্জ্জী)। ‘সুমনের গান সুমনের ভাষ্য’ বই থেকে ‘মন খারাপ করা’ গানটি সৃষ্টির গল্প পাঠ করা হয়। পাঠের পর বিশ্বরূপ ব্যানার্জ্জী প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে সুমনের গান ‘মুখে মুখে ফেরা মানুষের গান’ হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপট নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। এরপর পরিবেশিত হয় ‘নিষিদ্ধ ইস্তেহার’ (১৯৯৮) অ্যালবামে কবীর সুমনের গান ‘কাঙালপনার’ সঙ্গে হিয়ার নাচ এবং মুন্তাজার মনসুর ও রোজালিন সামিরার কণ্ঠে (টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র) একই অ্যালবামের গান ‘জুয়া’।
আমরা জানি, দীর্ঘদিন ধরে এবং এখনও কবীর সুমনের একক অনুষ্ঠান বাংলা গান মঞ্চায়নের এক অন্যতম মাইলস্টোন। কলকাতা, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা মঞ্চে তাঁর অনন্যসাধারণ পরিবেশনা আমরা দেখেছি। এমন একক অনুষ্ঠান, মঞ্চের ব্যবহার আমরা আগে কখনো দেখিনি। আর মঞ্চে তিন দশক ধরে সুমনের একক মানেই পিনাকী গুহর আলো। কবি সৈকত চক্রবর্তী লিখেছেন – পিনাকী গুহর আলোর বৃত্তে মিয়াঁ/ তোমার আঙুলে আমার মোহনবেলা/ ভিতর বাহিরে অন্তরে মরমিয়া/ আখরে আমার শ্রবণ হারিয়ে ফেলাৃ। পিনাকী গুহ সুমনের অনুষ্ঠানে আলো নিয়ে নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এ পর্যায়ে।
‘জাতিস্মর’ অ্যালবামের ‘চার লাইনের গান’ হারমোনিকায় বাজিয়ে শোনান অভিমন্যু। এরপর মৃণাল কান্তি দত্ত গেয়ে শোনান ‘৬৩তে’ (২০১২) অ্যালবামের ‘এই প্রেমহীন সময়ে’। গিটারে ধ্রব বসু রায় ও শৌভিক মিশ্র। উল্লেখ্য, এই গানটিতে চমৎকার সঞ্চারি আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সুমন তাঁর ধারাবাহিক ‘বেজে ওঠা স্মৃতি’র ২৫তম পর্বে অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় এর সুরে বাণী ঘোষাল এর গাওয়া, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দারুণ সম্মিলনে তৈরি ‘তুমি সেই তুমি’ গানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তাঁর জীবনকে সামআপ করতে বললে তিনি এই গানের কথা বলবেন। বিশেষ করে গানটির সঞ্চারির কথা বলবেন। অথচ নয়ের দশক থেকে বাংলা গানে সঞ্চারি প্রায় উঠেই গেছে। এটাই ছিল বাংলা গানের বিশেষত্ব যা ইউরোপিয় সঙ্গীতে নেই। এই নিয়ে অনেক আক্ষেপ আছে সুমনের। তিনি অনেক গানেই সঞ্চারি করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন।
এরপর রাকা ও জয়তীর কণ্ঠে ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’ (১৯৯৬) অ্যালবামের গান ‘একলা হতে চাইছে আকাশ’ পরিবেশিত হয়। গিটারে শৌভিক ও ধ্রুব।
কবীর সুমনের ‘সহসা এলে কি এ ভাঙা জীবনে’ ‘অন্য কথা অন্য গান’ অ্যালবামে (১৯৮৬) প্রকাশিত হয় (নাগরিক কোরাস) ও পরবর্তীতে ‘কনকর্ড ট্রায়ো’ গানটি গায় তাঁদের অ্যালবামে, তারও অনেক পরে ‘জাতিস্মর’ (২০১৪) চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহৃত হয়। গান রূপঙ্কর বাগচী। এই অনুষ্ঠানে সুমেলি চক্রবর্তী গেয়ে শোনান সেই গান। এ পর্যায়ে নাগরিক প্রসঙ্গ, এই গান নিয়ে স্মৃতি, সুমনের গানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে তুলে ধরেন ধ্রুব বসু রায়। সুমন একসময় লিখেছেন, আমি কৌশিক আর ধ্রæব’র গিটারে লিখবো জীবনকাব্য, আমি অন্য কথা অন্য গানে জীবনের কথা ভাববো।
কবীর সুমনের নবীনদের নিয়ে বেশ কিছু কাজ আছে। তার মধ্যে প্রথম অ্যালবাম ‘ছোট বড় মিলে’ বের হয় ১৯৯৫ সালে। এরপর নবীনদের জন্য, নবীনদের নিয়ে আরেকটি অ্যালবাম ‘একসাথে বাঁচবোই’ বের হয়। ৬০ বছর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মঞ্চে সুমন নিজে যেটিকে বলেছেন তখন পর্যন্ত তাঁর জীবনের সেরা কাজ। ‘ছোট বড় মিলে’ অ্যালবামের কনিষ্ঠতম শিল্পীর গাওয়া ‘বেড়াল হলো বাঘের মাসি, বাঘের মেসো হুলো’ গেয়ে শোনান এ অনুষ্ঠানের কনিষ্ঠতম শিল্পী আজান। আজানের গানের সঙ্গে গিটার বাজিয়েছেন সম্বিত, শেইকার বাজিয়েছেন অনিন্দ্য।
কলকাতার দক্ষিণে পাটুলিতে ‘রোকেয়া শিক্ষাকেন্দ্র’। সেখানে সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা গান, নাচ, ছবি আঁকা, অভিনয় শেখেন প্রতি সপ্তাহে। শ্রেণী এক থেকে বারো – লেখাপড়াও শেখানো হয়। সবই নিখরচায়। যাঁরা শেখান, কবীর সুমনের ছাত্রী রাকা তাঁদের একজন। এই পর্যায়ে রাকার তত্ত্বাবধানে সুমনের ‘আমার ভাষার একুশে ফেব্রুয়ারির ডাক’ গানটি রোকেয়া শিক্ষাকেন্দ্রের নবীন বন্ধুরা গেয়ে শোনান। উল্লেখ্য, কবীর সুমন একুশ নিয়ে, বাংলা ভাষা নিয়ে যত গান লিখেছেন, গেয়েছেন এমন আর কেউ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। একুশ ও বাংলা ভাষা নিয়ে বাহার, বসন্ত ও হিন্দোল রাগের ওপর তিনি কয়েকটি খেয়াল বন্দিশও লিখেছেন।
বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের মহীরুহ সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণ ও ‘তোমাকে চাই’ এর আত্মপ্রকাশ একই দিনে। সুমনের ‘ফেলুদার গান’ গেয়ে শোনান নিউইয়র্কের নবীন বন্ধু কমলিনী ও মাহিকা।
কবীর সুমনকে নিয়ে লেখা কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তর ‘সু-মন আমার’ ও পিনাকী ঠাকুরের ‘বাংলার ডাকাত’ কবিতা দুটো স্বয়ং সুমনের পাঠে পরিবেশিত হয় এরপর। পিনাকী ঠাকুর নয়ের দশকের অগ্রগণ্য কবি। “আমাদের মতো করে কথা বল উনিশশো নব্বই/ সুমনের মত রাগে দাঁড়িয়ে গিটার হাতে গাও” – নয়ের দশকের কবি শিবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কবিতার এই লাইনদুটোই বুঝিয়ে দেয় সেইসময়ের কবিদের ওপর সুমনের সৃষ্টির প্রভাব।
শেষ বয়সে এসে সুমনের কথায় আগ্রহ পেয়ে লিরিক লেখার কাজে হাত দেবেন বলেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আর সুমন দায়িত্ব নেবেন সেইসব লেখায় সুর দেওয়ার। কিন্তু তার কিছুদিনের মধ্যেই চলে গেলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। সেই গান আর সৃষ্টি হলো না। শক্তির মৃত্যুর পর সুমন লিখলেন ‘ঘুমোও বাউণ্ডুলে, ঘুমোও এবার।’
কবীর সুমনের পাঠের পর পরিবেশিত হয় বিশ্বরূপ ব্যানার্জ্জীর কণ্ঠে ‘সন্ধান চাই’ (গিটারে ধ্রুব রায় ও শৌভিক, শেইকারে রাকা) ও ধ্রুব বসু রায়ের কণ্ঠে ‘ভুলে যাবার সময় এসে গেছে’। অপেক্ষাকৃতভাবে স্বল্প-শ্রুত এই গান দুটো নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বিশ্বরূপ ব্যানার্জ্জী ও ধ্রæব বসু রায়।
নয়ের দশকের অগ্রগণ্য কবি, সুমনের বন্ধু রাহুল পুরকায়স্থর ‘তোমাকে চাই’ এর ৩০ বছর উপলক্ষ্যে লেখা নতুন কবিতা ‘জলে লেখা কবিতা’ ও ‘তোমাকে চাই’ এর ৩০ বছর উপলক্ষ্যে কৃষ্ণা বসুর লেখা আরেকটি নতুন কবিতা কবিদের পাঠে পরিবেশিত হয় এরপর।
কবীর সুমন বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্রের জন্য গান তৈরি করেছেন এবং চলচ্চিত্রের গানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আরও নানান সম্মাননা পেয়েছেন। এ পর্যায়ে পরপর তিনটি গান ‘এই তো ভালো আবার শুরু নতুন করে’ (সূর্যকন্যা চলচ্চিত্র ১৯৯৮) দীপান্বিতা পোদ্দার, ‘আমি তো ছিলাম বেশ’ (সেদিন চৈত্রমাস ১৯৯৭) রাহুল দত্ত-সমাদৃতা দত্ত ও ‘স্বর্ণালী মেঘ আমার আবেগ বইছে একা’ (মহাসংগ্রাম ১৯৯৩) বাসবদত্তা চৌধুরীর কণ্ঠে পরিবেশিত হয়।
এ পর্যায়ে ইমন রাগে বাংলা খেয়ালের দৃষ্টান্ত পরিবেশন করেন ঈশান মজুমদার। ঈশানের গাওয়া ‘সেই যে ছোঁয়া সন্ধ্যের বাঁকে’ খেয়াল বন্দিশ কবীর সুমনের লেখা। এই বন্দিশটি খুব ছোটো। হিন্দী ও মারাঠিতে এরকম ছোটো বন্দিশ প্রচুর আছে কিন্তু বাংলা খেয়ালে নেই। কবীর সুমন বেশ কয়েকটি এরকম ছোটো বন্দিশ লিখেছেন। এটিকে খেয়ালের হাইকু বলা যায় এবং এটি বাংলা খেয়ালে এক নতুন সংযোজন।
এরপর ‘এ তুমি কেমন তুমি’ গেয়ে শোনান পার্থ দাশগুপ্ত। সুমনের এ বেসিক গানটি পরবর্তীতে ‘জাতিস্মর’ (২০১৪) চলচ্চিত্রে রূপঙ্কর বাগচী গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন। সুমনের আরও একটি বেসিক গান ‘খোদার কসম জান আমি ভালোবেসেছি তোমায়’ পরিচালকের অনুরোধে ভিন্ন লিরিকে জাতিস্মর চলচ্চিত্রে কবীর সুমন নিজে গান। সেই গানটি গিটারে বাজিয়ে শোনান সম্বিত চ্যাটার্জ্জী। উল্লেখ্য, ‘জাতিস্মর’ চলচ্চিত্রে কবিয়ালদের গানগুলো তেমন আলোচনায় আসেনি। অথচ অন্ত্যজ-কৌম মানুষের কবিগান ছিল ঐ চলচ্চিত্রে সুমনের এক উল্লেখযোগ্য কাজ। এই চলচ্চিত্রের গানে কাওয়ালি আছে, আছে ভোজপুরির ধারা, কীর্তন শ্যামা সঙ্গীতের আদল অর্থাৎ সুমনের বেশ নীরিক্ষার কাজ ছিল ‘জাতিস্মর’ চলচ্চিত্রে।
ল্যাংস্টন হিউজ এর একটি কবিতার ভাবানুবাদে তৈরি, ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’ (১৯৯৬) অ্যালবামের গান ‘আমার মতো কালো’র সঙ্গে পাপিয়া দাশগুপ্ত নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর একে একে ‘ইচ্ছে হল’ (১৯৯৩) অ্যালবামের ‘আগুন দেখেছি আমি’ ঋভু বিষ্ণু, ‘অনেক দিন পর’ অ্যালবামের ‘অনেক দিন পর’ রওনক হাসান, রূপক সাহা (বাংলাদেশ) ও ‘জাতিস্মর’ (১৯৯৭) অ্যালবামের গান ‘শহরে বৃষ্টি’ অনির্বাণ দাশগুপ্তর (টরন্টো, কানাডা) কণ্ঠে পরিবেশিত হয়।
এরপর ছিল এই সময়ের কবি অর্ণব চট্টোপাধ্যায়ের কবীর সুমনকে নিয়ে লেখা কবিতা ‘কবীর সুমন’ ও নয়ের দশকের কবি প্রসূন ভৌমিক এর কবিতা ‘চর্যাপদ’ এর স্বকণ্ঠে পাঠ।
সাহিত্য জগৎ ছাড়াও আরো নানা শিল্প মাধ্যমে ঠাঁই নিয়েছে কবীর সুমনের সৃষ্টি। এ পর্যায়ে কবীর সুমনকে নিয়ে এ সময়ের নামী কার্টুনিস্ট সুযোগ বন্দোপাধ্যায়ের আঁকা দুটো কার্টুন দেখানো হয়। এরপরই অভিজিৎ আচার্যের কবীর সুমনকে নিয়ে স্বরচিত গান ও বিভুব্রত আচার্যির কণ্ঠে ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’ অ্যালবামের ‘আমার প্রেমের গান’ পরিবেশিত হয়।
কবীর সুমন বেশ কয়েক বছর ধরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বাংলা খেয়ালের প্রচার প্রসারে। ছাত্রছাত্রীদের শেখাচ্ছেন ও খেয়াল বিষয়ক কর্মশালা করাচ্ছেন। লিখেছেন পাঁচশরও বেশি বাংলা ভাষায় খেয়াল বন্দিশ। বাংলা খেয়াল নিয়ে তাঁর একাধিক বইও প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গীতে ভাব থেকে রূপে উত্তরণ বিষয়ে সুমন বলেন, বাংলা খেয়ালে রূপ দেন তিনি বাংলা ভাষায়। কাজেই কোনো লাইনকে চিরস্মরণীয় করে রাখা না বরং একটা চেহারা ধরতে চান তিনি। এই চেহারাটা বাংলা ভাষা দিচ্ছে সুমনকে। ভাব না, তিনি রূপ ধরছেন, ধরতে চাইছেন। সুমনের খেয়ালের জার্নি বুঝতে এই বিষয়টি বোঝা দরকার।
ললিত রাগে কবীর সুমনের আধুনিক বাংলা গান ‘জাগে জাগে রাত ভোর হবে বলে’ একটা পূর্ণাঙ্গ খেয়ালও। সুমন বলেন, খেয়াল গান বা বন্দিশ যদি স্ট্যান্ড এলৌন গান হিসেবে না-দাঁড়াতে পারে, সেটা খেয়াল হিসেবেও দাঁড়াবে না। সুমনের বাংলা খেয়াল তৈরির অন্যতম জায়গাই হচ্ছে – বাংলা খেয়ালকে নিজের জোরে একটা স্বাধীন গান হয়ে উঠতে হবে।
গত শতকে একদিকে চলছিল নকশালবাড়ি আন্দোলন, নদীতে ভেসে যাচ্ছে ছোরা-বেঁধা লাশ, ওদিকে হচ্ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ, কোলকাতায় শরণার্থীর প্লাবন – এই সময়টা কবীর সুমনের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। যার প্রতিফলন আমরা সুমনের বাংলা আধুনিক গানে পেয়েছি। বাংলা আধুনিক গানকে তিনি মানুষের মুখের ভাষায় রচনা করে, সুরে নতুন আঙ্গিক এনে সমসাময়িক করে তুলেছিলেন। বাংলা খেয়াল নিয়েও তিনি একই কাজ করে চলেছেন। বাংলা খেয়ালের বন্দিশ নিয়ে সুমন তাঁর ‘বাংলা খেয়াল’ বইতে লিখেছেন – ‘রাগ ও গায়কীর মেজাজ অনুসারে বাংলা খেয়ালের বন্দিশকে তার ধ্বনি ও অর্থের দিক থেকে আমাদের নিত্য জীবনের, আমাদের মুখের ভাষার, দৈনন্দিন ভাষা ও রূপকল্পে যথাসম্ভব কাছে নিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য।’
এ পর্যায়ে আশাবরী রাগে, তিনতাল মধ্যগতিতে বাংলা খেয়ালের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন কবীর সুমনের ছাত্র সামিম রাজা। সামিমের গাওয়া খেয়াল বন্দিশ ‘সকাল সুরে বাজে যদি তুমি গাও’ কবীর সুমনেরই লেখা। এরপর কবীর সুমন সৃষ্ট রাগ মধ্যমরঞ্জনীর একতাল মধ্যগতিতে সুমনের লেখা খেয়াল বন্দিশ ‘নেমে এসে আলোয় মিশে যায় ছায়া, এনে দেয় বেলাশেষে সাঁঝের মায়া’ বাঁশিতে বাজিয়ে শোনান তাঁরই ছাত্র সুবিমল পাল। উল্লেখ্য, মধ্যমরঞ্জনী রাগ বা স্কেলটি শিবরঞ্জনী রাগের অবরোহনে শুদ্ধ মধ্যম স্বরটি যোগ করে তৈরি করা। এর সঙ্গে কর্ণাটকী সঙ্গীতের সাদৃশ্য বেশি। বাঁশি বাদনের পর নটভৈরব রাগে তিনতাল মধ্যগতিতে কবীর সুমনের লেখা খেয়াল বন্দিশ ‘যা কিছু বলা হলো নীরব হলো সব, স্তব্ধ হয়ে যায় কথার কলরব’ এর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন কবীর সুমনের ছাত্রী খেয়া ঘোষ ও তিথি ঘোষ। উড়িয়া ভাষা উপমহাদেশের একটি অন্যতম ভাষা। উড়িয়া শিল্পী নম্রতা মোহান্তি সুমনের ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের ‘কখনো সময় আসে’ গানটি উড়িয়া ভাষায় গেয়ে শোনান। উল্লেখ্য, কোলকাতার কলাকুঞ্জে ‘তোমাকে চাই’ এর ২৫ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানে উড়িয়া ভাষায় সুমনের গানের অ্যালবামের আনুষ্ঠানিক রিলিজ হয়।
এ পর্যায়ে কবীর সুমনকে নিয়ে লেখা নয়ের দশকের কবি সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের ‘তোমাকে চাই’ ও বিদূষী লেখক ও কবি কেতকী কুশারী ডাইসন এর একটি কবিতা পাঠ করেন যথাক্রমে স্বাগতা দাশগুপ্ত ও ফারহানা আজিম শিউলী। এরপর ছিল জয় গোস্বামীর সুমনকে নিয়ে লেখা ‘আকাশ আমাদের’ কবিতার কবির কণ্ঠে পাঠ? ২০০৭ সালে উত্তম মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জয় গোস্বামীর কবিতা এবং কবীর সুমনের গানের অনুষ্ঠান ‘কবি ও কবিয়াল’, পরবর্তীতে একই বছরে কজমিক হারমনি সেই অনুষ্ঠানটির দুটি খণ্ড একত্রে ভিসিডি হিসাবে প্রকাশ করে। ২০০৭ সালে কজমিক হারমনি থেকে প্রকাশিত সেই ভিসিডি থেকে সংগৃহীত এই পাঠটি। এই কবিতার পর ‘তোমাকে চাই’ এর ২৫ বছর পূর্তিতে প্রতুল মুখোপাধ্যায় এর কবীর সুমনকে নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করেন পিনাকী গুহ।
কবিতার পর পরিবেশিত হয় ‘ঘুমিয়ে পড়ো গান’ গার্গী হাজরা, ‘এসো আলো হারানোর দিনে’ (গিটারে ধ্রুব বসু রায়) মৌমিষ্টি চক্রবর্তী ও ‘তুমি শুনো না আমার কথা’ (গিটারে ধ্রুব বসু রায়) রাকা ভট্টাচার্যের কণ্ঠে।
এ পর্যায়ে কবীর সুমনের গান অনুসরণে সৌমী বসু মল্লিকের আঁকা দুটো ছবি দেখানো হয়। প্রথম ছবিটি স¤প্রতি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিবাদে লেখা কবীর সুমনের গান ‘কেউ তোলে বন্দুক, কেউ দেয় ফুল/ যাকে ফুল দেয় তার, ট্রিগারে আঙুল’… অনুসরণে। দ্বিতীয়টি দিল্লীর কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে কবীর সুমনের লেখা গান ‘ওঁরা ফলান ওঁরা জানেন/ কত ধানে কত চাল হয়, ওঁরা জানেন ওঁরা জানেন’ …অনুসরণে।
ছবির পর বিশ্বরূপ ব্যানার্জ্জী কবীর সুমনের আরেকটি স্বল্পশ্রæত গান ‘তুমি তেরো পার হয়ে চোদ্দ হচ্ছ টের পাইনি’ গেয়ে শোনান। এটি বাংলা ১৩ থেকে ১৪ শতকে পদার্পণ উপলক্ষ্যে লেখা গান। গানটি লোকসুর নির্ভর দারুণ একটি কম্পোজিশন। কবীর সুমনের গানে লোকায়ত সুরের প্রভাব বেশ দেখা যায়। হেমন্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যে বাঙালি বাংলার লোকগান ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারবে, সেই বাংলা আধুনিক গান গাইতে পারবে। কথাটির যথার্থতা স্পষ্টভাবেই মূর্ত হয় কবীর সুমনের আধুনিক বাংলা গানে।
এরপর সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘তোমাকে চাই।’ এতে অংশ নেন মৃণাল, সৌম্য, রাহুল, শৌভিক, ধ্রুব, জয়তী, মৌমিষ্টি ও রাকা। গিটার বাজান ধ্রুব ও শৌভিক।
অনুষ্ঠানের সবশেষ পরিবেশনা ছিল কেদার রাগে ঝাঁপতালে কবীর সুমনের বাংলা খেয়াল। এক ‘তোমাকে চাই’ থেকে আরেক ‘তোমাকে চাই’। ‘এলেই যদি এখনি তবে, বলো না যাই বলো না যাই/ সন্ধ্যে এলো তোমায় নিয়ে, আলোছায়ায় তোমাকে চাই।’ নিজের লেখা এই খেয়াল বন্দিশটি কবীর সুমনের কণ্ঠে পরিবেশিত হয়।
সুমন ‘তোমাকে চাই’ এর ২৫ বছর পূর্তির আয়োজনে বলেছিলেন, “বন্ধুরা বড়ো করে দেখা যাচ্ছে ‘তোমাকে চাই।’ বড়ো করে দেখা যাচ্ছে আমার ছবিটা। দেখা যাচ্ছে না অনুপম ঘটক, সলিল চৌধুরী, সুধীন দাশগুপ্ত, শচীন দেব বর্মণ, আচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষদের।” বারবার অপরের ক্ষমতার নিরিখে সুমন মেপে নিয়েছেন তাঁর অক্ষমতা এবং তাতেই তাঁর অপার আনন্দ।
নিরন্তর সৃষ্টিশীল মানুষ কবীর সুমনের বর্ণিল কর্মযজ্ঞ ক্যানভাসে বন্দি করা বেশ কঠিন। তারপরও সবার আন্তরিক প্রয়াসে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার এই লাইভের পুরোটা সময় দর্শক-শ্রোতা মন দিয়ে শোনেন, দেখেন ও মন্তব্য করে সক্রিয় থাকেন। আধুনিক বাংলা গানের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ‘তোমাকে চাই’ এর ৩০ বছর পূর্তির এ আয়োজনের সঞ্চালনায় ছিলেন ফারহানা আজিম শিউলী।